বিজ্ঞাপন

চবি প্রশাসন থেকে ১৬ শিক্ষকের পদত্যাগ, নেপথ্যে ভিসির সঙ্গে বিরোধ

March 12, 2023 | 11:03 pm

রমেন দাশগুপ্ত ও চলন্ত চাকমা

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি প্রশাসনিক পদ থেকে প্রক্টরসহ ১৬ শিক্ষকের একযোগে পদত্যাগ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সঙ্গে প্রায় একবছর ধরে মতবিরোধের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটেছে শিক্ষকদের প্রশাসন থেকে সরে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে। এভাবে একসঙ্গে এত শিক্ষকের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা নিকট অতীতে আর ঘটেনি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা। তাদের মতে, এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষকদের দাবিদাওয়া পূরণে অনীহা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও অপমান করা, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, প্রশাসনিক পদে থাকা শিক্ষকদের মতামতকে প্রাধান্য না দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনায় পরিবারের সদস্যের অযাচিত হস্তক্ষেপ, একজন সিন্ডিকেট সদস্য ও দফতরের এক কর্মকর্তার প্রভাব বিস্তার, নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তি এনে নিজস্ব বলয় তৈরির চেষ্টা এবং বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের প্রাধান্য দেওয়া— মোটাদাগে উপাচার্যের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ঘুরেফিরে আসছে।

এদিকে উপাচার্য শিরীণ আখতারও এবার পদত্যাগীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তিনি পদত্যাগীদের ‘ঘরশত্রু বিভীষণ’ উল্লেখ করে বলেছেন, তাকে (উপাচার্য) ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে না পেরে শিক্ষকরা সরে দাঁড়িয়েছেন, যাদের মধ্যে দু’জনকে তিনি নিজেই পদত্যাগ করতে বলেছেন।

রোববার (১২ মার্চ) দুপুরে ১৬ জন শিক্ষক একযোগে চবি’র ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

বিজ্ঞাপন

পদত্যাগকারীরা হলেন- প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভুইয়া, সহকারী প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম, এসএএম জিয়াউল ইসলাম, ড. রামেন্দু পারিয়াল, গোলাম কুদ্দুস লাবলু ও মোহাম্মদ শাহরিয়ার বুলবুল তন্ময়, ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল, এএফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষক আনাবিল ইহসান, প্রীতিলতা হলের আবাসিক শিক্ষক ফারজানা আফরিন রূপা, শহীদ আব্দুর রব হলের আবাসিক শিক্ষক ড. এইচএম আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, শহীদ আব্দুর রব হলের আবাসিক শিক্ষক রমিজ আহমেদ সুলতান, শামসুন নাহার হলের আবাসিক শিক্ষক শাকিলা তাসমিন, খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষক ড. মো. শাহ আলম, নাসরিন আক্তার ও উম্মে হাবিবা, আলাওল হলের আবাসিক শিক্ষক ঝুলন ধর।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভুইয়া শহীদ আব্দুর রব হলের প্রভোস্ট এবং সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বুলবুল তন্ময় শাহজালাল হলের আবাসিক শিক্ষক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন। তারা অতিরিক্ত দায়িত্বও ছেড়ে দিয়েছেন।

এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই উপাচার্য অবশ্য নতুন প্রক্টর ও দু’জন সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দেন। ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুল আজিম সিকদারকে প্রক্টর ও একই বিভাগের প্রভাষক সৌরভ সাহা জয় ও ওশানোগ্রাফি বিভাগের প্রভাষক রুকন উদ্দীনকে সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানান রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ।

বিজ্ঞাপন

সূত্রমতে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি, হল প্রশাসন এবং বিভিন্ন সেল মিলিয়ে অর্ধশতাধিক প্রশাসনিক পদ আছে। উপাচার্যের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করে গত তিন মাসে বিভিন্ন পদ থেকে অন্তঃত ছয়জন শিক্ষক পদত্যাগ করেন। সর্বশেষ ১৬ জনসহ ২৪টি পদ থেকে ২২ জন শিক্ষক সরে দাঁড়ালেন।

২০১৬ সাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শিরীণ আখতারকে ২০১৯ সালে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালে তাঁকে উপাচার্যের নিয়মিত দায়িত্ব দেয়া হয়। চলতি বছরেই তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

দায়িত্ব নেয়ার পর নিয়োগে টাকা লেনদেনের অডিও রেকর্ড ফাঁসসহ নানা বিষয়ে উপাচার্য সমালোচনার মুখে পড়লেও ১৬ শিক্ষকের একযোগে পদত্যাগের ঘটনা তাঁকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। পদত্যাগী শিক্ষকরা ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগের বিষয় উল্লেখ করলেও নেপথ্যের ঘটনা এখন আর চাপা থাকছে না। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুখে মুখে ফিরছে তাদের মধ্যকার বিরোধের কথা।

পদত্যাগী এবং জ্যেষ্ঠ্য শিক্ষকদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপাচার্যের সাজানো প্রশাসন শুরুতে কয়েকটি সৃজনশীল কর্মকাণ্ড দিয়ে প্রশংসা কুড়ায়। এর মধ্যে আছে- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মশা নিধনে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা, করোনাকালীন সময়ে নমুনা পরীক্ষার ল্যাব চালু করা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনাসহ নানা আয়োজন।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু ২০২১ সালে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সভাপতিসহ কয়েকটি পদের প্রার্থী নিয়ে আওয়ামীপন্থী হলুদ দল বিভক্ত হয়ে পড়ে। একপক্ষে ছিলেন হলুদ দলের নেতৃত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ্য শিক্ষকরা, অন্যদিকে উপাচার্যের নেতৃত্বে প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে থাকা শিক্ষকরা। দল থেকে ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা ও বিএনপি-জামায়াতের আমলে নিয়োগ পাওয়া একজন শিক্ষককে প্রার্থী করার অভিযোগ এনে উপাচার্যপন্থীরা এর প্রতিবাদে পাল্টা প্রার্থী দেন। উপাচার্যের সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে সভাপতিসহ দু’জন বিজয়ী হন।

এসময় উপাচার্যের পক্ষের প্রশাসনিক পদে থাকা শিক্ষকরা তাদের সমর্থিত প্রার্থীকে জেতাতে ১৭ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন। এর মধ্যে শিক্ষকদের অনর্জিত ইনক্রিমেন্ট পরিশোধ, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেয়া, শিক্ষকদের আবেদনের তারিখ থেকে পদোন্নতি কার্যকর হওয়া, আধুনিক ল্যাব চালু, শিক্ষকদের গবেষণার তহবিল বাড়ানো, শিক্ষার্থীদের গবেষণা তহবিল ও ল্যাবের সুযোগ-সুবিধা বাড়নো এবং শিক্ষকদের আবাসন সুবিধা নিরসন অন্যতম।

শিক্ষকদের অভিযোগ, নির্বাচনের পর এসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য তাঁরা উপাচার্যের সঙ্গে দফায় দফায় দেনদরবার করেও ব্যর্থ হন। দাবি মানার আশ্বাস দিয়েও পরে তিনি সরে যান।

২০২২ সালের শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হয়েছে ২০২৩ সালের শুরুতে। এর আগে প্রশাসনিক পদে থাকা শিক্ষকরা আবারও উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে দাবি মেনে নেয়ার কথা বলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদত্যাগী একজন শিক্ষক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষক গিয়ে বলেছিলাম- ম্যাডাম, অন্তত ২-৩টি দাবিও যদি আপনি মেনে না নেন, তাহলে শিক্ষকদের কাছে গিয়ে ভোট চাইব কিভাবে ? এতে তিনি চরমভাবে ক্ষুব্ধ হন। টেবিল চাপড়ে, কপাল চাপড়ে, চিৎকার-চেঁচামেচি করে তিনি লোকজন জড়ো করে ফেলেন ভিসি অফিসে। অপমানিত হয়ে আমরা ফিরে আসি সেখান থেকে।’

‘এরপর থেকে প্রক্টরসহ আমাদের উপাচার্য এড়িয়ে চলা শুরু করেন। কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আমাদের সঙ্গে আলাপ করতেন না। আবার গত দুইবছর ধরে এমনও হয়েছে, আমাদের সামনে একধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কিন্তু বাসায় গিয়ে সেটা পাল্টে ফেলেছেন। আমাদের কোণঠাসা করার জন্য যা যা করা দরকার সব করেছেন।’- বলেন ওই শিক্ষক

সূত্রমতে, সর্বশেষ শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী হলুদ দল তিনভাগে ভাগ হয়ে যায়। এর মধ্যে একটি উপাচার্যের সমর্থিত, আরেকটি প্রশাসনিক পদে থাকা শিক্ষকদের সমর্থিত এবং একটি বিদ্রোহীদের প্যানেল। সেই নির্বাচনে উপাচার্য বিরোধী বিদ্রোহীরা অধিকাংশ পদে জয়ী হয়েছেন। এরপর গত ৬ মার্চ সিন্ডিকেটের চারটি পদে নির্বাচন হয়। সেখানে উপাচার্যের সমর্থিত শুধু একজন জয়ী হন। অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের একজন জয়ী হন। একটি পদে প্রশাসনিক পদের শিক্ষকদের সমর্থিত একজন ও একটি পদে হলুদ দলের প্রার্থী জয়ী হন।

শিক্ষক সমিতির নির্বাচন ও সিন্ডিকেট নির্বাচনে জয়ী উপাচার্যবিরোধী কেউ রীতি ভেঙে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাননি। এতে উপাচার্য আরও ক্ষুব্ধ হন বলে জানান পদত্যাগী শিক্ষকদের কয়েকজন।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকটি বিভাগে বিএনপি-জামায়াতপন্থী কয়েকজনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করলে দুইমাস আগে প্রশাসনিক পদে থাকা কয়েকজন শিক্ষক উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাত করে এর বিরোধিতা করেন। তখনও উপাচার্য ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলে দুইজন সহকারী প্রক্টর ও তিনজন সহকারী পরিচালক এবং একজন প্রভোস্টসহ ছয়জন পদত্যাগ করেন।

জানতে চাইলে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষকদের কোনো দাবিদাওয়া নিয়ে তারা কখনোই আমার কাছে আসেনি। শুধুমাত্র নিয়োগের তদবির আর ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নের তদবির নিয়ে আমার কাছে আসতেন। ইনক্রিমেন্ট, আবাসন নিয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে সব বোগাস। ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে না পেরে তারা আমাকে বিব্রত করার চেষ্টা করেছে। এতে আমার কিছুই হবে না। আমি দুর্নীতি করিনি, কাউকে দুর্নীতি করার সুযোগও দিইনি। তাদের পদত্যাগে আমি খুব খুশি হয়েছি। এরপরও আমি তাদের সন্তানের মতোই স্নেহ করে যাব।’

জানতে চাইলে সদ্য পদত্যাগী প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষকদের দাবিদাওয়া নিয়ে ম্যাডামের কাছে কয়েকবার গিয়েছিলাম। এ সংক্রান্ত সকল তথ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে আছে। তিনি বারবার দাবি মানার আশ্বাস দিয়েছেন। পরে আবার সেই আশ্বাস থেকে সরে গেছেন। কিন্তু শিক্ষকরা আমাদের ভুল বুঝতে শুরু করেন। শেষপর্যন্ত যখন দেখলাম, অযথা কোনো দোষ না করেই আমাদের অবস্থান বিতর্কিত হচ্ছে, আমরা কয়েকজন সরে যাবার সিদ্ধান্ত নিই। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে বলিনি যে, আপনারাও আমার সঙ্গে পদত্যাগ করেন।’

ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সততা, নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতা দিয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছি। দায়িত্ব পালনকালে আমার বিন্দুমাত্র কর্মকাণ্ডে কোনো সমালোচনা বা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে কিংবা আমি কোনো অন্যায় করেছি, এমন কেউ বলতে পারবে না। শিক্ষক সমাজ এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল আছেন। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দাঁড় করিয়ে নিজেকে আড়ালের চেষ্টা সমীচীন নয়।’

শিক্ষকরা জানান, সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে উপাচার্য গত ৯ মার্চ প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া এবং সহকারী প্রক্টর শহীদুল ইসলামকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে পদত্যাগ করতে বলেন।

উপাচার্য শিরীণ আখতার সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত তিনমাস ধরে আঁচ করতে পারছিলাম তারা আমার বিরুদ্ধে কিছু একটা করছে। রবিউল একমাস আগে অধ্যাপক হয়েছে। তার স্ত্রী জাপানে থাকে। হুট করে সে জাপানে চলে যায়। প্রক্টরিয়াল অফিস একটা সেনসিটিভ অফিস। তার জন্য কাজে ব্যাঘাত হয়। তখন আমি তাকে বলেছি যে, তোমরা আমাকে অনেকদিন সার্ভ করেছ, এখন যেহেতু সময় দিতে পারছ না, ছেড়ে দাও। কারণ বিশ্বাসঘাতক নিয়ে তো কাজ করা যায় না। ঘরের শত্রু বিভীষণ থাকলে তো সমস্যা।’

‘আমি বলার পর রবিউল ও শহীদুল এক সপ্তাহ সময় চাইল। আমি বলি, সময় লাগবে কেন, এখনই ছেড়ে দাও, আমি নতুন-ইয়াং কাউকে দায়িত্ব দিই। তারা সেদিনই পদত্যাগপত্র আমার হাতে দিল। সেটা আবার ১৫ মার্চ থেকে কার্যকর উল্লেখ করল। আজ (রোববার) শুনলাম তারা পদত্যাগ করেছে। এটা আসলে পত্রিকায় একটা ইস্যু তৈরির জন্য তারা কাজটা করেছে।’

জানতে চাইলে রবিউল হোসেন ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ম্যাডামের বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিমত হচ্ছিল। কাজ করতে পারছিলাম না। ম্যাডাম আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত নিতেন। আবার সেটার দায় এসে পড়তো আমাদের ওপর। অফিসে এক সিদ্ধান্ত, বাসায় গিয়ে আরেক সিদ্ধান্ত নিতেন। গত ফেব্রুয়ারিতে আমি জাপান যাই। যাবার আগেই আমি ম্যাডামকে মৌখিকভাবে দায়িত্ব ছেড়ে যাবার কথা বলেছিলাম। ২৬ ফেব্রুয়ারি আমি ফিরে আসি। ৯ মার্চ ম্যাডাম আমাকে ডেকে মৌখিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের তাগাদা দেন। আমরা ১৫ মার্চ পদত্যাগ করবো বলে জানিয়েছিলাম। কিন্তু অবস্থা এমন হয়েছে, আমরা আর একদিনও সময় নিতে চাইনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে উপাচার্যের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত তাঁর পরিবারের একজন সদস্য এবং নিজ দফতরের একজন কর্মকর্তা ও একজন সিন্ডিকেট সদস্য শিক্ষকের হস্তক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা আছে। বিভিন্নসময় গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত তথ্য এসেছে। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটিতে আওয়ামীপন্থী জ্যেষ্ঠ্য শিক্ষকদের বাদ দিয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থী ও কনিষ্ঠ শিক্ষকের রাখা, ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কমিটিতে সদস্য করা নিয়েও উপাচার্যের ওপর শিক্ষকদের ক্ষোভ তৈরি হয়।

তবে এসব বিষয় মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে চবি উপাচার্য শিরীণ আখতার সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা এসব কথা বলছে, তারাও আমার খুব স্নেহের। স্নেহ করি বলেই তো তাদের বিভিন্ন পদে বসিয়েছিলাম। এখনও প্রক্টরিয়াল অফিসের দায়িত্ব ছাড়া অন্য দায়িত্বগুলো যদি তারা নিতে চায়, আমার কাছে আসতে পারে। আমি কাউকে বাদ দিতে চাই না। আর তাদের পদত্যাগের কারণে আমার কার্যক্রম পরিচালনায় কোনো সমস্যা হবে না। আমি অলরেডি প্রক্টর ও দু’জন সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দিয়েছি। কাল (সোমবার) আরও চারজন সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দেব।’

সারাবাংলা/সিসি/আরডি/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন