বিজ্ঞাপন

ডিসেম্বরেই আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন

August 14, 2022 | 8:15 pm

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সে লক্ষ্যে ডিসেম্বরের আগেই দলের সব ইউনিট এবং সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে চলমান পরিস্থিতিতে জনগণের সামনে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে দেশব্যাপী সাংগঠনিক তৎপরতা আরও জোরদারের গাইডলাইন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৪ আগস্ট) গণভবনে আওয়ামী লীগের আট বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে তিনি এসব বিষয়ে নির্দেশনা দেন বলে বৈঠক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর আগে সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন তিনি। আওয়ামী লীগের গত জাতীয় সম্মেলনের পর এই প্রথম দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করলেন শেখ হাসিনা।

এ সময় আট বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। নেতারা হলেন- আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাখাওয়াত হোসেন শফিক। বৈঠকে দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সম্মেলন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে অবহিত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সে লক্ষ্যে বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে রিপোর্ট শোনেন ও বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরার নির্দেশনা দেন টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার প্রধানের দায়িত্বে থাকা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সভায় জানানো হয়, নভেম্বরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

বিজ্ঞাপন

বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সারাবাংলাকে বলেন ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত আট সাংগঠনিক সম্পাদককে নিয়ে এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বসেছিলেন। তিনি আমাদের সাংগঠনিক কাজের গুরুত্ব বাড়ানোর নির্দেশ দেন। এছাড়া সব জেলাওয়ারি রিপোর্টও নিয়েছেন তিনি। জেলা-উপজেলায় কতগুলো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, কতগুলো বাকি আছে সেগুলো জানানো হয়েছে তাকে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন জেলারর অভ্যন্তরীণ সংকট নিয়ে কথা বলেছেন।’

মির্জা আজম জানান, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সম্মেলন হবে এবং জাতীয় সম্মেলনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করতে হবে বলে দলীয় প্রধান নির্দেশ দিয়েছেন। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করারও নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কোনো ইউনিটে অভ্যন্তরীণ সংকট বা কোন্দল থাকলে সেগুলো নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন তিনি। এছাড়া সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে কোথাও কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ নেওয়ারও নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ প্রধান।

নির্বাচনে দলের বিদ্রোহীদের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে কি না?- জানতে চাইলে মির্জা আজম বলেন, ‘বিদ্রোহীদের ব্যাপারে তো এর আগেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেমন- উপজেলা পরিষদে যারা বিদ্রোহ করেছিল তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। বিদ্রোহীদের যারা সমর্থন করেছিল তাদেরও ক্ষমা (সাধারণ ক্ষমা) করে দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র যারা প্রার্থী ছিলেন তারা কোনো কমিটির পদে থাকতে পারবে না— এই পানিশমেন্ট বহাল আছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ছিল- সরাসরি বহিষ্কার করা। যারা প্রার্থী ছিলের এবং যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ছিল। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক জায়গায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় হয়তো নেওয়া হয়নি। এই বিষয়গুলোও আজকের আলোচনায় উঠে আসে। এটা পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ আছে কি না? জানতে চাইলে নেত্রী বলেছেন, কোনো এক সভায় (আগামী) এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তারপর সিদ্ধান্ত।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সামনের দিনে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আরও জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের সদস্য সংগ্রহ অভিযান জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন। যারা দেশকে ভালবাসেন, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস করেন, যাদের বিরুদ্ধে সমাজে কোনো নেতিবাচক প্রচারণা বা কর্মকাণ্ড নেই এই সমস্ত ভালো মানুষদের তিনি আওয়ামী লীগের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেও চিন্তিত। তিনি প্রতিনিয়ত কাজ করছেন। বিশ্ববাজারে তিনি খোঁজ-খবর রাখছেন। যত দ্রুত সম্ভব এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আবার দেশের মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি তিনি নিশ্চিত করতে চান।’

রাজশাহী বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে উন্নয়নমূলক কাজগুলো করেছেন, সেই কাজগুলো সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার কথা বলেছেন। আর বর্তমান সংকট নিয়ে নেত্রী বলেছেন, আমি জানি মানুষের কষ্ট ভোগ করছে। এই কষ্ট তো আমাদের সৃষ্টি না। এই কষ্ট সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে। বিদ্যুৎখাতেও কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তিনি জনগণকে এ বিষয়ে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়াও তিনি বলেছেন, বিশ্ব ক্রাইসিস কাটিয়ে উঠলে এবং তেলের মূল্য কমলে অবশ্যই সেগুলো বিবেচনা করা হবে। এ ব্যাপারে জনগণকে তিনি একটু ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।’

বিজ্ঞাপন

বৈঠকে সাংগঠনিক আলোচনার বাইরে অন্য কী কী বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন? জানতে চাইলে মির্জা আজম জানান, ‘আমাদের সাংগঠনিক কাজের পরও যখন আমারা বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় যাই, বক্তব্য দেই। সেখানে তিনি কিছু সুর্নিদিষ্ট বিষয় মানুষের সামনে তুলে ধরার কথা বলেছেন। যেমন- বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সম্পর্কে জানাতে, আওয়ামী লীগের আমলে যে উন্নয়ন, সেই উন্নয়নের কথা জানাতে, প্রধানমন্ত্রী কিছু বিশেষ প্রকল্প আছে যেমন- আশ্রয়হীন মানুষকে আশ্রয় দেওয়া, ভূমিহীন মানুষকে ঘরবাড়ি তুলে দেওয়া- নেত্রী এই কাজগুলো করছেন সরকারি প্রশাসনকে দিয়ে। এখন কৃষক লীগকে এ বিষয়ে নতুন দায়িত্ব দিয়েছন। ভূমিহীন কেউ বাদ পড়ছে কি না? যদি বাদ পরে থাকে তাহলে সেই নামগুলো ফের তালিকাবদ্ধ করতে কৃষকলীগের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর এ বিষয়ে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মনিটরিং বা তল্লাশি করে সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন।’

তিনি জানান, যারা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরবাড়ি পাচ্ছে ওইসব এলাকায় নিচের টায়ারে কমিটি বা সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় প্রধান। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম যাতে ভালোভাবে চলে, মানুষ যাতে সেবা পায়, সে বিষয়েও নেতাকর্মীদের তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন।

মির্জা আজম বলেন, ‘নেত্রী বলেছেন, আমরা যে উন্নয়নগুলো করছি সেগুলো তো আমাদের নিজস্ব চিন্তা-চেতনার নয়। সবকিছুই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এবং তার চিন্তা-চেতনার। যা তিনি বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে উল্লেখ করে দিয়েছেন। একটা উন্নত সমৃদ্ধ দেশের নাগরিক সুবিধা এই বাংলাদেশের সকল মানুষ পাবে। সেগুলো নিয়ে নেত্রী কাজ করছেন। নেত্রী তার নিজের কোনো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন না।’ বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন বলে জানান আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন