বিজ্ঞাপন

নিমঘুটুতে সন্ত্রাস চলছে: বাদশা

May 2, 2022 | 5:43 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: সেচের পানির জন্য আত্মহত্যা করা দুই কৃষকের বাড়ি গিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা।

বিজ্ঞাপন

সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নিমঘুটুতে এখনো সন্ত্রাস চলছে। আদিবাসীরা কেমন আছে, তাদের নিরাপত্তা কতটুকু— এসব দেখার জন্য এসেছিলাম। আমরা এসপিকে জানিয়ে এসেছি। থানাকেও জানানো হয়েছে। কিন্তু গ্রাম দেখছি আদিবাসীশূন্য। তার মানে কী? তার অর্থ— এখানে সন্ত্রাস চলছে।

সোমবার (২ মে) সকালে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু গ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাঁওতাল সম্প্রদায়ের দুই কৃষকের বাড়ি যান বাদশা। তবে সেখানে কাউকে পাননি তিনি।

বাদশা বলেন, দুই কৃষকের মৃত্যু— এখানেই শেষ না। যারা বেঁচে আছে তাদের ওপরে চলছে সন্ত্রাসী প্রভুত্ব। এই প্রভু কারা? যাদের প্রজা হয়ে গ্রামে আদিবাসীদের বসবাস করতে হচ্ছে, তারা কারা? তাদের চিহ্নিত করতে হবে। এটা মনে করার কোনো কারণ নেই— সাহায্য সংস্থার নামেই হোক আর প্রশাসনিক ব্যবস্থার নামেই হোক, আদিবাসীদের ওপরে ত্রাস চালানো যাবে না।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

বোরো ধানের জমিতে পানি না পেয়ে গত ২৩ মার্চ নিমঘুটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি বিষপান করেন। সেদিনই অভিনাথ বাড়িতে মারা যান। এ নিয়ে পুলিশ সাদা কাগজে অভিনাথের স্ত্রী রোজিনা হেমব্রমের সই নিয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করে। বিষয়টি জানতে পেরে ২৫ মার্চ রোজিনা থানায় যান বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করতে।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ সেদিন মামলা না নিয়ে তাকে দীর্ঘ সময় বসিয়ে রাখে। খবর পেয়ে থানায় যান রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। এরপর মামলা নেওয়া হয়। ওই দিনই আরেক কৃষক রবি মারান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সেদিন ফজলে হোসেন বাদশা দুই কৃষকের বাড়িতেই গিয়েছিলেন। আত্মহত্যার বিচারের জন্য তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। সোমবার তিনি নিমঘুটুতে গিয়ে দুই পরিবারকে পাননি। পরে প্রতিবেশী ও ঘটনাস্থলে আসা পুলিশের একটি দলের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

নিমঘুটু গ্রামেই তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেউ নিজের ইচ্ছায় নিজের বাড়ি থেকে অন্য কোথাও চলে যায় না। যেদিন দুই কৃষক মারা যান, সেদিন মামলা করতে আমরা থানায় গিয়েছিলাম। এই গ্রামের চেয়ারম্যান তো যাননি। সেই মামলা আমরা থানায় দিয়ে এসেছিলাম। সেটির চার্জশিট হয়েছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হয়েছে। মানবাধিকার কমিশনে আমরা মিটিং করেছি। কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেওয়া হবে। তার একদিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যারা আদিবাসীদের দাস বানিয়ে রাখছে তাদের আমরা প্রতিহত করতে পারি, তবে আইন  হাতে তুলে নেব না।  যারা মনে করছে নিমঘুটু গ্রামই একটি রাষ্ট্র, তারা ভুল করছে। তারা ধূলিস্যাৎ হয়ে যাবে। পুলিশকে জানিয়েছি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-মানবাধিকার কমিশনকে জানাব— আদিবাসীরা ভালো নেই। তারা সুখে নেই। আদিবাসীদের জীবন এখনো নিরাপদ নয়। এই দেশের সংখ্যালঘু জাতিসত্তা সুখে নেই। এর নিরাপত্তা বিধান না করা হলে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠবে। সারাদেশ নিমঘুটু হয়ে যাবে। তখন বোঝা যাবে আগুন নিয়ে খেলা ঠিক নয়।’

ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘এই গ্রামে আসামিপক্ষের সমর্থক কিছু আছে বলেই এই ঘটনাগুলো ঘটছে। তবে সত্য কী, তা প্রমাণ করার দায়িত্ব এই এলাকার জনপ্রতিনিধিদের। যারা আসামিপক্ষের হয়ে কাজ করছেন, তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আমি মনে করি, এর দায় বিএমডিএ’র। তাদের ব্যবস্থাপনা পাম্পচালককে তৈরি করেছে। তাকে দুর্বৃত্ততে পরিণত করেছে। অতএব তারা দায় এড়াতে পারে না। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়েই বিষয়গুলো জানানো হবে।’

বিজ্ঞাপন

দুই কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনায় পরে পরিবারের পক্ষ থেকে দু’টি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা হয়। দুই মামলাতেই একমাত্র আসামি গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেন। ঘটনার ১১ দিন পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।

এদিকে, সম্প্রতি দুই কৃষকের মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দু’জনেরই মারা গেছেন একই ধরনের বিষপান করে। এরপর পুলিশ সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। অন্য মামলাটিরও অভিযোগপত্র প্রস্তুত হচ্ছে। ইদের পর সেটিও দাখিলের কথা রয়েছে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন