বিজ্ঞাপন

কামানের গোলায় ১৩ জন নিহত: ২৭ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

August 15, 2023 | 12:45 pm

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হত্যাকাণ্ড চালোনোর সময় কামানের গোলা ছোড়ে ঘাতক বাহিনী। তাদের ছোড়া গোলা গিয়ে পড়ে মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডের দুটি বাড়ির ওপর। এতে নারী ও শিশুসহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন প্রায় ৪০ জনের মতো। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর করা ইনডেমনিটি আইনের ফলে এই ঘটনা নিয়ে আর মামলা করার সুযোগ না থাকায় মামলা করতে পারেনি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

বিজ্ঞাপন

একই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার শেষ হলেও একইদিন কামানের গোলায় ১৩ জন নিহতের মামলায় ২৭ বছরেও এখনো শেষ হয়নি বিচারকার্য। দীর্ঘ সময় ধরে আদালতে সাক্ষী না আসায় অনেকটা থমকে ছিলো মামলাটির বিচারকার্য। তবে সাক্ষী হাজির করে মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ করার কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

বর্তমানে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন ছিল। তবে কয়েক মাস মামলাটি ঢাকার ১৩ তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ কুদরত-এ-ইলাহির আদালতে বিচারের জন্য বদলির আদেশ হয়েছে। গত ২১ জুন মামলাটির তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন কোনো শুনানি হয়নি। আগামী ১ অক্টোবর মামলাটির পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।

২০০৬ সালের ১ নভেম্বর এ মামলায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি আতিকুল রহমানের এক ব্যক্তি সাক্ষ্য দেন। এরপর থেকে আদালতে আর কোন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি। এর মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণের কয়েকটি তারিখ ধার্য থাকলেও আদালতে আরও কোন সাক্ষী উপস্থিত হয়নি।

বিজ্ঞাপন

আদালত সুত্রে জানা যায়, এই মামলার পলাতক আসামিদের মধ্য থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত কোন কোন আসামি দণ্ড কার্যকর হয়েছে সেই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন করার প্রার্থণা করেন রাষ্ট্রপক্ষ। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার এবং মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে কোন কোন আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে এবং কেউ মৃত্যুবরণ করেছে কি না প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে এক আসামির বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। কিন্তু তথ্যবিভ্রাট থাকায় পুনরায় প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন আদালত।

জানতে চাইলে মামলা মামলা সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, মামলাটিতে ১৮ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। মামলাটি প্রায় শেষের পর্যায়ে চলে এসেছে। কয়েকজন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে সাক্ষ্য গ্রহণের কাজ সমাপ্ত করবো। সাক্ষী হাজির করতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। আর রায়ের মধ্যে দিয়ে প্রকৃত আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন তিনি।

এদিকে মামলার বাদী মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বছর ১৫ আগস্ট মারা গেছেন। মোহাম্মদ আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী শাহনাজ বেগম জানান, তার স্বামীর ইচ্ছা ছিল বিচার দেখে যাবেন। কিন্তু বিচার শেষ হওয়ার আগেই তিনি মারা গেছেন। মামলার বিচারটা শেষ হলে স্বামীর আত্মা শান্তি পেতো। স্বামী মারা যাওয়ার পর সন্তানদের নিয়ে আর্থিকভাবে অসহায়ত্বের মধ্যে বাবার বাড়ী আছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দ্রুত মামলার বিচার শেষ করার দাবিও জানান।

বিজ্ঞাপন

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণের সময় সেনা সদস্যরা কামানের গোলা ছুঁড়লে তা গিয়ে মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডর ৮ ও ৯ এবং ১৯৬ ও ১৯৭ নম্বর বাড়ির (টিনশেড বস্তি) ওপর পড়ে। ছোড়া কামানের গোলার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। মুহূর্তের মধ্যেই ধুলায় মিশে যায় ওই বস্তিটি। ওই ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১৩ জন মারা যায়। প্রায় ৪০ জন আহতের মধ্যে কয়েকজন পুরুষ সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করে।

১৯৯৬ সালের ২৯ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় ওই ঘটনায় ৮ নম্বর বাড়ির মালিক মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আদালতে ২০০১ সালের এপ্রিলে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর এ মামলায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারিতে ১৭ আসামির মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পাঁচ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এরা হলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহিউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) বজলুল হুদা ও মেজর (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ। এরপর ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদেরও ফাঁসিও কার্যকর হয়।

বিজ্ঞাপন

পলাতক ১২ আসামিরা মধ্যে যারা রয়েছে তারা হলেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) শরিফুল হক ডালিম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ইবি, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এএম রাশেদ চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) আহমদ শরিফুল হোসেন ওরফে শরিফুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) মো. কিসমত হাসেম, ক্যাপ্টেন (অব.) নাজমুল হোসেন আনসার, রিসালদার (অবসরপ্রাপ্ত) মোসলেম উদ্দিন ওরফে মোসলেহ উদ্দিন, এলভি মো. আলী হোসেন মৃধা ও দফাদার মারফত আলী। আসামিরা সকলেই পলাতক রয়েছে। সম্প্রতি ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদেরও ফাঁসি কার্যকর হয়।

অন্যদিকে পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রথেকে নিযুক্ত আইনজীবীরা বলছেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে। সাক্ষীও হয়েছে। তবে ওখানে কোন প্রত্যেক্ষ সাক্ষী নেই। এই মামলার ফৌজদারি কার্যবিধি আইনে ১৬৪ ধারায় কোন জবানবন্দি নেই। কোন কিছুই নেই। মামলাটি অনেক সেনসেটিভ। আশা করি মামলার রায়ে আসামিরা ন্যায় বিচার পাবে।

সারাবাংলা/এআই/এনইউ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন