বিজ্ঞাপন

‘রোহিঙ্গাদের বোঝা টানা কষ্টকর’

July 7, 2022 | 1:16 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা মানবিক কারণে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু তিনটা বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। আমাদের জন্য আসলে এটা একটা বিরাট বোঝা। একে তো করোনাভাইরাস তার ওপরে যুদ্ধ; এই পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলো যেখানে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের ওপরে যে এই আরেকটা বোঝা টানা যে কত কষ্টকর, সেটা সকলের উপলব্ধি করা উচিত।’

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত ৮তলা ভবন উদ্বোধন এবং ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত ভবনের হলরুমে যুক্ত ছিলেন।

এদিকে, এক বাংলাদেশি কূটনীতিক এবং ঢাকায় কর্মরত এক বিদেশি কূটনীতিককে সেরা কূটনীতিক বঙ্গবন্ধু পদকে ভূষিত করা হয়। পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন এবং বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ড. ইতো নওকি এই পুরস্কার লাভ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত বছর থেকে এ পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘বিশ্বব্যাপী বঙ্গবন্ধু কর্নার’ নামের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কূটনৈতিক চর্চার মধ্য দিয়ে আমরা সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয় এই নীতি মেনে চলছি। আমরা সেটাই মেনে চলতে চাই। কারণ আমার কাছে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমার দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি। তার জন্য সবার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রেখেই আমরা আমাদের উন্নয়নটা ত্বরানিত করতে হবে।’

‘তবে এটাও ঠিক, আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য যতুটুকু আছে আমরা সেইভাবেই চলতে চাই। আমরা অহেতুক কারো কাছ থেকে অতিরিক্ত পয়সা নিই না। আমরা যতগুলি প্রজেক্ট হাতে নেই। প্রত্যেকটা প্রজেক্টে আগে আমরা হিসাব করি এই প্রজেক্ট থেকে রিটার্ন কি আসবে শুধু একটা কিছু তৈরি করার জন্য আমরা করি না। একটা কাজ করলে মানুষ কতটা লাভবান হবে আর আমরা যেন কোথাও কারও উপর পরনির্ভরশীল হয়ে না পড়ি। আমরা যেন আত্মনির্ভরশীল থাকতে পারি। আত্মমর্যাদাশীল থাকতে পারি এবং আমরা যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারি’, বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের অবদানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের পরে আমাদের বাঙালি যারা আটকা পড়ে গিয়েছিল সেখানে আমাদের আম্বাসেডর সুলতানা তিনি যেন মায়ের দরদ নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন সহযোগিতা করতে সেই সঙ্গে আমাদের মিশনের প্রত্যেকটা মানুষ কাজ করেছে এবং অন্যান্য মিশন থেকে এসেছে। আমি মনে করি তারা এখানে একটা অভাবনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কাজেই কূটনৈতিক সাফল্যের জন্যই আমরা তাকে পুরস্কৃত করেছি।’

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার পর থেকে জাপানের সঙ্গে তো আমাদের একটা বিশেষ বন্ধুত্বপূর্ণ রয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে জাপান সরকারের সহযোগিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে জাপান সরকারের বিভিন্ন সহযোগিতার কথাও স্মরণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ওপর একটা দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। সেখান থেকে আমি আমার ছোট বোন আমাদের ছেলেমেয়েরা মন্ত্রী উপদেষ্টা সচিব সকলের ওপর দোষারোপ দেওয়া হয়। সেখানে আমার একটা চ্যালেঞ্জ ছিল এটা প্রমাণ করতে হবে দুর্নীতি হয়েছে। কারণ আমি এখানে দুর্নীতি করতে আসিনি। নিজের ভাগ্য পড়তে আসিনি, এসেছি বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য গড়তে।’

কানাডার আদালতে মামলা পরবর্তী রায়ের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নিজের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবো। পদ্মা নদী বিশ্বের সবচেয়ে খরস্রোতা নদী আমাজন নদী এবং পদ্মা নদী। এতো খরস্রোতা নদী বোধহয় আর নেই। যাই হোক আমরা পদ্মা সেতুটা নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি নিজেদের অর্থায়নে। সে জন্য যারা নির্মাণ কাজে সহযোগিতা করেছেন সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা এইটুকু যে করতে পেরেছি। এটাই আমাদের সক্ষমতা প্রমাণ করে। যে বাংলাদেশ পারে, আমরা পারি, এটাই আমরা প্রমাণ করেছি। কাজেই আমি মনে করি এটা আমাদের দেশের মানুষের জন্য বিরাট অবদান হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই পদ্মা সেতুর প্রাথমিক কাজগুলি কিন্তু জাপানই করে দিয়েছে। অন্যান্য কাজগুলি হচ্ছে সেগুলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা সকলে বলেছেন। কিন্তু এই পদ্মা সেতুর যে প্রাথমিক কাজটা করা এটা করবার মতো যে সাহস সেটা জাপান প্রাইম মিনিস্টারের সঙ্গে আলাপ করার পর যখন তারা ফিজিবিলিটি স্টাডি শুরু করেন তারপর আমরা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম।’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গে কূটনৈতিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আমি মনে করি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশগুলো আর একটু সক্রিয় হলে এই রোহিঙ্গারা তারা নিজের দেশে ফিরত যেতে পারে। তাদের ছেলেমেয়েরা যেন তাদের দেশে মানুষ হতে পারে, তারা একটা ভাল পরিবেশে চলে যেতে পারে। এভাবে ক্যাম্পের জীবনযাপন যেন না করতে হয়। তাদেরও তো একটা মানবাধিকার আছে। কাজেই সে ব্যাপারে সকলে একটু সক্রিয় হবেন। সেটিই আমি আশা করি।’

সারাবাংলা/এনআর/একেএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন