বিজ্ঞাপন

পূজার উদ্বোধন করিনি: সাকিব

November 16, 2020 | 9:51 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

কলকাতায় গিয়ে শ্যামা পূজা উদ্বোধন করেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর চাউর হলেও সে তথ্য অস্বীকার করছেন নন্দিত অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তবে ঘটনাচক্রে ওই সময় পূজা মণ্ডপে দুয়েক মিনিট অবস্থান করতে হয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। পূজা উদ্বোধন না করলেও সার্বিক ঘটনায় যদি সবাই মনে করে থাকেন যে সাকিবের সেখানে যাওয়া উচিত হয়নি, সে কারণে সবাইকে বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

গত বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতা যান সাকিব আল হাসান। ওই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যদে সংবাদ প্রকাশিত হয়, কলকাতায় গিয়ে শ্যামা পূজা উদ্বোধন করেছেন তিনি। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। একজন মুসলিম হয়ে পূজা উদ্বোধন করায় কেউ কেউ তার নামের আগে শ্রী শ্রী বসিয়ে ধর্মান্তরিত করছেন। আবার কেউ কেউ তাকে বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন। মহসিন নামের এক তরুণ তো তাকে প্রকাশ্যেই হত্যার হুমকি দিয়েছেন!

আরও পড়ুন- ফেসবুক লাইভে সাকিবকে কুপিয়ে হত্যার হুমকি

সোমবার (১৬ নভেম্বর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা এক ভিডিওবার্তায় সাকিব আল হাসান বলছেন, তিনি শ্যামা পূজার উদ্বোধন করেননি। এবং তিনি যে অনুষ্ঠানে ছিলেন, সেখানে ধর্ম বা বর্ণ নিয়ে কোনো কথাও হয়নি।

বিজ্ঞাপন

সাকিবের বক্তব্য ১২ নভেম্বর তিনি কলকাতা গিয়েছিলেন নিজের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। তার মঞ্চের পাশেই ছিল পূজার মণ্ডপ। অনুষ্ঠান শেষে সাকিব যখন বেরিয়ে আসছিলেন, বিকল্প রাস্তা না তাকে ওই পূজা মণ্ডপের সামনে দিয়েই ফিরতে হয়েছিল। সে সময় পরেশ নামে সাকিবের এক পরিচিত ব্যক্তি সাকিবকে মণ্ডপে আমন্ত্রণ জানান। তার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েই সাকিব সেখানে যান এবং একটি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন। ওই ছবিটি স্থানীয় সাংবাদিকরা ধারণ করলে তা পরে ভাইরাল হয়।

ভিডিওবার্তায় সাকিব বলেন, ‘পূজার বিষয় নিয়ে নিউজ কিংবা মিডিয়ায় খবর এসেছে যে আমি পূজা উদ্বোধন করতে গেছি। কিন্তু যেটার জন্য আমি আসলে যাইনি, করিওনি। এটার প্রমাণ আপনারা অবশ্যই পাবেন। কারণ, ওইখানে অনেক সাংবাদিক ভাই-বোনেরা উপস্থিত ছিলেন, যাদের হয়তো আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। এছাড়াও যদি আপনারা আমন্ত্রণের কার্ডও দেখেন, সেখানে লেখা আছে কে ওইটার (পূজা) উদ্বোধন করেছে। আর উদ্বোধন হয়েছে আসলে আমি যাওয়ার আগেই। যে জায়গায় বা মঞ্চে অনুষ্ঠানটি হয়েছে, সেটি কোনোভাবেই পূজা মণ্ডপ ছিল না। (মণ্ডপের) পাশে আরেকটি মঞ্চ ছিল, সেখানে (অনুষ্ঠানটি) করা হয়েছিল। এবং পুরো অনুষ্ঠানটি আসলে সেখানে হয়। প্রায় ৪০-৪৫ মিনিটব্যাপী সেই অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম। আর সেখানে কোনো ধর্ম, বর্ণ কোনো কিছু নিয়ে কোনো কথা হয়নি।’

আরও পড়ুন- বেনাপোলের ওই ভক্তের প্রতি সাকিবের দুঃখপ্রকাশ

বিজ্ঞাপন

‘অনুষ্ঠান শেষে যখন গাড়িতে উঠতে হবে, পাশেই পূজার আয়োজন থাকায় ওই সময় অনেকগুলো রাস্তা বন্ধ ছিল। স্বাভাবিকভাবেই পূজা মণ্ডপটি পার করে আমায় যেতে হতো, যেটি আমি গিয়েছি। যাওয়ার সময়, পরেশ দা, যিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তার অনুরোধে আমি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করি। যেহেতু কলকাতায় আমি অনেকদিন খেলেছি, কলকাতার মানুষরা আমাকে অনেক পছন্দ করে। আমি অনুষ্ঠানে থাকব বলে সেখানকার সাংবাদিকরা অনেক উৎসুকও ছিলেন। সবার অনুরোধে তখন পরেশ দা’র সঙ্গে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের সময় একটা ছবি তোলা হয়। ছবি তোলা শেষে যাওয়ার সময়, সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার নিরাপত্তায় যারা ছিল, তাদের কিছুটা বাকবিতণ্ডাও হয়, একটু হাতাহাতিও হয়। সেই ঘটনার জন্য আমরা ওইদিক দিয়ে আর যেতে পারি নাই,’— ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে বলছিলেন সাকিব।

তিনি আরও বলেন, ‘পরে আবার ব্যাক করে অন্য রাস্তা দিয়ে গিয়েছি। তো পুরো ঘটনা ছিল এরকম— যার মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আমরা আমাদের জন্য যে স্টেজ করা হয়েছিল, সেখানে ছিলাম। এবং আমি আবারও বলছি, সেখানে কোনো ধর্ম, বর্ণ নিয়ে কথা হয়নি এবং এটি তেমন কোনো প্রোগ্রামও ছিল না।’

বিষয়টি নিয়ে দেশবাসীর কাছে দুঃখপ্রকাশ ও ক্ষমাপ্রার্থনা করে ভিডিওতে সাকিব আরও বলেন, ‘দুই মিনিটের যে সময়টা আমি পূজা মণ্ডপে ছিলাম, সেটি নিয়ে সবাই বলেছে এবং ধারণা করছে যে আমি পূজার উদ্বোধন করছি। সেটি আমি কখনোই করিনি এবং একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে আমি করবও না। তারপরও হয়তো সেখানে যাওয়াটাই আমার ঠিক হয়নি। সেটা যদি আপনারা মনে করে থাকেন, তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। আমি মনে করি, আপনারা এটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং ভবিষ্যতে যেন এমন কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেটিও চেষ্টা করব।’

একই ভিডিওবার্তায় কলকাতায় যাওয়ার পথে বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট এলাকায় ভক্তের মোবাইল ফোন ছুঁড়ে ভেঙে ফেলার বিষয়েও ব্যাখ্যা দেন সাকিব। তিনি বলেন, ফোন নিয়ে ছুঁড়ে ফেলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই ব্যক্তি তার কাছে এলে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের খাতিরে তিনি তাকে হাত দিয়ে বাধা দিয়েছিলেন কেবল। সে কারণে ওই ব্যক্তির হাত থেকে ফোন পড়ে ভেঙে গিয়ে থাকতে পারে। এ জন্য অবশ্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এমআরএফ/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন