বিজ্ঞাপন

মনোনয়নপত্র বাতিলে ইসির পরিপত্র মানায় গড়িমসির অভিযোগ

December 5, 2018 | 1:41 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেক রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা আমলে নেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক অনেক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে।

সূত্র জানাচ্ছে, অনেক আসনে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ঘষামাজা, ফ্লুইড ব্যবহার, স্বাক্ষরে সামান্য হেরফের কিংবা কাগজপত্রে সামান্য ক্রুটির কারণ দেখিয়ে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। যা প্রয়োজন ছিলো না।

রিটানিং কর্মকর্তাদের এই আচররণে নির্বাচন কমিশন বিব্রত বলেই সূত্র জানিয়েছে। বলা হচ্ছে এটি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ইসি’র পাঠানো পরিপত্রেরও লঙ্ঘন।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, গত ১০ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে একটি পরিপত্র জারি কর হয়। ওই পরিপত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘ছোটখাটো ত্রুটির জন্য কোন মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে না। যদি বাছাইয়ের সময় এমন কোন ত্রুটি বিচ্যুতি নজরে আসে যা তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধন সম্ভব, তা হলে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীর দ্বারা সেটি সংশোধন করিয়ে নিতে হবে।’

ইসির এই নির্দেশনা সত্ত্বেও অনেক প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর নেই, টিপসই নেই, স্ট্যাম্প সংযোজন করা হয়নি এসব কারণ দেখিয়ে মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এইসব ত্রুটি প্রার্থীর উপস্থিতিতে তাৎক্ষণিক সমাধান করার কথা পরিপত্রে বলা হলেও মনোনয়নপত্র বাছাইকালে তা মানা হয়নি।

এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার বিরুদ্ধে যারা আপিল করেছেন তাদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হবে না। আমরা যা কিছু করব, তা আইনানুগভাবেই আমাদের করতে হবে। কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব আমরা অবশ্যই দেখাব না। প্রতিটি কেসেরই (আপিল) মেরিট আমরা দেখব। আমি যেটা মনে করি, নির্বাচন কমিশন সব ব্যাপারেই একটা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে।’

বিজ্ঞাপন

নির্বাচন কমিশনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো তালিকায় দেখা গেছে-বাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তার মনোনয়নপত্র বাতিল করার কারণ হিসেবে জেলা প্রশাসক তথা রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন-রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে প্রার্থী ঘষামাজা করেছেন। যেটি তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা যেতো।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জেসমীন নুর বেবীকে ২০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প সংযোজন না করার কারণ দেখিয়ে বাতিল করা হয়েছে। যা তাৎক্ষণিকভাবে চেয়ে নেওয়া যেতো। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র প্রার্থী কেএম জাবিরকে আয়কর রিটার্নের ফটোকপি ও সার্টিফায়েড কপি জমা না দেওয়ায় বাতিল করা হয়েছে যা বাধ্যতামূলক ছিলো না।

খেলাপি ঋণে প্রার্থিতা বাতিল হলেও কর ফাঁকিতে নয়

টাঙ্গাইল-৮ আসনের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রার্থী আব্দুল লতিফ মিয়ার মনোনয়নপত্রটি দলের মনোনয়নপত্রে নিজের নাম ও আসন নম্বর ফ্লুইড দিয়ে মুছে পরিবর্তনের কারণে দেখিয়ে বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এটিও ছিলো সহজেই সমাধান যোগ্য।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে ইসির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, মনোনয়নপত্র বাতিলের ক্ষেত্রে অনেক রিটার্নিং কর্মকর্তা সঠিক আচরণ করেননি। কেননা, ছোটখাটো ভুলের জন্য কারো মনোনয়নপত্র বাতিল না করে প্রার্থীকে ডেকে এনে সংশোধন করিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তারা কেনা সেটি করতে পারেননি।

প্রার্থীরা আপিল করলে রিটার্নিং কর্মকর্তার মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত টিকবে না বলেও মত অনেক কর্মকর্তার।

গত ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে ২ হাজার ২৭৯টি মনোনয়নপত্র বৈধ ও ৭৮৬টি অবৈধ বলে ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এগুলোর মধ্যে বিএনপির ১৪১টি, আওয়ামী লীগের ৩টি এবং জাতীয় পার্টির ৩৮টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ৩৮৪টি। ইতিমধ্যে ৩১৮ জন প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল দায়ের করেছেন।

বুধবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টা পর্যন্ত আপিল আবেদন নেওয়া হবে। ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বর শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করবে  নির্বাচন কমিশন। এর আগে ৩৯টি দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে এবার  ৩০৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিল। এর মধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা পড়ে মোট ২ হাজার ৫৬৭টি ও স্বতন্ত্র ৪৯৮টি।

সারাবাংলা/জিএস/এসএমএন/এমএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন