বিজ্ঞাপন

রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে আমাকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে: মামুন

November 2, 2021 | 4:59 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ধর্ষণের মামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। রাজধানীর লালবাগ থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থীর দায়ের করা মামলায় তাকে আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। তবে অভিযুক্ত হাসান আল মামুনের দাবি, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে পরিকল্পনা করে তাকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) দুপুরে হাসান আল মামুনের জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

কারাগারে যাওয়ার আগে আদাল চত্বরে হাসান আল মামুন সারাবাংলাকে বলেন, এই মামলায় আমি নির্দোষ। আমাকে এই মামলায় পরিকল্পিতভাবে জড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে আমাকে হয়রানি করার জন্য এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। পিবিআই বা কোনো সংস্থা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলে এই মামলার প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে। আমি ন্যায় বিচার প্রার্থী।

হাসান আল মামুন আরও বলেন, ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী লালবাগ থানায় আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। একই বাদী পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানায় নাজমুল হাসান সোহাগের বিরুদ্ধেও ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। এই নাজমুল হাসান সোহাগ আমাদের সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ছিল। তার সঙ্গে মামলার বাদীর সম্পর্ক ছিল। পরে আমাদের সংগঠন থেকে আমাকে আহ্বায়ক পদ থেকে সরানোর জন্যই এই মামলাটি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

এদিন দুপুর ২টায় হাসান আল মামুন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জোবায়ের আহমেদের মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. আলী আকবার এ জামিনের বিরোধিতা করেন।

বিজ্ঞাপন

জামিন শুনানিতে অ্যাডভোকেট জুবায়েরসহ হাসান আল মামুনের আইনজীবীরা বলেন, ঘটনার ৮ মাস পর ভুক্তভোগী মামলাটি দায়ের করেন। ধর্ষণের কোনো আলামত উদ্ধার হয়নি। আলামত হিসেবে কেবল একটি পেইনড্রাইভ পাওয়া গেছে। ডিএনএ-ও পরীক্ষা করা হয়নি। আসামি বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা। তাকে সংগঠন থেকে বের করে দিতে ও তার ক্যারিয়ার নষ্ট করতেই এই মামলা করা হয়েছে।

পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. আলী আকবর বলেন, এই মামলায় মোট ছয় জন আসামি ছিলেন। পাঁচ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আসামির সঙ্গে ভুক্তভোগীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আসামিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। সে কারণে মামলার খবর পেয়েই আসামি দীর্ঘ দিন পলাতক ছিলেন।

দুই পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক হাসান আল মামুনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আদালত থেকে বের হয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী জুবায়ের আহমেদ বলেন, বিজ্ঞ আদালতে আমরা আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করছি। আদালত আজ (মঙ্গলবার) জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। তবে আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি। আশা করি খুবই দ্রুত তার জামিন হবে।

বিজ্ঞাপন

এই আইনজীবী আরও বলেন, এটি একটি মিথ্যা মামলা। ধর্ষণের মামলা হলেও কোনো আলামত নেই। ঘটনার ৯ মাস পর মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। একই অভিযোগে আরও একজনের (নাজমুল হাসান সোহাগ) বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে হাসান আল মামুনের কাছে বাদী অভিযোগ করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদ সম্মেলনে করে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন। হয়তো তিনি মামুনের কাছে ন্যায় বিচার পাননি বলে ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করেছেন। এখন যদি পিবিআই বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত হয়, তাহলে তিনি অবশ্যই নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। মামলা থেকে অব্যহতি পাবেন।

আদালতে প্রবেশের আগে হাসান আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, নাজমুল হাসান সোহাগ এবং বাদী এই মামলার মাস্টারমাইন্ড। তবে আদালতের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আমি নিরপেক্ষ একটি তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। আমাদের সংগঠনের সব নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর কাছে আমার আবেদন থাকবে, এই মামলার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে আমার পাশে থাকবেন।

এর আগে, এদিন সকালে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে হাসান আল মামুন বলেন, এই মামলার সিকোয়েন্স বুঝতে পারলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়— বাদী ও নাজমুল হাসান সোহাগসহ কয়েকজন এই মামলার মাস্টারমাইন্ড। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। আমি ওই ঘটনার বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি এবং সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক বরাবর দিয়েছি। পুলিশ এসব ধামাচাপা দিয়ে একটি মিথ্যা চার্জশিট দিয়েছে আমার বিরুদ্ধে। আমি মিথ্যা ষড়যন্ত্রের শিকার। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।

২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী লালবাগ থানায় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে প্রধান আসামি করে ছয় জনের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন। এজাহারে ধর্ষণে সহযোগিতাকারী হিসেবে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নাম উল্লেখ করা হয়। পরে এই মামলায় বাকি পাঁচ জনকে অব্যাহতি দিয়ে হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।

একই অভিযোগে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর কোতয়ালি থানায় ছয় জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলাটি দায়ের করেন ওই শিক্ষার্থী। মামলায় ওই তরুণীকে অপহরণের পর পারস্পরিক সহযোগিতায় ধর্ষণ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেয় প্রতিপন্ন করার অভিযোগ আনা হয়। মামলাটিতে প্রধান আসামি ছিলেন নাজমুল ইসলাম সোহাগ।

সারাবাংলা/এআই/এনএস/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন