বিজ্ঞাপন

আন্দোলনের মুখে অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা

April 25, 2024 | 5:22 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বাসের ধাক্কায় দুই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্রদের বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে এবং ছাত্রীদের শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে হলত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল চারটার দিকে চুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

চুয়েটের জনসংযোগ কর্মকর্তা রাশেদ পারভেজ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত চুয়েটের একাডেমিক কাউন্সিলের ১৫১ তম জরুরি সভায় পরীক্ষাসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সকল একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকাল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য রফিকুল আলম।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার খবরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ঘোষণার পরপরই চুয়েটের মূল ফটকের সামনে একটি বাসে আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের ভেতরে মিছিল চলছে। এছাড়া সকাল থেকে চুয়েটের মূল ফটকের সামনে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আসছেন তারা। চুয়েট বন্ধ ঘোষণার পরও অবরোধ অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

গত সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের জিয়ানগর এলাকায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাস মোটর সাইকেলকে ধাক্কা দেয়। মোটর সাইকেলে আরোহী হিসেবে চুয়েটের তিন শিক্ষার্থী ছিলেন। এদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই শান্ত সাহা (২০) ও তৌফিক হোসেন (২১) নামে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। শান্ত চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ২০ ব্যাচের ও তৌফিক ২১ ব্যাচের ছাত্র। একই ঘটনায় জাকারিয়া হিমু আরেকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।

দুর্ঘটনায় দুই সহপাঠীর মৃত্যুর খবরে সোমবার বিকেলেই চুয়েট ক্যাম্পাস থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। রাতে ক্যাম্পাসের সামনের সড়কে একটি বাসে আগুনও দেন বিক্ষুব্ধশিক্ষার্থীরা। এরপর মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দিনভর চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন চুয়েটের উপাচার্য রফিকুল আলম। দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে ক্যাম্পাসে ফিরে যান।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু পরদিন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে আবারও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ২টায় শিক্ষার্থীরা সড়কে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে কাপ্তাই সড়কে এবি ট্রাভেলস এবং শাহ আমানত পরিবহনের বাসের রুট পারমিট বাতিল করা, আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ৫টি বাস ও ৪টি অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বাস মালিক সমিতি নিহত শিক্ষার্থীদের দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার যে ঘোষণা, সেটি প্রত্যাখান করা হয়।

উল্লেখ্য, চুয়েটের নিহত দুই শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এছাড়া বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে দুই লাখ করে মোট চার লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

শিক্ষার্থীদের এসব দাবি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপের ঘোষণা না আসায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কাপ্তাই সড়কে গাছ ফেলে চতুর্থ দিনের মতো অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ওই সড়কে সকাল থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হন কয়েক’শ শিক্ষার্থী। তারা স্লোগান দিতে দিতে চুয়েটের ১২টি বিভাগে গিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে অনেক বিভাগে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আটকা পড়েন।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টা থেকে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বসে চুয়েট কর্তৃপক্ষ। সভা শেষে চুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন