বিজ্ঞাপন

কেমন ছিল তারকাদের প্রথম বিশ্বকাপ স্মৃতি?

June 6, 2018 | 1:22 pm

সারাবাংলা ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮ তে মাঠে খেলবেন তারা। তাদের ক্রীড়ানৈপুন্যেই স্মরণীয় হবে এবারের বিশ্বকাপ। কিন্তু পেশাদার ফুটবলার হওয়ার আগে, তারা ছিলেন আমাদের মতো শুধুই ফুটবল ভক্ত। বিশ্বকাপ নিয়ে তাদেরও আছে প্রথম স্মৃতি। কারও সুখের কারও বা দুঃখের। আসুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্বকাপ নিয়ে আজকের তারকা ফুটবলারদের প্রথম স্মৃতি কেমন ছিল।

লুকা মড্রিচ: ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার। ক্লাব ফুটবলে রিয়াল মাদ্রিদে খেলছেন। বিশ্বকাপ স্মৃতি নিয়ে তিনি জানিয়েছেন তার প্রথম স্মৃতি, একইসাথে সুখের ও বেদনার।

‘আমার বয়স তখন ১৩ বছর (ফ্রান্স বিশ্বকাপ ১৯৯৮)। সেই বিশ্বকাপ আমি আমার নিজের শহর জাডারে থেকে বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখেছিলাম। ক্রোয়েশিয়ার প্রত্যেক জয়ের পরই আমাদের আনন্দ বাড়তেই থাকে। আমরা উপলব্ধি করছিলাম, এটা শুধু খেলাই নয়, একই সাথে সমস্ত পৃথিবী ক্রোয়েশিয়া সম্পর্কে জানার এক মাধ্যম। আমি আসলে তখনই স্বপ্ন দেখা শুরু করি, একদিন সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবল খেলব। এটা অসাধারণ ছিল। আমার এখনও মনে আছে আমরা ফ্রান্সের কাছে হারার পর খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা যখন নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েছিলাম তখন বাঁধভাঙ্গা আনন্দ ভাসছিল দেশ। এটা ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সাফল্য।’

বিজ্ঞাপন

থিয়াগো আলকান্তারা: স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। খেলেন জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখে। ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত হলেও স্পেনের নাগরিকত্ব নিয়ে স্পেনের হয়েই আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলছেন তিনি।

‘বিশ্বকাপ নিয়ে আমার প্রথম স্মৃতি ১৯৯৪ বিশ্বকাপে। যে বিশ্বকাপটি আমার বাবা (মাজিনহো) ব্রাজিলের হয়ে জিতেছিলেন। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ৩ বছর। তাই ম্যাচগুলোর কথা আমার মনে নেই তবে আমার মনে আছে যে, বিশ্বকাপ শেষে বাবার বাড়িতে ফেরার ঘটনা, বিশ্বকাপ জয়ের উদযাপন ইত্যাদি। উদযাপনের সময় আমাদের সমস্ত পরিবার সেখানে ছিল। এই স্মৃতি আমার পরিষ্কার মনে আছে। বিশ্বকাপে আরেকটি ঘটনা আমার খুব মনে পড়ে, ২০১০ সালে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার গোলের কথা। এটা স্প্যানিশ ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। আমরা তখন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে ছিলাম। আন্দ্রেস যখন গোল করলো তখন আমাদের এখানে এমন অবস্থা হয়েছিল যে ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার চালু হয়ে গিয়েছিল। উন্মাদনায় টেলিভিশন ভেঙে ফ্লোরে পড়েছিল।’

গ্যাব্রিয়েল জেসুস: ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার। ইংল্যান্ডের ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিতে খেলেন। ব্রাজিলের আক্রমণভাগের মূল দায়িত্ব তার ওপর অর্থাৎ গোল করার কাজটা সবচেয়ে বেশি তাকেই করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

‘গত তিন বিশ্বকাপ ধরে আমি বিশ্বকাপ উদযাপনের জন্য পাড়ার রাস্তায় পেইন্ট করতাম, এটা আমাদের পাড়ায় প্রায় অবশ্যকর্তব্য এক রীতিতে পরিণত হয়েছে। আশা করি আমি রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলতে পারব এবং বিশ্বকাপ আমাকে যত আনন্দ দিয়েছে তার কিছুটা পরিশোধ করব।’

রাদামেল ফ্যালকাও: কলম্বিয়ান স্ট্রাইকার। ফরাসি লীগ ওয়ান এর এএস মোনাকোতে খেলছেন। ৩২ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার দলটির সবচেয়ে অভিজ্ঞদের একজন। তার পা জোড়ার উপর নির্ভর করবে এবারের বিশ্বকাপে কলম্বিয়া কতদূর যেতে পারবে।

‘আমার প্রথম বিশ্বকাপ স্মৃতি? ১৯৯০ ইতালি বিশ্বকাপে জার্মানির বিপক্ষে ফ্রেডি রিনকন এর গোল। আমার বয়স তখন ৪ বছর। কলম্বিয়ার প্রত্যেকেই সেই গোলটি উদযাপন করেছিল, তাই এ স্মৃতিটি আমার ভালোভাবেই মনে আছে। প্রকৃতপক্ষে সেই গোলটি ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত আমি বারবার স্মরন করেছি।’

জাভিয়ের হারনান্দেজ: মেক্সিকান স্ট্রাইকার। ডাকনাম চিচারিতো। এই নামেই তাকে চেনে ফুটবল বিশ্ব। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদের মতো বড় বড় ক্লাবে খেলেছেন। এখন খেলছেন ইংলিশ ক্লাব ওয়েস্টহামে। মেক্সিকোর স্কোয়াডে সবচেয়ে অভিজ্ঞদের একজন। তার অভিজ্ঞতা মেক্সিকোর জন্য বিশ্বকাপে এক বড় সম্পদ হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

‘আমার প্রথম বিশ্বকাপ স্মৃতি ১৯৯৮ এ। ফুটবলে আমার সবচেয়ে বড় আইডল ব্রাজিলের রোনালডো সে বিশ্বকাপে খেলছিলেন। ম্যাচগুলোর সময়সূচির কারণে মাঝেমাঝে আমি স্কুলে দ্রুত ক্লাস শেষ করে বাড়িতে দৌড়ে আসতাম যাতে আমি তার খেলা দেখতে পারি।’

হ্যারি কেইন: ইংলিশ স্ট্রাইকার। টটেনহামের হয়ে অসাধারণ সময় কাটছে। ইংল্যান্ড দলের আক্রমণভাগের প্রাণভোমরা তিনিই। অতীতে যারাই ইংল্যান্ড দলের মূল খেলোয়াড়ের তকমা পেতেন তাদের নিয়ে অনেক আলোচনা হতো ইংলিশ মিডিয়ায়। সেই চাপেই ভেঙে পড়তেন বাঘা বাঘা ইংলিশ ফুটবলার। এবার হ্যারি কেইনের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। তিনি জানালেন বিশ্বকাপে তার প্রথম স্মৃতি তাকে এখনো পীড়া দেয়।

‘আমার মনে আছে ২০০২ সালের বিশ্বকাপ, সেখানে ব্রাজিলের রোনালদিনহো গোলবারের কোণা দিয়ে ঐ ফ্রি-কিকটা নিয়েছিল (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে)। এটা এখনও আমাকে পীড়া দেয়! এটাই ছিল বিশ্বকাপ নিয়ে আমার প্রথম স্মৃতি।’

জুলিয়ান ড্রাক্সলার: জার্মান মিডিফিল্ডার। প্যারিস সেইন্ট জারমেইনের মিডিফিল্ডে খেলেন। জার্মান দলের তরুণ তুর্কিদের মধ্যে অন্যতম তিনি। জার্মান মেশিনের একজন অন্যতম ইঞ্জিন। শোয়েন্সটাইগার, ফিলিপ লাম এর মতো মিডফিল্ডার অবসর নেয়ার পর জার্মানির জন্য ড্রাক্সলার একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।

‘প্রথম স্মৃতি খুব স্পষ্টভাবে মনে পড়ে যে বিশ্বকাপের তা হলো ২০০৬ সালের। ২০০২ সালে আমি খুব ছোট ছিলাম, কিন্তু ২০০৬ বিশ্বকাপ এখানে জার্মানিতেই হয়েছিল এবং আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা সে বিশ্বকাপের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছিলাম। ঐ জার্মান দলটি সারা দেশকেই উত্তেজিত করে তুলেছিলো।’

নেইমার: ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। নেইমার সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলার প্রয়োজন নেই। মেসি-রোনালদোর পরে তাকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি উন্মাদনা হয়। নেইমার ব্রাজিলের জন্য কি তা ওয়াকিবহাল মহল জানেন। খেলেন প্যারিস সেইন্ট জারমেইনে। বিশ্বকাপের আগে লম্বা সময় ইনজুরিতে ভুগেছেন। তবে ফিট হয়ে খেলা প্রথম ম্যাচেই গোল করে জানিয়ে দিয়েছেন, চিন্তার কারণ নেই। তিনি প্রস্তুত।

‘আমার প্রথম স্মৃতি ১৯৯৪ বিশ্বকাপের। যদিও আমার বয়স তখন মাত্র ২ বছর, তবে আমার মনে হয় আমার প্রথম স্মৃতি ছিল টিভিতে খেলা দেখা ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে রোমারিওর গোলটি দেখা। আমার মনে পড়ে বেবেতোর সেই ক্রসটি, রোমারিও সেটা রিসিভ করেন এবং গোল করেন।’

পল পগবা: ফরাসি মিডফিল্ডার। ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মাঝমাঠের সেনাপতি। বয়সে তরুণ, তবে ফ্রান্সের প্রধান ভরসা। মিডফিল্ডে প্রভাব বিস্তার করে খেলেন। এবারের বিশ্বকাপে তরুণ নির্ভর ফ্রান্সের অসাধারণ দলটি পগবার মতো খেলোয়াড়ের কারণে আরও ধারালো হয়েছে।

‘আমার মনে আছে ফ্রান্স ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে ৩-০ তে জিতেছিল। তখন আমার বয়স হয়ত ৬ বা ৭ বছর ছিল। আমরা সবাই বাইরে বেরিয়ে পড়ি এবং গাড়ির ছাদে উঠে যাই। সেখানে হুইশেল বাজছিল। সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল।’

সারাবাংলা/আইই/এমআরপি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন