বিজ্ঞাপন

‘নাই’ হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে উপনির্বাচনে বিএনপি

October 11, 2020 | 8:03 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র সাতটি আসনে জয় লাভের পর সরকারের বিরুদ্ধে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ এনে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। প্রথমত শপথ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা, দ্বিতীয়ত এই নির্বাচন কমিশনের পরিচালনা এবং শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করা।

বিজ্ঞাপন

চার মাসের মাথায় প্রথম সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় বিএনপি। কারণ, জোট শরিক গণফোরামের নির্বাচিত দুই সংসদ সদস্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শপথ গ্রহণ করে সংসদে যোগ দেন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিএনপির সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান শপথ গ্রহণ করেন। বাকি চার জনের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া সবাই শপথ নেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে যান। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সবাইকে শপথ গ্রহণের অনুমতি দেন দলের হাইকমান্ড।

কিন্তু নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকে বিএনপি। ফলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচন বর্জন করে তারা। ২০১৯ সালের মার্চ থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী উপজেলা নির্বাচনও বয়কট করে দলটি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, তাদের সবাইকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

তবে শেষ পর্যন্ত সেই কে এম নুরুল হুদা কমিশন এবং শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই স্থানীয় এবং জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে কোনো শর্ত ছাড়াই অংশ নিচ্ছে বিএনপি। বগুড়া-৬ উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ও পেয়েছে তারা। আসনটি শূন্য হয়েছিল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নেওয়ায়।

বিজ্ঞাপন

অবশ্য ঢাকা-১০, রংপুর-৩, পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচন এবং ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরেছে বিএনপি এবং যথারীতি ভোট কারচুপির অভিযোগ এনেছে। আসন্ন ঢাকা-৫ ও ১৮, সিরাজগঞ্জ-১ এবং নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচনে লড়ছে বিএনপি এবং প্রচারণার প্রথম দিন থেকেই অভিযোগ তুলছে—‘ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী সমর্থক ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বাধা দিচ্ছে তাদের।’

সংশ্লিষ্টরা বলছে, ক্রমাগত বাধা, হামলা-মামলা, ভোট কারচুপি, ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকার অভিযোগ এনেও স্রেফ রাজনীতি থেকে ‘নাই’ হয়ে যাওয়া রোধ করতেই স্থানীয় ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। দলটির কাছে জয়-পরাজয় মুখ্য বিষয় নয়। বরং রাজনীতির মাঠে অস্তিত্ব রক্ষা এবং টিকে থাকার জন্যই নির্বাচনে ফিরেছে দলটি।

সূত্রমতে, স্থানীয় নির্বাচনের অংশ নেওয়ার কারণে ২০১৯ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দল থেকে বহিষ্কার হওয়া তৃণমূল বিএনপির হাজার হাজার নেতা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্য বাড়াতে থাকে। পারিবারিক ও আত্মীয়তার সম্পর্কের সূত্রধরে ওয়ার্ড, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে ঘনিষ্ট হতে শুরু করেন। এই ঘনিষ্টতার ফল স্বরূপ বেশ কয়েকটি উপজেলায় বিএনপির বহিস্কৃত নেতারা জয় পান। আর ওই সব এলাকায় বিএনপি ‘নাই’ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

বিজ্ঞাপন

ওই সময় সুনামগঞ্জ দক্ষিণ উপজেলায় জয় পান বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ফারুক আহমেদ। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘‘সম্প্রতিকালে বিএনপি যতগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার মধ্যে ‘সব নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত’ সব চেয়ে সময়পোযোগী। নির্বাচন থেকে সরে গেলে বিএনপি নাই হয়ে যেত।’’

জানা গেছে, স্থানীয় নির্বাচনের মতো উপনির্বাচনগুলোতে বিএনপির অংশগ্রহণও দলের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। নির্বাচনের অংশ না নিলে নির্বাচনি এলাকার বিএনপির কর্মী সমর্থকদের হাত গুটিয়ে ঘরে বসে থাকা ছাড়া কোনো কাজ থাকে না। কেউ কেউ আত্মীয়তা ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্র ধরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর হয়ে কাজ করেন।

সে কারণেই নিশ্চিত পরাজয় জেনেও ঢাকা-১০, রংপুর-৩, পাবনা-৪ উপনির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। এসব আসনে জিততে না পারলেও ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়ে দলের অস্তিত্ব জানান দেন। এই মুহূর্তে নওগাঁ-৬ ও ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে মাঠে রয়েছে বিএনপি। প্রতিদিনই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় সরব রয়েছে নির্বাচনি এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা এবং যথারীতি প্রতিদিনই ক্ষমতাসীন দল ও স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণায় বাধার অভিযোগ তুলছেন তারা।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য বিএনপি নির্বাচনের অংশ নিচ্ছে। গণতন্ত্রের যে ন্যূনতম সুযোগ, সেটা আমরা কাজে লাগাতে চাই।’

বিজ্ঞাপন

‘হ্যাঁ, এটা ঠিক- নির্বাচনে অংশগ্রহণ যেকোনো দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আমাদের দলের প্রার্থীরা শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে মাঠে রয়েছেন। এতে করে মাঠ-পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে’— বলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

সারাবাংলা/এজেড/এমআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন