বিজ্ঞাপন

টিসিবিতে দেওয়া হচ্ছে পঁচা পেঁয়াজ

August 2, 2022 | 9:32 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: রাজশাহীতে নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে গত সোমবার থেকে। এর মধ্যে দ্বিতীয় দিন নগরীতে দেওয়া হয়েছে পঁচা পেয়াঁজ। ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন, ডিলাররা যেসব পেঁয়াজ দিচ্ছেন, সেগুলো পঁচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। পেঁয়াজ নেওয়া বাধ্যতামূলক। পেঁয়াজ না নিলে অন্য কোনো পণ্য ডিলাররা দিচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

সোমবার থেকে শুরু হওয়া প্রতিদিন মহানগরীর ১০টি ওয়ার্ডে টিসিবির পণ্য বিক্রি করেছেন ডিলাররা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে স্বল্পমূল্যে টিসিবির পণ্য পেয়ে খুশি নিম্নআয়ের মানুষেরা। তবে টিসিবি ফ্যামিলি কার্ড বিতরণেও অনিয়ম আছে বলে জানিয়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষরা। তারা বলছেন, জনপ্রতিনিধিরা তাদের ঘনিষ্টজনদের টিসিবির পণ্য নেওয়ার জন্য ফ্যামিলি কার্ড দিয়েছেন। এসে অনেক স্বল্প আয়ের মানুষ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। লাভবান হয়েছেন কিছু ধনী মানুষ।

আগের মতো এখন আর ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে না। পরিবেশকের দোকান কিংবা নির্দিষ্ট স্থান থেকে পণ্যগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। নিজের ফ্যামিলি কার্ড নিয়ে গিয়ে নিম্নআয়ের মানুষেরা সেখান থেকে পণ্যগুলো কিনতে পারছেন। কিন্তু পঁচা পেঁয়াজ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে রাজশাহীর ক্রেতাদের।

মঙ্গলবার টিসিবির পণ্য বিক্রি করার সময় দেখা গেছে, যেসব পেঁয়াজ দেওয়া হচ্ছে, তার সবই পঁচা। এসব পেঁয়াজ ক্রেতারা নিতে না চাইলে ডিলার পয়েন্ট থেকে বলা হচ্ছে অন্য কোনো পণ্য তারা দেবে না। কিন্তু ক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজ ছাড়া পণ্য দেওয়া হয় তাহলে তারা লাভবান হতেন। এসব পঁচা পেঁয়াজ বাড়িতে নিয়ে গিয়েও রাখা সম্ভব না। একমাত্র এসব পেঁয়াজ হোটেল ও রেস্তোরাঁয় ব্যবহার করা সম্ভব।

বিজ্ঞাপন

মহানগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিয়াডাঙ্গা মোড়ে লম্বা লাইনে মুখে কাপড় দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন নারীরা। কারণ জিজ্ঞাসা করতেই সাবিনা বেগম বললেন, ‘নাক নাই? দেখতে পাচ্ছেন না পেঁয়াজের কী গন্ধ!’ সাবিনার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন জরিনা বেগম। বললেন- ‘এ পেঁয়াজ তো খাওয়া যাবে না। সব পঁচা! আবার পেঁয়াজ না নিলে তেল, ডাল, চিনি দেবে না। তাই বাধ্য হয়ে এ পেঁয়াজও নিতে হচ্ছে।’

নগরীর ১ নম্বর কাশিয়াডাঙ্গা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, পঁচা পেঁয়াজ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পেঁয়াজ এতটাই পঁচা যে পরিবেশকের কর্মচারী মো. নাঈম তা হাতেও স্পর্শ করছেন না। হাতে-পায়ে জড়িয়ে রেখেছেন পলিথিন। এভাবে তিনি পেঁয়াজ ওজন করছেন।

ডিলাররা বলছেন, একটি পণ্য বাদ রেখে অন্য পণ্যগুলো দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়েই ক্রেতারা পেঁয়াজ নিয়ে আবার ফেলে দিচ্ছেন। আমাদেরও করার কিছু নেই। কারণ আমরা এই পেঁয়াজই পাচ্ছি। তাই আমাদের বাধ্য হয়ে এই পেঁয়াজ ক্রেতাদের দিতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

কাশিয়াডাঙ্গায় পেঁয়াজ বিক্রি করছিল টিসিবির পরিবেশক সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ। এর স্বত্বাধিকারী হামিদুল ইসলাম সুজন বলেন, আমাদের কিছু করার নাই। আমরাকে যা দিচ্ছে আমরাও তা দিচ্ছি। প্যাকেজ হিসেবে চাল, চিনি, তেল ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। একটি রেখে অন্যটি কেনার সুযোগ নেই। ক্রেতাকে একসঙ্গে সবই কিনতে হচ্ছে।

পেঁয়াজ কিনতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হড়গ্রাম নতুনপাড়ার বাসিন্দা জাহানারা বেগম। তিনি বলেন, বাজারে ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে ভালো মানের পেঁয়াজ পাওয়া যায়। এখানে ২০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে এ পঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত পেঁয়াজ। এটা গরিবের সঙ্গে তামাশা। এ পেঁয়াজ না কিনলে আবার তেল, চিনি, ডাল দেবে না। তাই বাধ্য হয়ে পচা পেঁয়াজও কিনতে হচ্ছে।

মেসার্স গোলাপ স্টোরের স্বত্বাধিকারী গোলাম রসুল বলেন, ফ্যামিলি কার্ড করার আগে প্যাকেজ ছাড়া পণ্য বিক্রি করা যেত। ফ্যামিলি কার্ডের পর আর সেটা সম্ভব না। তাই সবাইকে সব পণ্যই কিনতে হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে ক্রেতারা পঁচা পেঁয়াজ কিনছেন। টিসিবি আমাদেরকে এ পেঁয়াজ দিয়েছে, আমরাও দিতে বাধ্য হচ্ছি।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা গরিব মানুষকে ফ্যামিলি কার্ড করে দিয়েছি। এখন এ কার্ড নিয়ে এসে মানুষ পঁচা পেঁয়াজ কিনছে। এখন আমাদেরই তো বদনাম হচ্ছে। আমি টিসিবিকে বলেছি, পঁচা পেঁয়াজ দিয়েন না। কিন্তু তাঁরা দেবে। এ পেঁয়াজ মানুষ খেতে পারবে না। ফেলে দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ এক কেজি চিনি ও দুই কেজি করে তেল, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, তেল ১১০ টাকা, ডাল ৬৫ টাকা ও পেঁয়াজ ২০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

টিসিবি রাজশাহীর অফিস প্রধান শাহিদুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী মহানগরীতে পেঁয়াজ দেয়া হচ্ছে। উপজেলাগুলোতে পেঁয়াজ দেয়া হচ্ছে না। পেঁয়াজ কাঁচামাল হওয়ায় কিছু অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহী মহানগর ও জেলা মিলে প্রায় সোয়া দুই লাখ পরিবার এই সুবিধা পাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে এসব পণ্য রাজশাহী মহানগরের ৩০টি ওয়ার্ড এবং জেলার ৯টি উপজেলা এলাকায় বিতরণ করা হবে।

সারাবাংলা/এএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন