বিজ্ঞাপন

ব্রাজিলীয় তরুণরা এখনো ইউরোপীয় ফুটবলের হট কেক

March 30, 2024 | 3:32 pm

মো. সাইফুল আলম তালুকদার

ব্রাজিলীয় তরুণরা এখনও ইউরোপীয় ফুটবলের হট কেক। যে কোনো ব্রাজিলিয়ান কিশোরের জন্য ফ্লামেঙ্গো, ফ্লুমিনেন্স, কোরিন্থিয়ানস বা সাও পাওলোর মতো বড় ক্লাবের প্রথম একাদশে সুযোগ পেলে তাদের জন্য ইউরোপীয় ফুটবলে জায়গা করে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়।

বিজ্ঞাপন

ব্রাজিল সবসময়ই তরুণ প্রতিভা বিকাশের উর্বর চারণভূমি হিসেবে পরিচিত। সে হাওয়ায় আরও বেশি গতি পায় যখন ইংলিশ লিগেও ব্রাজিল তাদের সেরা তরুণদের স্থান করে দিতে পারে। গত কয়েক বছরে, ইংলিশ টপ ফ্লাইটে খেলা ব্রাজিলিয়ানদের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৮ সালে যেখানে মাত্র ১২ জন ব্রাজিলীয় জায়গা করে নিয়েছিল, সেখান ২০২৩-২৪ মৌসুমে এই সংখ্যাটি বেড়ে ৩৪ জনে পৌঁছেছে।‌ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের সংখ্যা সেখানে মাত্র ১৫ জন। বিদেশি খেলোয়াড়ের সংখ্যায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ড, যাদের খেলোয়াড় সংখ্যা যথাক্রমে ২৮ এবং ২৭ জন।

স্প্যানিশ লা লিগাতে অবশ্য আর্জেন্টাইনদের আধিক্য বেশি। বিদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩১ জন আর্জেন্টাইনের বিপরীতে ব্রাজিলের খেলোয়াড় সংখ্যা ২২।‌ লা লিগাতে ফ্রান্সের খেলোয়াড় সংখ্যাও ২২ জন। ইতালিয়ান সিরি-এ তে শীর্ষস্থানে আছে ফ্রান্সের খেলোয়াড়, যাদের সংখ্যা ৪১ জন। ২৯ ও ২৩ জন ফুটবলার নিয়ে বিদেশিদের মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। জার্মান বুন্দেসলিগায় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় সংখ্যা মাত্র ৭ ও ২ জন। আর ফ্রান্সের লিগ ওয়ানে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের খেলোয়াড় খেলছে যথাক্রমে ৪ ও ৩ জন।

২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লিগে ১,২৮৭ জন ব্রাজিলীয় খেলেছেন।  দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ছিল ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনা, যাদের খেলোয়াড় সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৯৪৬ এবং ৭৮০ জন। তবে মজার ব্যাপার হলো, ফিফা প্রকাশিত ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রেজিস্টার্ড ফুটবলারের সংখ্যা ছিল মেক্সিকোতে, যাদের সংখ্যা ছিল ৯,৪৬৪ জন। ৮,৫৬০ জন নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল স্পেন এবং তৃতীয় স্থানে থাকা ইংল্যান্ডের খেলোয়াড় সংখ্যা ছিল ৫,৫৮২ জন। রেজিস্টার্ড ক্লাবের সংখ্যাতেও এগিয়ে ছিল মেক্সিকো। তাদের ক্লাব সংখ্যা ছিল ২৪৪টি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা তুরস্ক ও আর্জেন্টিনার ক্লাবের সংখ্যা ছিল ১৩৬ ও ১১৮টি।

বিজ্ঞাপন

ইংলিশ লিগে ব্রাজিলের তরুণরা কেউ সরাসরি ব্রাজিল থেকে এসেছে অথবা কেউ অন্য কোনো ইউরোপীয় ক্লাব থেকে। ট্রান্সফার মার্কেটের মতে, এদের গড় বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর। আর গড়ে এদের পেছনে খরচ করতে হয়েছে প্রায় ২০ মিলিয়ন পাউন্ড।

২০-২১ বছর বয়সী সেরা ব্রাজিলিয়ান তরুণরা ইউরোপের শীর্ষ পাঁচটি লিগে জায়গা করে নিচ্ছে।‌ তার কারণও রয়েছে।‌ ইউরোপের এজেন্টরা সারা বছরই দক্ষিণ আমেরিকায় পড়ে থাকেন, বিশেষ করে ব্রাজিলে। এজেন্টরা তরুণ খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া কিভাবে সামলাতে হবে তার দীক্ষাও দিয়ে থাকেন।

২২ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্রাজিলীয় খেলোয়াড়রা সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মতো বিকল্প বাজারে যাচ্ছে- বিশেষ করে সৌদি আরব, আমিরাত এবং কাতারের মতো ধনী দেশগুলো তাদের গন্তব্য। আর কিছু যাচ্ছে তুরস্ক, রাশিয়া, ইউক্রেন,‌ মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়ান দেশগুলোতে। তবে এরা কিন্তু ব্রাজিলের সেরা তরুণ প্রতিভা নয়। এরা রয়েছে ঠিক তার পরবর্তী ধাপে। শীর্ষ তরুণ প্রতিভারা ঠিকই ইউরোপের সেরা পাঁচটি লিগে জায়গা করে নিচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তবে ইংলিশ লিগে ব্রাজিলের সেরা তরুণদের আগমন বেড়ে যাচ্ছে, কারণ গত বছর থেকে তাদের ফুটবল ফেডারেশন ক্লাবগুলোকে বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে কমপক্ষে দুই জন ওয়াইল্ড কার্ড খেলোয়াড় সই করার অনুমতি দিয়েছে৷। ফলে তরুণদের ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করার মতো জটিলতায় পড়তে হচ্ছে না। অন্যদিকে ক্লাবগুলো ধনী না হলেও ঠিকই সেরা তরুণদের সার্ভিস পেতে সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আর এই ফাঁকে কপাল খুলছে ব্রাজিলীয় তরুণদের।

ব্রাজিলিয়ান ফুটবল নিজেই একটি বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের ঘরোয়া লিগকে শক্তিশালী করতে ২০২১ সাল থেকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করেছে। ম্যানচেস্টার সিটির আবুধাবির মালিক সালভাদরভিত্তিক এসপোর্টে ক্লাব বাহিয়াকে কিনেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইকুইটি ভিত্তিক কোম্পানি ৭৭৭ পার্টনার কিনেছে রিও ডি জেনেইরোর ভাস্কো দা গামাকে। ফলে ভাস্কোর খেলোয়াড়রা এখন অনায়াসেই এভারটনে যোগ দিতে পারবেন। কারণ ৭৭৭ পার্টনার ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ-ইরানিয়ান বিলিয়নিয়ার ফরহাদ মোশিরির কাছ থেকে এভারটনকে পুরোপুরি কিনে নিয়েছে। এছাড়া মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা জন টেক্সটর বোটাফোগোকে কিনেছেন। আর অনেক আগে থেকেই ব্রাজিলের কিংবদন্তি রোনালদো তার জীবনের প্রথম ক্লাব ক্রুজেইরোর মালিক।

তবে ব্রাজিলিয়ান লিগে এখনও দৈন্যদশা চলছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ যেমন তার সম্প্রচার আয়ের ৫০ শতাংশ বিদেশ থেকে সংগ্রহ করে, সেখানে বর্তমানে ব্রাজিলিয়ান লিগের টিভি আয়ের মাত্র ২ শতাংশ আসে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে তাদের দেশের ক্লাবগুলোতে নানা রকম রাজনৈতিক সংঘাত লেগেই রয়েছে। যার কারণে দুর্নীতি এবং কেলেঙ্কারিতে লিগটি কলঙ্কিত হচ্ছে। গত মৌসুমে বোটাফোগোর নতুন মালিক টেক্সটর পালমেইরাসের কাছে ৪-৩ ব্যবধানে হারের পর ম্যাচ রেফারিদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনেছিলেন। তিনি খেদোক্তি করে বলেছিলেন, এই চ্যাম্পিয়নশিপ একটি তামাশায় পরিণত হয়ে গেছে।

তরুণ খেলোয়াড়দের কম দামে শুরুতেই ইউরোপীয় ক্লাবগুলোতে বিক্রি করে দিচ্ছে ব্রাজিলের ক্লাবগুলো। কারণ বেশিরভাগ ব্রাজিলীয় ক্লাবই দায় দেনায় ডুবে আছে। আর খেলোয়াড়রাও ইউরোপ বা বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাতে আগ্রহী কারণ তাদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছে। তাই ১৯-২০ বছর বয়সী খেলোয়াড়রা নিজেদের পরিবারকে দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে বাঁচাতে দেশ ছাড়ছেন অতি দ্রুত। যার কারণে অনেকেই পূর্ণাঙ্গ খেলোয়াড় হঅয়্যার আগেই শুধুমাত্র নিজের প্রতিভাকে পুঁজি করে ব্রাজিলিয়ান সিরি-এ বা কোপা লিবার্তাদোরেসের পরিবর্তে প্রিমিয়ার লিগ বা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো বড় আসরে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আইই

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন