বিজ্ঞাপন

শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রভাবে ‘ছাত্রলীগে অস্থিরতা’— দাবি চবি ভিসির

February 18, 2024 | 8:27 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বেশকিছু দিন ধরে চলা শিক্ষকদের আন্দোলন ছাত্রলীগের কর্মীদের সংঘর্ষে জড়াতে প্রভাবিত করেছে বলে দাবি করেছেন উপাচার্য শিরীণ আখতার।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে চবির চারুকলা ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। এ সময় উপাচার্য শিরীণ আখতার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আন্দোলন, ছাত্রলীগের গ্রুপিং সংঘর্ষ ও অনিয়ম-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির আন্দোলন ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ নিয়ে অস্থিরতা লেগেই আছে, এ ব্যর্থতার দায় কার— সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে চবি উপাচার্য বলেন, ‘এ ব্যর্থতা আমার না। মানুষের চিন্তায় ভুল। ওরা মনে করেছে, এভাবে কিছু আদায় হবে। ছাত্রদের মধ্যে যে অস্থিরতা চলছে, সেটি শিক্ষক সমিতির আন্দোলন তাদের প্রভাবিত করেছে বলে আমি মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি এরকম অযৌক্তিক আন্দোলন না করলে ছাত্ররা এমন সাহস পেত না। আমাদের এখানে মডেল থানা হচ্ছে। থানা হয়ে গেলে আমাদের এখানে পুলিশ থাকবে। ছাত্রদের যে মারামারির কথা বলছেন, তা নিরসন করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে চবি উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেন, ‘চবি শিক্ষক সমিতির একাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপউপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে যে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে, তা দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে এবং সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ ধরনের কর্মসূচি করা হচ্ছে বলে দাবি করা হলেও সমিতির একাংশ এ ধরনের কর্মসূচি পালন করছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে শিক্ষক সমিতির একাংশ ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে চায়— এমন অভিযোগ করে উপাচার্য বলেন, ‘যদি কোনো অনিয়ম ঘটে থাকে, শিক্ষক সমিতির সিন্ডিকেটের কাছে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া যেকোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা পক্ষ চাইলে দেশের প্রচলিত আইন মোতাবেক আদালতের শরণাপন্নও হতে পারেন।’

‘তা না করে আমার কার্যালয় ঘেরাও করা এবং পরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার এবং উপউপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করা থেকে প্রতীয়মান হয় যে নিয়ম-অনিয়ম নয়, তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির মধ্য দিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করা।’

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর চবির আইন বিভাগের ও ১৮ ডিসেম্বর বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে সংক্রান্ত নির্বাচনি বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেই সভা বাতিলের দাবি জানাতে ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে উপাচার্যের কাছে যান চবি শিক্ষক সমিতির নেতারা। তারা আইন ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনি বোর্ড (নিয়োগ বোর্ড) সভা বাতিলের দাবিতে উপাচার্যকে চিঠি দেন।

ওই সময় উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির নেতাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে উপাচার্য কক্ষ ছেড়ে কনফারেন্স রুমে চলে যান। উপাচার্যের সঙ্গে কোনো আলোচনা না হওয়ায় ওই দিনই নির্বাচন বোর্ড বাতিলের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে শিক্ষক সমিতি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় তুলে ধরতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন চবি শিক্ষক সমিতির নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে ৫ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বাণিজ্য ও অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বেশকিছু পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেন, ‘আমার আমলে কোনো শিক্ষক নিয়োগে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট ও সেকেন্ড ছাড়া কাউকে নেইনি। অনিয়মের প্রমাণ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন পিওন হিসেবে যারা নিয়োগ পান, তাদের বেতন হয় ৯ হাজার টাকা। স্থায়ী হলে হয় সর্বসাকুল্যে ১৮ হাজার টাকা। প্রশাসন তাদের কাছ থেকে টাকা নেবে? আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই— এরকম অনিয়ম আমার জানামতে হয়নি। আমরাও তো করিনি। কেন যে এগুলো বলা হয়, আমি জানি না।’

বিজ্ঞাপন

ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বা কোনো চাপ আছে কি না— জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা চাইলেই ব্যবস্থা নিতে পারি না। আমাদের কিছু পর্ষদ আছে। সেগুলোর মাধ্যমে করতে হয়। আমরা তদন্ত কমিটি ছাড়া কোনো ছাত্রকে আটক করতে পারি না। আমাদের নিয়মে আছে। ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। পাঁচ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছি। রিপোর্টে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গত শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ছাত্রলীগের কয়েকটি পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এতে ছয়জন ছাত্রলীগের কর্মী গুরুতর আহত হন।

সংঘর্ষে জড়িতরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক ছাত্রলীগের উপগ্রুপ সিক্সটি নাইন ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ারের (সিএফসি) নেতাকর্মী। সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং সিএফসির নেতাকর্মীরা শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপচার্য বেনু কুমার দে, প্রক্টর নুরুল আজিম শিকদার ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ফরিদুল আলম।

সারাবাংলা/আইসি/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন