বিজ্ঞাপন

‘খালেদার চিকিৎসকরা একটা জায়গা পর্যন্ত গিয়ে আর এগোতে পারছেন না’

November 27, 2021 | 3:24 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ক্ষেত্রে তার চিকিৎসকরা ‘একটা জায়গা’ পর্যন্ত গিয়ে আর এগোতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কথা জানান। ডা. শহিদ মিলন দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভায় আয়োজন করে ৯০’র ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘কেন আমরা দেশনেত্রীর বাইরে চিকিৎসার কথা বলছি, কী কারণে? তা আমাদের সবারই জানা উচিত। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে অসুখ, তা প্রধানত পরিপাকতন্ত্রের। কোন জায়গায় তার রক্তপাত হচ্ছে- এটাকে বের করার জন্য আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ ডাক্তাররা গত কয়েকদিন ধরে চিকিৎসার যে পদ্ধতি আছে, সেই পদ্ধতি অনুযায়ী বিভিন্ন রকম কাজ করেছেন। কিন্তু একটা জায়গায় এসে তারা আর এগোতে পারছেন না। কারণ, সেই ধরনের কোনো টেকনোলজি দেশে নেই, যে টেকনোলজি দিয়ে সেখানে পৌঁছাতে পারেন। সেই কারণে চিকিৎসকরা বারবার বলছেন, দেশনেত্রীকে একটি এডভান্স সেন্টারে নেওয়া দরকার। যেখানে এই ডিভাইসগুলো আছে, টেকনোলজি আছে, যন্ত্রপাতিগুলো আছে। যেখানে গেলে তার রোগের জায়গাটা তারা ধরতে পারবেন।’’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী অনেক অসুস্থ। এখন তার জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে পরিপাকতন্ত্রের রক্তক্ষরণ। এখনই প্রয়োজন এই রক্তক্ষরণ বন্ধ করা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা অনেকে অনেক কথা বলছেন। তারা বিদ্রুপ করতেও দ্বিধা করছেন না, এরা এতো অমানুষ।’

ডা. মিলন সম্পর্কে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ডা. মিলন একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বছরের পর বছর, যুগ যুগ ধরে আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন। একটা সত্যিকারের পরিবর্তন, একটা স্ফুলিঙ্গের সূচনা হয়েছিল তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। এই স্ফুলিঙ্গটাই সমগ্র বাংলাদেশকে জাগিয়ে তুলেছিল। ডা. মিলনের মৃত্যুর মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন হয়েছিল। এই বিষয়গুলো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘নব্বইর প্রেক্ষাপট আর আজকের প্রেক্ষাপট এক নয়। স্বৈরাচারের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের পার্থক্য বিশাল। সেদিন একটি অংশের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে, আজকে লড়তে হচ্ছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এখন গুলি করে পুলিশ, গুলি করছে রাষ্ট্র। এগুলো করা হচ্ছে বাংলাদেশকে সুপরিকল্পিতভাবে বিরাজনীতিকরণ করার জন্য, রাজনীতিকে সরিয়ে ফেলার জন্য। বাংলাদেশকে সুপরিকল্পিকভাবে একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য এটা শুরু হয়েছে ওয়ান ইলেভেন থেকে। সেই চক্রান্তের কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুরপ্রহর গুনছেন।’

বিজ্ঞাপন

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে ক্ষমা চাইতে হবে, কার কাছে? ক্ষমা চাওয়ার লোকটা কে, যার কাছে চাইবে? এই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের আন্দোলনে খালেদা জিয়ার অবদান যতটুকু আছে, বর্তমান অবস্থায় যারা আমরা জীবীত আছি, আমরা কেউ তার সমকক্ষ নই। তিনি ক্ষমা চাইবেন কার কাছে? যারা আছে তারা সব চেয়ে বড় অপরাধী। যারা বৈধ নয়, যারা আইনসিদ্ধ নয়, তারা আইনের কথা কেন বলবে ‘

রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হলে আইনমন্ত্রী কি জানেন না, পেন্ডিং কেস শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া যায় না। আর রাষ্ট্রপতির কাছে কে ক্ষমা চাইবে, না চাইবে তার অ্যাডভাইস কেউ কাউকে দিতে পারে না। তারা ভালো করে জানেনবেগম খালেদা জিয়া আপসহীন, তিনি লড়তে জানেন। তিনি মসকাতে পারেন, ভাঙতে পারেন না। উনি কখনো আপস করেন নাই, উনি কখনো মাথা নত করেন নাই। মাথা নত করার জন্য খালেদা জিয়ার জন্ম হয় নাই’বলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মহাসচিব সাহস করে যে স্লো পয়জনিংয়ের কথা বলেছেন, সেটা এ দেশের মানুষ বিশ্বাস করেছে। একটা সুস্থ মানুষ কারাগারে গেলেন, আর অসুস্থ অবস্থায় হুইল চেয়ারে বসে আসলেন। এই ঘটনায় মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মেছে যে, তিনি স্লো পয়জনিংয়ের শিকার হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

মানবিক কারণে তাকে (খালেদা জিয়া) বাসায় থাকতে দেওয়া হয়েছে’প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ‘তার মানে জেলখানা আর খালেদা জিয়ার বাসভবন একই স্ট্যাটাস। তাহলে খালেদা জিয়ার বাসাটা সাবজেল ঘোষণা করেন। পরিষ্কার করেন আপনাদের অবস্থান।’

তিনি বলেন, ‘এমন একটা আজব দেশে বাস করি, যে দেশটা রক্ত দিয়ে কেনা। যে দেশটা বহু মানুষের ত্যাগ, জীবন দানের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। সেই দেশে চিকিৎসার জন্য আন্দোলন করতে হয়। আমার মনে হয় পৃথিবীতে আর কোনো দেশে এমন দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে না।’

৯০‘র ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ফজলুল হক মিলনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক ছাত্রনেতা শামসুজ্জামান দুদু, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, জহির উদ্দীন আহমেদ স্বপন, খন্দকার লুৎফর রহমান, নাজিম উদ্দীন আলম, শহীদুল ইসলাম বাবুল, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর আগে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এ বছর এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত টানা ৫৪ দিন হাসপাতালে ছিলেন তিনি। খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছর ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’ তাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। তখন থেকে তিনি গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজা’য় রয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে বেশ কয়েকবার আবেদন করেছে তার পরিবার। কিন্তু সরকার সেই আবেদন আমলে নেয়নি। যদিও এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য হলো, সাময়িক মুক্তির শর্ত অনুযায়ী তাকে দেশে রেখেই চিকিৎসা দিতে হবে। বিদেশে যেতে হলে কারাগারে ফিরে আবেদন করতে হবে।

সারাবাংলা/এজেড/এএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন