বিজ্ঞাপন

ভেনিস বাংলা স্কুল, ইতালিতে এক টুকরো বাংলাদেশ

March 5, 2024 | 3:21 pm

তানবীর সিদ্দিকী

অনেক বছর থেকেই ভেনিস বাংলা স্কুলের নাম জানি। এই স্কুলের কার্যক্রম সম্পর্কেও কিছুটা ধারনা ছিল। খুব আগ্রহ ছিল এই প্রতিষ্ঠানটি দেখার। তাই ভেনিসে যখন যাওয়ার সুযোগ হলো তখন প্রথমেই যাই এই প্রতিষ্ঠানে। ইতালির ভেনিসে বসবাসকারী অভিবাসী বাংলাদেশী প্রজন্মকে বাংলা ভাষা এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি শিক্ষা দেয়ার একটি প্রতিষ্ঠান ভেনিস বাংলা স্কুল। স্কুল কমিটির সভাপতি সৈয়দ কামরুল সরোয়ারের উদ্যোগে ১৯ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় এ স্কুল। প্রথমাবস্থায় স্কুলটির নিজস্ব কার্যালয় বা শ্রেণীকক্ষ ছিল না। বই ছিল না। শিক্ষক শিক্ষিকা ছিলেন না। অর্থের কোনও যোগানও ছিল না। এক কথায় বলা যায় চালচুলো ছিল না। তবু লেগে ছিলেন একদল উদ্যোমী মানুষ। পকেটের টাকা খরচ করে তারা স্কুল চালিয়েছেন। শ্রম আর সময় দিয়েছেন। আস্তে আস্তে বাড়িয়েছেন স্কুলের পরিধি।

বিজ্ঞাপন

এখন স্কুলের নিজস্ব কার্যালয় হয়েছে। শ্রেণীকক্ষ হয়েছে। নিয়মিত শতাধিক ছেলে-মেয়ে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশের সংস্কৃতি শিখছে। নিয়মিত বাংলাদেশ, ইতালিসহ আন্তর্জাতিক দিবসগুলো যথাযথভাবে পালন করছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ মানুষরা অতিথি হিসাবে যোগ দিচ্ছেন ওইসব অনুষ্ঠানে।

ভেনিস বাংলা স্কুল শুধু বাংলা ভাষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। যেসব ছেলে মেয়ে ইতালিয় স্কুলে যায় তাদের হোমওয়ার্ক করতে বিনামূল্যে সহযোগিতা করে বাংলা স্কুল। শিশুদের জন্য আরবি শিক্ষার কোর্স চালু করা হয়েছে। বয়স্কদের জন্য ইতালিয় ভাষার কোর্সও রয়েছে। গত প্রায় ১০ বছর ধরে ভেনিস বাংলা স্কুলের আয়োজনে মাসব্যাপী ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। ইতালির বিভিন্ন শহর থেকে ১৫টিরও বেশি দল টুর্নামেন্টে যোগ দেয়।

মজার বিষয় হলো, বাংলা স্কুলের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আগে এই অঞ্চলের মানুষ ক্রিকেটের সাথে খুব একটা পরিচিত ছিল না। বলা যায় বাংলা স্কুলের হাত ধরেই ভেনিস অঞ্চলের মানুষ ক্রিকেট খেলার সাথে পরিচিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলা স্কুলে পাঠদান করেন তিনজন শিক্ষিকা। তারা কোনও পারিশ্রমিক নেন না। শিশুদের নাচ গান শেখানোর শিক্ষক আছেন, তারাও কোনও খরচ নেন না। স্কুল পরিচালনার জন্য নির্বাহী কমিটি আছে। সবাইর সম্মিলিত সহযোগিতায় চলছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা সিলেবাস অনুযায়ী পাঠদান করা হয় ভেনিস বাংলা স্কুলে। প্রতি বছর সেই বই সংগ্রহ করতেও তাদের ব্যাপক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়।

আমাকে যখন আমন্ত্রণ জানানো হয় ভেনিস বাংলা স্কুলে তখন আমি আনন্দিত হই। কিছুটা ইমোশনালও হয়ে পড়ি। কমিউনিটির বিশিষ্ট মানুষ, সাংবাদিকসহ অনেকে ছিলেন সেখানে। তাদের সাথে কথা হয়, তাদের অনেক কথা শুনি। দেশের প্রতি তাদের অকৃত্তিম ভালোবাসার কথা, প্রত্যাশার কথা শুনি। স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী আর তাদের অভিভাবকদের সাথেও কথা হয়। তারা আমাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। ভেনিস বাংলা স্কুলের এত সুন্দর পরিবেশ আর গোছালো আয়োজনের জন্য আমি একদম প্রস্তুত ছিলাম না। আসলেই সুন্দর, অসাধারণ কাজ করছেন তারা।

প্রবাসে আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে দেশের দলীয় রাজনীতি চর্চা হয়। দেখা যায় নানাবিধ কোন্দল। ভেনিসেও নানা মতের ও আদর্শের মানুষ আছেন। এমন কী ভেনিস বাংলা স্কুলের পরিচালনা পরিষদেও নানা রাজনৈতিক মতের মানুষ আছেন। কিন্তু স্কুলের ব্যাপারে তারা সবাই একমত। প্রজন্মকে শেকড়ের সাথে ধরে রাখতে তাদের কোনও মতভিন্নতা সেই। কোনও রকমের রাজনৈতিক ধাক্কাধাক্কি নেই।

বিজ্ঞাপন

লেখক: সাংবাদিক

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন