বিজ্ঞাপন

বন্ধের সিদ্ধান্ত মানছে না শিক্ষার্থীরা, চুয়েটে বিক্ষোভ চলছে

April 25, 2024 | 9:26 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও হলত্যাগের নির্দেশ প্রত্যাখান করে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার ওই ভবনে প্রায় দু’ঘণ্টা আটকে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে রাত পৌনে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দল।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে চুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দুপুরে অনুষ্ঠিত চুয়েটের একাডেমিক কাউন্সিলের ১৫১তম জরুরি সভায় পরীক্ষাসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সকল একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকাল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ছাত্রদের বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে এবং ছাত্রীদের শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য রফিকুল আলম।

জানা গেছে, এ ঘোষণার পর টানা চারদিন ধরে আন্দোলন করে আসা শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বরে থাকা ও মূল ফটকে রাখা শাহ আমানত পরিবহনের দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন তারা।

বিজ্ঞাপন

হলত্যাগের নির্দেশের প্রতিবাদ জানিয়ে ছাত্রীদের অনেকেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার ওই ভবনে অবস্থান করছিলেন। তারা সেখানেই আটকে থাকেন। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ চুয়েটের মূল ফটকের সামনে অবস্থান অব্যাহত রাখেন। তারা মূল ফটক দিয়ে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছেন। ক্যাম্পাস জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বিকেল সোয়া ৫টার দিকে মূল ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে আসেন। এতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা এবং হলত্যাগের নির্দেশ আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে আলোচনায় না বসে নিজেদের দায় এড়ানোর জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে হলত্যাগে বাধ্য হন, সেজন্য হলের বিদ্যুৎ ও পানির লাইন কেটে দিয়েছে। ওয়াইফাই সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে।’

‘কিন্তু আমরা শিক্ষার্থীরা কেউই হলত্যাগ করব না। এ প্রতিষ্ঠান শুধু শিক্ষকদের নয়, এটা শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস। মূল গেট এবং পকেট গেট আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা ক্যাম্পাস থেকে কাউকে বের হতে দেব না’ – বলেন আশিকুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

চুয়েটের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক ফজলুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিছুক্ষণ পরেই সেটা আবার খুলে দেওয়া হয়। এখন প্রশাসনিক ভবনে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে। তবে মূল গেটে কিছু ছাত্র এখনও আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।’

গত সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের জিয়ানগর এলাকায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাস মোটর সাইকেলকে ধাক্কা দেয়। মোটর সাইকেলে আরোহী হিসেবে চুয়েটের তিন শিক্ষার্থী ছিলেন। এদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই শান্ত সাহা (২০) ও তৌফিক হোসেন (২১) নামে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। শান্ত চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ২০ ব্যাচের ও তৌফিক ২১ ব্যাচের ছাত্র। একই ঘটনায় জাকারিয়া হিমু আরেকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। বুধবার ঘাতক বাসের চালককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

দুর্ঘটনায় দুই সহপাঠীর মৃত্যুর খবরে সোমবার বিকেলেই চুয়েট ক্যাম্পাস থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। রাতে ক্যাম্পাসের সামনের সড়কে একটি বাসে আগুনও দেন বিক্ষুব্ধশিক্ষার্থীরা। এর পর মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দিনভর চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন চুয়েটের উপাচার্য রফিকুল আলম। দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে ক্যাম্পাসে ফিরে যান।

কিন্তু পরদিন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে আবারও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ২টায় শিক্ষার্থীরা সড়কে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে কাপ্তাই সড়কে এবি ট্রাভেলস এবং শাহ আমানত পরিবহনের বাসের রুট পারমিট বাতিল করা, আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাঁচটি বাস ও চারটি অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বাস মালিক সমিতি নিহত শিক্ষার্থীদের দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার যে ঘোষণা, সেটি প্রত্যাখান করা হয়।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, চুয়েটের নিহত দুই শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া, বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে দুই লাখ করে মোট চার লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

শিক্ষার্থীদের এসব দাবি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপের ঘোষণা না আসায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কাপ্তাই সড়কে গাছ ফেলে চতুর্থ দিনের মতো অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ওই সড়কে সকাল থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এর আগে, বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হন কয়েক’শ শিক্ষার্থী। তারা স্লোগান দিতে দিতে চুয়েটের ১২টি বিভাগে গিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে অনেক বিভাগে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আটকা পড়েন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টা থেকে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বসে চুয়েট কর্তৃপক্ষ। সভা শেষে চুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন