বিজ্ঞাপন

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পদাধিকার বলে বুদ্ধিজীবী’

December 14, 2023 | 8:56 pm

চবি করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: উপাচার্য হওয়ার আশায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ভুল-অপরাধের প্রতিবাদ করেন না বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যপক ও ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন সৃজনশীল বুদ্ধিজীবী নেই। সবাই হলেন ঐতিহ্যবাহী বুদ্ধিজীবী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সবাই পদাধিকার বলে বুদ্ধিজীবী।

বিজ্ঞাপন

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাকক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।

মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে মুনতাসীর মামুন আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখন আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কোনো ভুল বা অপরাধের প্রতিবাদ করেন না। কারণ, বুদ্ধিজীবী তকমা লাগিয়ে তারা উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য হতে চান। আমি শিক্ষকদের বলব, আপনারা সৃজনশীল বুদ্ধিজীবী হোন, ঐতিহ্যবাহী বুদ্ধিজীবী না।’

তিনি বলেন, ‘কেন বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হলো? কারণ পাকিস্তানিরা মনে করেছিল বুদ্ধিজীবীদের মেরে ফেলা হলে বাঙালিদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সব আন্দোলন বুদ্ধিজীবীদের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল। অনেকেই মনে করে শুধুমাত্র ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। মূলত বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু হয়েছে ২৫ মার্চ থেকে, শেষ হয়েছে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জহির রায়হান ও শহীদুল্লাহ্ কায়সাকে হত্যার মধ্য দিয়ে। সারদেশেই বুদ্ধিজীবী হত্যা হয়েছে। বুদ্ধিজীবীদের শুধু মিরপুর বা রায়েরবাজার নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায়তেই হত্যা করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীরা ভণ্ড ছিলেন না। তাই তারা মৃত্যুতে দ্বিধাহীন ছিলেন। অথচ আমরা এখনও বুদ্ধিজীবী হত্যার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারিনি। পৃথিবীর কোনো দেশে ছয় বার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের পুরো বিষয়টা অর্থের আবর্তে চলে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্পিরিট নষ্ট করা হচ্ছে। সমগ্র পৃথিবীতে রাজাকারদের তালিকা হয়, বুদ্ধিজীবীদের তালিকা হয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হওয়ার কোনো নজির নেই। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এত বছর ধরে আছে। অথচ তাদের বলে-কয়েও ৩০ লাখ শহিদের তালিকা করতে পারিনি আমরা। ’

বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হয়নি মন্তব্য করে মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘১৯৪৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানিরা মনে করে, বাঙালিরা সবাই পুরোপুরি মুসলমান নয়। পাকিস্তানিরা মনে করত যারা ভাত খায়, গম খায় না তারা তো পরিপূর্ণ পাকিস্তানি হতে পারে না। তারা মুসলমান হতে পারে না। তারা নামাজ পড়তে পারে কি না তাতে সন্দেহ ছিল।’

বাংলাদেশের প্রখ্যাত এই ইতিহাসবিদ বলেন, ‘আমাদের অনেকে বক্তব্যের শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলেন, যেটা আমি বঙ্গবন্ধুকে কখনও বলতে শুনিনি। আমাদের ভেতরে যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে তা হলো, এগুলো বলার মাধ্যমে মুসলমান প্রমাণ করা। এটা কেন করে জানেন? কারণ সবাই মুসলমান প্রমাণ করতে চায় নিজেকে। আমি মনে করি বাঙালিদের মুসলমান প্রমাণ করার দরকার নেই।’

বিজ্ঞাপন

সভায় চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীরা বাঙালি জাতির সূর্য সন্তান। এ জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের অবদান চিরস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকহানাদার বাহিনী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বেছে বেছে নির্মমভাবে হত্যা করে স্বাধীনতা সংগ্রামকে চিরতরে রুখে দিতে চেয়েছিল। বাঙালি জাতিকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে চিরতরে পঙ্গু করে দিতে চেয়েছিল।’

চবি রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে এবং প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার বক্তব্য দেন।

এদিকে, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি এবং বুদ্ধিজীবী চত্বরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত প্রগতিশীল সাধারণ শিক্ষক সমাজ। বৃহস্পতিবার সকালে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় সাধারণ শিক্ষক সমাজের আহবায়ক ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল হোসাইন, আইন বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সোহেল, সহযোগী অধ্যাপক রামেন্দু পারিয়াল, সুমন মজুমদার, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সভাপতি সুমন বড়ুয়া, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সিন্ডিকেট সদস্য নঈম উদ্দিন হাছান আওরঙ্গজেব চৌধুরী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শাহ আলম, ইতিহাস বিভাগের গোলাম কুদ্দুস লাবলু, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শাহরিয়ার বুলবুল তন্ময়, দর্শন বিভাগের নাসরিন আক্তার, ফার্মেসি বিভাগের রমিজ আহমেদ সুলতান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ইব্রাহিম খলিল আল হায়দার, অর্থনীতি বিভাগের কাজী মেজবাহ উদ্দিন আহমদ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের জয়া দত্ত উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইয়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়েও শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এমএ/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন