বিজ্ঞাপন

শুভ জন্মদিন, স্যার ডন!

August 27, 2020 | 9:56 am

সাহাবার সাগর, নিউজরুম এডিটর

১৯২০/২১ মৌসুমের লোকাল বাউরাল দলের খেলা চলছিল। কে জানতো ওই ম্যাচের স্কোরার থেকে খেলার মাঠে সুযোগ পাবেন ডোনাল্ড জর্জ ব্র্যাডম্যান। ওই দলের অধিনায়ক ছিলেন কিশোর ছেলেটির চাচা। অক্টোবর ১৯২০’র এক ম্যাচে দলের খেলোয়াড় সংখ্যা ১১ জনই হচ্ছিল না তখন বাধ্য হয়েও নিজের ভাতিজাকে দলে সুযোগ দেন জর্জ হোয়াটম্যান। সে ম্যাচের দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৩৭ এবং ২৯ রান করে নট আউট ছিলেন ব্র্যাডম্যান।

বিজ্ঞাপন

এরপর ওই মৌসুমেই সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অ্যাশেজের ৫ম এবং শেষ টেস্ট দেখতে ডোনাল্ড জর্জ ব্র্যাডম্যানকে সঙ্গে নিয়ে যান তার বাবা। সেদিন বাবাকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ‘এই স্টেডিয়ামে না খেলা পর্যন্ত আমি কখনো শান্তি পাবো না।‘ এরপরেই ১৯২২ সালে স্কুল ছেড়ে ব্র্যাডম্যান যোগ দেন এক রিয়েল স্টেট কর্মীর সঙ্গে। তিনিই ব্র্যাডম্যানকে খেলাধুলার প্রতি ঠেলে দেন।

ভেবে দেখুন তো ব্র্যাডম্যান যদি সত্যিই ওই সময় ক্রিকেট না খেলে টেনিসেই নিজের ক্যারিয়ার গড়তেন তবে ক্রিকেট বিশ্ব কেমন হত? হ্যাঁ, সত্যিই তিনি ক্রিকেট ছেড়ে দুই বছর টেনিস খেলেছিলেন এবং পেশা হিসেবে নিতে চেয়েছিলেন। তবে ১৯২৫/২৬ মৌসুমে আবারও ক্রিকেটে ফিরে আসেন এই কিংবদন্তি।

শুরুটা তখনই, স্বপ্নটা অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট খেলা। তবে এই পথ যে মসৃণ হবে না তা ভালো করেই জানতে ব্র্যাডম্যান। ‘বয় ফ্রম বাউরাল’ থেকে স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান হয়ে ওঠার রূপকথা। মাত্র ১৯ বছর বয়সে নিউ সাউথ ওয়েলস টিমের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। অভিষেক ম্যাচের প্রথম ইনিংসে শতক হাঁকান ব্র্যাডম্যান। এই ম্যাচ থেকেই তার ‘ফুট ওয়ার্ক’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ওই মৌসুমের শেষ ম্যাচে শেফিল্ড শিল্ড চ্যাম্পিয়ন ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে সিডকি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে নিজের প্রথম শতক করেন ব্র্যাডম্যান।

বিজ্ঞাপন

দুর্দান্ত মৌসুম পার করার পরেও সুযোগ মেলেনি অস্ট্রেলিয়া দলে। তখন তিনি ভাবলেন তাকে সিডনিতে যেতে হবে জাতীয় দলে সুযোগের জন্য। ১৯২৮/২৯ মৌসুমে সিডনিতে চলে যান। আর ওই মৌসুমের প্রথম ম্যাচেই শেফিল্ড শিল্ডে কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ইনিংসেই শতক হাঁকিয়ে নজরে আসেন ব্র্যাডম্যান। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়েই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রিসবেন টেস্ট সুযোগ মেলে তার।

ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচেই ১৮ এবং ১ ছিল ব্র্যাডম্যানের দুই ইনিংসের স্কোর। আর প্রথম টেস্টে হতাশ করার পর দ্বিতীয় টেস্টের ১২তম খেলোয়াড় হিসেবে মাঠের বাইরে বসতে হয় তাকে। দ্বিতীয় টেস্টে সুযোগ না মিললেও পরের টেস্টে আবারও দলে সুযোগ মেলে তার। এবার দেখিয়ে দেন তিনি কি ধাতু দিয়ে গড়া। ইংল্যান্ডের দাপুটে পেসারদের সামনে বুক চিতিয়ে প্রথম ইনিংসে ৭৯ রানে আউট হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ১১২ রান। আর তাতেই বনে যান ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। শেষ পর্যন্ত যদিও সেই টেস্ট হেরে যায় অস্ট্রেলিয়া। এরপর ৪র্থ টেস্টেও দুর্দান্ত পারফর্ম করেও দলকে জেতাতে পারেননি তিনি। ৫ম টেস্টে এসে প্রথম ইনিংসে করেন ১২৩ আর দ্বিতীয় ইনিংসে অধিনায়ক যখন ম্যাচ জেতানো রান সংগ্রহ করলেন তখনও তিনি ছিলেন উইকেটে।

বিজ্ঞাপন

এই তো নক্ষত্রের আলো ছড়ানো শুরু এরপর কেবল উজ্জ্বলই হয়েছেন কখনো এ আলোয় ছায়া পড়েনি। হেসেছে তার ব্যাট আর গড়েছে নতুন রেকর্ড। একে একে সবাইকে টপকে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃত হয়েছেন। এত কারো মুখের কথা নয়, কথা বলেছ তার পরিসংখ্যান। ব্র্যাডম্যানের সম্পর্কে বলতে গিয়ে অজি অধিনায়ক বিল উডফুল বলেন, ‘ব্র্যাডম্যান দলে থাকা মানে এক সঙ্গে তিনজন ব্যাটসম্যানকে পাওয়া।‘

সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান সম্পর্কে নতুন করে বলার কি কিছু আছে? ৫২ টেস্টে ৯৯ দশমিক ৯৪ গড়, ২৯ সেঞ্চুরি, ১২টি ডাবল সেঞ্চুরি, ৫ টেস্টের এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি ৯৭৪ রান- এই ভদ্রলোক সম্পর্কে আর কিছুই তেমন অজানা নেই।


‘নার্ভাস নাইনটিজ’ যেখানে বিশ্বের সব বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানও নিজের নার্ভের কাছে হার মেনেছেন। কিন্তু এই ব্যাপারটি যে কি তা হয়ত জানতেনই না স্যার ডন। টেস্ট ক্রিকেটে ৪২ বার পঞ্চাশ পেরিয়ে ২৯ বারই সেঞ্চুরি। নব্বইয়ের ঘরে আউট হননি কখনো। নব্বইয়ের ঘরে ‘উইকেট’ দিয়েছেন একবারই—সেটি মৃত্যুকে। ৯২ বছরে শেষ হয়ে গেছে ব্র্যাডম্যানের জীবনের ‘ইনিংস’।

১৯৩০ সালে প্রথমবার ইংল্যান্ড সফর করেন তিনি। বিস্ময়ের শুরু সেখান থেকেই, পাঁচ ম্যাচের সেই সিরিজে রান করেছিলেন অবিশ্বাস্য ৯৭৪। সেবার বিস্ময়কর এই ব্যাটসম্যানকে রুখতে বডিলাইন বোলিংয়ের জন্ম দেয় ইংলিশরা।

বিজ্ঞাপন

ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে যখন ছিলেন ঠিক সে সময়ই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। আর এর কারণেই তার ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ার থেকে ঝরে যায় ৮টি বছর। পরে ৩৮ বছর বয়সে ফেরেন আবারও। বিশ্বযুদ্ধের পর ১৫ টেস্ট খেলে করেন ৮টি শতক। ১৯৪৮ সালে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলার আগে তার গড় ছিল ১০১ দশমিক ৩৯। শেষ ইনিংসে মাত্র ৪ রান করলে তার গড় থাকত ঠিক ১০০। কিন্তু আফসোস সেই ৪টি রান থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন তিনি। আর তার গড় থমকে গিয়েছিল ৯৯ দশমিক ৯৪তে। যা এখন পর্যন্তও কেউ স্পর্শ করতে পারেনি।

ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করা ২৫ ব্যাটসম্যানের একজন ব্র্যাডম্যান (১১৭টি সেঞ্চুরি)। তাঁর আগে সাতজন ব্যাটসম্যান এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন, তাঁর চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে আরও ১৩ জনের। সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিয়ানদের মধ্যে একমাত্র ডন ব্র্যাডম্যানই কখনো ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে খেলেননি। সবচেয়ে কম ইনিংসে (২৯৫) সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করার রেকর্ডটি এখনও তাঁর দখলেই রয়ে গেছে। নিকটতম ডেনিস কম্পটনের লেগেছিল ৫৫২ ইনিংস।

টেস্টে দুটি ট্রিপল সেঞ্চুরি করার কীর্তিটি অনেক বছর শুধুই ব্র্যাডম্যানের ছিল। ব্রায়ান লারা, বীরেন্দর শেবাগ ও ক্রিস গেইল এই কীর্তির পুনরাবৃত্তি করেছেন। তবে ১৯৩২ সালে অ্যাডিলেডে ব্র্যাডম্যানকে ২৯৯ রানে দাঁড় করিয়ে রেখে অস্ট্রেলিয়ার শেষ ব্যাটসম্যান আউট হয়ে না গেলে ব্র্যাডম্যান এই কীর্তিতে এককভাবে শীর্ষস্থান ধরেই থাকতেন। টেস্টে ২৯৯ নটআউট স্কোরটা শুধুই তাঁর।

তবে তাদের কেউই টেস্টের এক দিনে ছুঁয়ে পারেননি ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ড। হ্যাঁ টেস্টের এক দিনেই ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন স্যার ডন। সময়টা ১৯৩০, নিজের ক্যারিয়ারের ৭ম টেস্ট খেলতে মাঠে নামেন ব্র্যাডম্যান। ২১ বছর বয়সী ব্র্যাডম্যানের সেদিন দিনের ১১তম বলেই মাঠে নামতে হয়, লিডস টেস্টের প্রথম দিকেই অজি ওপেনার আর্চি জ্যাকসনকে ১ রানে ফিরে গেলে উইকেটে আসেন স্যার ডন।

এরপর যা হলো তার সারমর্ম ইতিহাস গড়লেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান। ২১ বছর বয়সী এক তরুণ ইংলিশদের বোলিং এট্যাককে পাত্তায় দিলেন না। প্রথম উইকেট পড়ার পর উইকেটে আসা ব্র্যাডম্যানের সঙ্গী বিল উডফুল যখন ফিরলেন তখন অজিদের সোরবোর্ডে রান ১৯৪, এই দুইয়ে মিলে ১৯২ রানের জুটি গড়লেন যার মধ্যে ব্র্যাডম্যানই করেছিলেন ১৪২। আর সেদিন লাঞ্চ বিরতির আগেই ছুঁয়ে ফেলেছিলেন প্রায় দেড়শ।

এরপর লাঞ্চ থেকে ফিরে আরও দুর্ধর্ষ তিনি। চা-বিরতিতে যাওয়ার আগে ২২০ রান করে ছিলেন অপরাজিত। এরপর বিরতি থেকে ফেরার পর ২৭৩ রানে তাকে একবার আউট করার সুযোগ পেয়েছিল ইংলিশরা। তবে জর্জ গ্যারির বলে জর্জ ডাকওর্থ ডনের ক্যাচ ফেলে দিলে হাতছাড়া হয় সে সুযোগ। এরপর সুযোগ কাজে লাগিয়ে রেগি ফস্টারের একদিনে সর্বোচ্চ ২৮৭ রানের রেকর্ড ভেঙে অপরাজিত ৩০৯ রানের ইনিংস খেলেন।

এদিন লিডস টেস্টের প্রথম দিনে ডন ৪২০ বল খেলে ৩০৯ রানে অপরাজিত ছিলেন, এরপরের দিন মোট ৪৪৯ বল খেলে ৩৩৪ রান করেন, এই ইনিংসে ছিল ৪৬টি চারের মার। ডন প্রথম সেশনে করেছিলেন ১৫৩ বলে ১০৫ রান, দ্বিতীয় সেশনে ১৫২ বলে ১১৫ রান এবং তৃতীয় সেশনে করেছিলেন ১১৫ বলে ৮৯ রান।

ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে ৩৩৮ ইনিংসে ব্র্যাডম্যানের ব্যাটিং গড় ৯৫ দশমিক ১৪। যে ২২১টি ইনিংসে সেঞ্চুরি নেই, তাতে গড় ৫৮.২০। এটি গ্যারি সোবার্স, জিওফ বয়কট, ব্যারি রিচার্ডস, ভিভ রিচার্ডস, ওয়ালি হ্যামন্ড, সিবি ফ্রাই ও ও রণজিৎসিংজির সেঞ্চুরিসহ পুরো ক্যারিয়ারের ব্যাটিং গড়ের চেয়েও বেশি!

টেস্টে সর্বোচ্চ ১২টি ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডটি এখনও ব্র্যাডম্যানের। ব্যাটিং গড়ের মতো এটিও কোনো দিন ভাঙবে কি না, এ নিয়ে সংশয় আছে। এই রেকর্ডের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ানো ব্রায়ান লারা যে ৯টি ডাবল সেঞ্চুরি নিয়েই ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন। তবে তাঁর সবচেয়ে কাছে পৌঁছুতে পেরেছিলেন শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা। তিনি ডনের পর সর্বোচ্চ ১১টি ডাবল সেঞ্চুরি করতে পেরেছিলেন।

ক্যারিয়ারের ৮০টি টেস্ট ইনিংসের ১০টিতে অপরাজিত ছিলেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান। যে ৭০ বার আউট হয়েছেন, তার মধ্যে ২৯ বার ক্যাচ, ২৩ বার বোল্ড ও ১০ বার কট বিহাইন্ড। এলবিডব্লু হয়েছেন ৬ বার। বাকি দু’বার রানআউট ও হিট উইকেট। তবে কখনো স্টাম্পিংয়ের শিকার হননি। একমাত্র রানআউটটি তৃতীয় টেস্টে নিজের ষষ্ঠ ইনিংসে। সেটি ঘরের মাঠ অ্যাডিলেড ওভালে। আর যে একবার হিট উইকেট হয়েছেন, বোলার ছিল, ভারতের লালা অমরনাথ!

যে সময়টাতে তিনি ক্রিকেটকে নিজের করে রেখেছিলেন সে সময়টাতে আজকের সময়ের মতো এত দল ক্রিকেটই খেলত না। সব মিলিয়ে মোট চারটি দলের বিপক্ষেই খেলার সুযোগ মিলেছে এই কিংবদন্তির। চারটি দলের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৭ ম্যাচ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ৫টি করে টেস্ট ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও উইন্ডিজের বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার ব্যাটিং গড় ছিল ৮৯ দশমিক ৭৯, ভারতের বিপক্ষে ১৭৮ দশমিক ৭৫, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০১ দশমিক ৫ ও উইন্ডিজের বিপক্ষে ৭৪ দশমিক ৫।

ব্যাট হাতে ক্যারিয়ারে তিন নম্বর থেকে সাত নম্বর পজিশন পর্যন্ত ব্যাটিং করেছেন। সর্বাধিক তিন নম্বরে ব্যাট করেছেন ৫৬ ইনিংস, চার নাম্বারে ১০ ইনিংস, পাঁচ ও সাত নাম্বারে ৩ ইনিংস, ছয় নাম্বারে ৮ ইনিংস। তিন নাম্বারে ব্যাট করতে নেমে তার ব্যাটিং গড় ছিল ১০৩ দশমিক ৬৩। ১০০ এর কম ছিল চার ও ছয় নাম্বার ব্যাটিং পজিশনে।
সর্বকালের সেরা এই ব্যাটসম্যানের ঝুলিতে দুটি উইকেটও আছে। লেগ স্পিন বিষে নিল করেছিলেন তাঁর সময়ে ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যান ওয়ালি হ্যামন্ড ও ইভান ব্যারোকে।

এছাড়াও ক্যারিয়ার জুড়ে এমন রেকর্ড গড়ে রেখে গেছেন এই কিংবদন্তি যা ক্রিকেটের এত বছর পেরুনোর পরেও অস্পর্শী রয়ে গেছে।

নির্দিষ্ট কোনো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এখনও তার দখলেই রয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৭টি টেস্ট খেলে করেছেন ৫ হাজার ২৮ রান। ব্র্যাডম্যানের পর নির্দিষ্ট এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রান ইংলিশ কিংবদন্তি জ্যাক হবসের। তার নামের পাশে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আছে ৩ হাজার ৬৩৬ রান। এছাড়া আরেক কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকার অস্ট্রলিয়ার বিপক্ষে করেছেন ৩ হাজার ৬৩০ রান।

নির্দিষ্ট এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড তো আছেই সেই সঙ্গে আছে সর্বোচ্চ শতক হাঁকানোর রেকর্ডও। ইংলিশদের বিপক্ষে ক্যারিয়ারে মোট ১৯টি শতক হাঁকিয়েছেন এই কিংবদন্তি। এই তালিকায় ২য় স্থানে ভারতীয় কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার (ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৩টি শতক), আর ৩য় স্থানে আছেন আরেক অজি তারকা স্টিভ স্মিথ (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১টি শতক)।

অভিষেকের পর থেকে যতদিন অতিবাহিত হয়েছে তার ক্রিকেটীয় রুপকথা ততই সৌরভ ছড়িয়েছে। অভিষেকের পর এক হাজার রান পূর্ণ করতে তিনি খেলেন ১৩ ইনিংস যা তাকে দ্রুততম এক হাজার রান সংগ্রাহকের তালিকায় ৩য় স্থানে বসিয়েছে। তার আগে ১২ ইনিংসে এক হাজার রান পূর্ণ করেন ইংলিশ কিংবদন্তি হার্বাট সাটক্লিফ আর দ্বিতীয় স্থানে আছেন সদ্য প্রয়াত উইন্ডিজ গ্রেট স্যর এভারটন উইকস।

এরপর টেস্টে দ্রুততম দুই হাজার (২২ ইনিংস), তিন হাজার (৩৩ ইনিংস), চার হাজার (৪৮ ইনিংস), পাঁচ হাজার (৫৬ ইনিংস) এবং ছয় হাজার (৬৮ ইনিংস) রান করেন তিনিই। তার অবসরের এত বছর পরেও এই রেকর্ড এখনও অক্ষত রয়েছে। তবে তার অবসরের পর টেস্টে দ্রুততম ৭ হাজার রানের মালিক বনেছেন অনেক ক্রিকেটার। টেস্টে দ্রুততম সাত হাজার রান সংগ্রাহক স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানেরই উত্তরসূরি স্টিভেন স্মিথ (১২৬ ইনিংস)।

ব্র্যাডম্যানের সময়ে ওয়ানডে নামে কিছু ছিল না। টি-টোয়েন্টি তো দূরের কথা। তাই ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি খেললে তিনি কেমন করতেন তা এখন আর জানার কোনো উপায় নেই। তবে অনুমান তো করাই যায়, তাই না?

১৯৩১ সালের ২রা নভেম্বর। নিউ সাউথ ওয়েলসের টিমমেট ওয়েন্ডেল বিলের সাথে ব্ল্যাকহিথ নামে এক জায়গায় যান ব্র্যাডম্যান, উদ্দেশ্য নতুন বানানো পিচে একটা প্রদর্শনী ম্যাচ খেলা। তখন ওভার হতো ৮ বলে। সেই ম্যাচে মাত্র ১৮ মিনিট এবং ৩ ওভারে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি! মোট রান করেছিলেন ২৫৬! এই রান করতে তিনি বাউন্ডারি মারেন ২৯টি, ওভার বাউন্ডারি মারেন ১৪টি।

টানা ২৭ বছর কারাবন্দী ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। কারাভোগের ২২তম বছরে, ১৯৮৬ সালে তার সাথে দেখা করতে যান তৎকালীন অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম ফ্রেজার। নানা কথা হয় তাদের মধ্যে, ফ্রেজারকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন ম্যান্ডেলা। তার মধ্যে একটা ছিল, “মি. ফ্রেজার, ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান কি এখনও জীবিত আছেন?”

এই ঘটনার ৭ বছর পরে আবার দেখা হয় তাদের। তখন আর বন্দী অবস্থায় ছিলেন না ম্যান্ডেলা। ফ্রেজার তাকে ব্র্যাডম্যানের সই করা একটা ব্যাট উপহার দেন।

সেখানে লেখা ছিল, “নেলসন ম্যান্ডেলার দুর্দান্ত অসমাপ্ত ইনিংসের স্বীকৃতিস্বরূপ।“- ডন ব্র্যাডম্যান।

ব্র্যাডম্যান ১৯০৮ সালের ২৭ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন এবং তার অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০১ সালে। ৯২ বছর বয়সী ব্র্যাডম্যান নিউমনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সর্বকালের সেরা এই ব্যাটসম্যান। বেঁচে থাকলে আজ তিনি তাঁর ১১২তম জন্মদিন পালন করতেন। তবে জীবনের ইনিংসে ৯২’তেই আউট হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। তবে রেখে গেছেন তাঁর কতশত কীর্তি। কেবল ক্রিকেটকেই তিনি সবকিছু দিয়ে যাননি। গোটা ক্রীড়া জগতকেই তিনি দিয়েছেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে। তিনি কেবল একজন ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন ক্রীড়া ব্যাক্তিত্ব।

তবে ব্র্যাডম্যান মানেই কেবল কিছু সংখ্যা নয়। শুধু ক্রিকেটই নয়, তিনি ক্রীড়া জগতের এক নক্ষত্র। অস্ট্রেলিয়ায় খেলার সীমানা ছাড়িয়ে একটা জাতির পরিচয় তিনি। বলা হতো, অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বেশি চেনা মুখ, সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। ব্র্যাডম্যান এমন উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে গেছেন এবং নিজে এমন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেছেন যে তাকে বলা হতো ‘দা ডন’।

সারাবাংলা/এসএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন