বিজ্ঞাপন

বইমেলায় স্টল ভাড়া থেকে আয় কয়েক কোটি, ব্যয়ের খাত স্পষ্ট নয়

January 27, 2023 | 11:51 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: এবারের ‘অমর একুশে বইমেলায়’ ছয় শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে আট শতাধিক স্টল ও ৩৪টি প্যাভিলিয়ন ভাড়া দিয়ে এরইমধ্যে কয়েক কোটি টাকা নিজেদের তহবিলে জমা করেছে বাংলা একাডেমি। তবে মেলার ‘নীতিমালা ও নিয়মাবলি’-তে এই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আয়ের খাতগুলো ‘মোটামুটি’ উল্লেখ থাকলেও ব্যয়ের খাতগুলো স্পষ্ট নয়।

বিজ্ঞাপন

বইমেলা থেকে একাডেমির আয়ের উল্লেখযোগ্য একটি খাত হচ্ছে— স্টল ও প্যাভিলিয়ন ভাড়া। মেলা শুরুর আগেই এ খাত থেকে সমুদয় অর্থ ‘বাংলা একাডেমি অমর একুশে গ্রন্থমেলা শীর্ষক’ সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরে জমা হয়ে যায়। কারণ, আবেদনপত্রের সঙ্গে ‘ভাড়া বাবদ প্রদেয় অর্থের প্রমাণক’ জমা না দিলে, আবেদপনত্র গ্রহণ করা হয় না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার মেলা প্রাঙ্গণে প্রতি এক ইউনিট (৮ ফুট দৈর্ঘ্য, ৮ ফুট প্রস্ত) স্টলের জন্য ভ্যাটসহ ভাড়া ১৫ হাজার ১৮০ টাকা, দুই ইউনিট (১৬ ফুট দৈর্ঘ্য, ৮ ফুট প্রস্ত) স্টলের জন্য ভ্যাটসহ ভাড়া ৩১ হাজার ৬২৫ টাকা। তিন ইউনিট (দৈর্ঘ্য ২৪ ফুট, প্রস্ত ৮ ফুট) স্টলের জ্যন ভ্যাটসহ ভাড়া ৫৯ হাজার ৮০০ টাকা। চার ইউনিট (দৈর্ঘ্য ৩২ ফুট, প্রস্ত ৮ ফুট) স্টলের জন্য ভ্যাটসহ ভাড়া ৮৩ হাজার ৪৯০ টাকা করে নিয়েছে বাংলা একাডেমি। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট থেকে গড়ে ১৯ হাজার টাকা করে সাড়ে আট শতাধিক ইউনিট থেকে ১ কোটি ৬১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ভাড়া তুলেছে মেলা কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া মেলায় ছোট প্যাভিলিয়নের (দৈর্ঘ্য ২০ ফুট, প্রস্ত ২০ ফুট) জন্য ভ্যাটসহ ভাড়া ১ লাখ ৫১ হাজার ৮০০ টাকা এবং বড় প্যাভিলিয়নের (দৈর্ঘ্য ২৪ ফুট, প্রস্থ ২৪ ফুট) জন্য ভ্যাটসহ ভাড়া ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকা করে নিয়েছে বাংলা একাডেমি।

এবারে মেলায় ছোট প্যাভিলিয়ন আছে ১৩টি, বড় প্যাভিলিয়ন আছে ২১টি। উল্লেখিত হারে ভাড়া আদায় করায় ছোট প্যাভিলিয়ন থেকে ভাড়া বাবদ একাডেমি পেয়েছে ১৯ লাখ ৮৩ হাজার ৪০০ টাকা। বড় প্যাভিলিয়ন থেকে ভাড়া পেয়েছে ৩৯ লাখ ১২ হাজার ৩০০ টাকা। অর্থাৎ প্যাভিলিয়ন থেকে বাংলা একাডেমির মোট আয় প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

স্টল ও প্যাভিলিয়ন ভাড়া থেকে বাংলা একাডেমির মোট আয় ২ কোটি ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকার ওপরে। এখান থেকে ভ্যাটের অংশটা বাদ দিলে কেবল স্টল ও প্যাভিলিয়ন থেকে ভাড়া বাবদ বাংলা একাডেমির নিট আয় দাঁড়ায় ১ কোটি ৯০ লাখ টাকার মতো।

বিজ্ঞাপন

এই স্টল ও প্যাভিলিয়ন ছাড়াও বাংলা একাডেমির আয়ের আরেকটি খাত হচ্ছে বিভিন্ন করপোরেট, আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে স্পন্সর গ্রহণ। তবে মেলার ‘নীতিমালা ও নিয়মাবলিতে’ স্পন্সর থেকে আয়ের বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ‘অমর একুশে বইমেলা’ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সরাসরি কোনো স্পন্সর গ্রহণ করি না। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানকে স্পন্সর নেওয়ার ব্যাপারে পারমিশন দেওয়া আছে। নিয়মের মধ্যে থেকে তারা কিছু স্পন্সর জোগাড় করে থাকে।’

শুধু স্পন্সর নয়, নানা খাত থেকে আয় করা অর্থ কোনো খাতে কীভাবে খরচ করা হবে, সে ব্যাপারেও মেলার ‘নীতিমালা ও নিয়মাবলি’তে কিছু উল্লেখ নেই। কেবল মাত্র ‘নীতিমালা ও নিয়মাবলি’র ১০.৩ ধারায় বলা হয়েছে ‘স্টলের কাঠামো নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক ব্যয়ের অংশ হিসেবে স্টল ভাড়ার নগদ অর্থ ‘বাংলা একাডেমি অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ শীর্ষক সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরে জমা দিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্টল ও প্যাভিলিয়ন ভাড়া বাবদ যে অর্থ আদায় করা হয়, তা দিয়ে মূলত মেলার বেষ্টনী নির্মাণ, বাঁশ ও টিনের ছাউনি দিয়ে স্টলের কাঠামো নির্মাণ এবং স্টল-প্যাভিলিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। স্টল-প্যাভিলিয়ন বুঝিয়ে দেওয়ার পর সামর্থ ও রুচি অনুযায়ী নিজেদের খরচে সেগুলো সাজ-সজ্জা করে থাকে প্রকাশনী সংস্থাগুলো।

এ ছাড়া মেলার মূল মঞ্চ নির্মাণ, মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ তৈরি, ডিসপ্লে বোর্ড, গেটের সাজসজ্জা, সৌন্দর্যবর্ধন, নিরাপত্তা ব্যয়, টয়লেট-প্রার্থনাঘর তৈরিসহ নানা অনুষঙ্গ ও ইভেন্টের সঙ্গে কোনো না কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও স্পন্সরের বিষয়টি জড়িত থাকে। খাবারের দোকান বরাদ্দ থেকে আসা অর্থও এ সব কাজে ব্যয় হয়।

তবে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার জন্য আলাদা কোনো বাজেট থাকে না বাংলা একাডেমির। কেবলমাত্র ফায়ার সার্ভিস ও আনসারের জন্য কিছু বরাদ্দ রাখে ‘অমর একুশে বইমেলা কর্তৃপক্ষ।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ‘অমর একুশে বইমেলা’ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বইমেলার নীতিমালার আলোকে আয় এবং ব্যয়ের বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়। কোথাও কোনো অস্বচ্ছতা নেই।’

সারাবাংলা/এজেড/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন