বিজ্ঞাপন

‘নদীখেকো ভূমিদস্যুদের ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন’

March 16, 2018 | 6:49 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (১৬ মার্চ) লালবাগের হাজারীবাগ খেলার মাঠের সামনে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। সমাবেশে নদীপ্রেমী পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর নেতারা ‘নদীখেকো ভূমিদস্যু’দের কবল থেকে আদি বুড়িগঙ্গাসহ বাংলাদেশের সকল নদ-নদী দখল ও দুষণমুক্ত করতে সরকার এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় বক্তারা এইসব ভূমিদস্যুদের ভোট দেওয়া থেকে বিরত খেকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করারও আহ্বান জানান।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, কয়েক শ’ বছর আগে ঢাকাকে যখন রাজধানী হিসেবে নির্বাচন করা হয়, তখন বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু এই চার নদীকে বিশেষ বিবেচনায় রাখা হয়েছিল। ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ধারাবাহিকতায় ঢাকার জনপদকে সুজলা-সুফলা এবং সুরক্ষিত নাগরিক সভ্যতা গড়ে ওঠার মূলে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর প্রবাহই প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এসব নদীর সুপেয় ও স্বচ্ছ পানি সেচ, বাণিজ্যিক পরিবহন এবং মৎস্যের উৎস হিসেবে যুগ যুগ ধরে মানুষের চাহিদা পূরণ করে এসেছে। অথচ মাত্র কয়েক দশকের ব্যবধানে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো সব উপযোগিতাই হারিয়ে ফেলেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে এসব নদী তার স্বাভাবিক গুণাগুণ হারিয়ে ফেলেছে।

তারা বলেন, মোগলরা রাজধানী ঢাকার গোড়াপত্তন করেছিল ঢাকার মধ্য দিয়ে বয়ে চলা শতাধিক খাল এবং এর চারপাশে বহমান নদী চারটিকে কেন্দ্র করে। এসব খাল এবং নদীই ছিল রাজধানী ঢাকার পরিবহন ও যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু ধীরে ধীরে আধুনিকতা ও উন্নয়নের নামে বিলীন করে দেওয়া হয়েছে ঢাকা শহরের প্রাণ স্বরূপ এসব খাল এবং নদীর অস্তিত্ব।মানুষের নানা অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ড নষ্ট করেছে নদীগুলোর সঙ্গে খালগুলোর সম্পর্ক। উন্নয়নের নামে নদী এবং খাল ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন, ব্রিজ, রাস্তা, কালভার্ট, ড্রেন, উপাসনালয়। এতে নদী দূষিত হয়ে জলজ-জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বক্তারা বলেন, ঢাকা শহরের পানির চাহিদা পূরণের উৎস হওয়ার কথা ছিল বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীসহ ঢাকার অভ্যন্তরীণ খালগুলো। কিন্তু দখল-দূষণের  কারণে এসব নদীর পানি ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন শত শত টন শিল্প-কারখানার তরল রাসায়নিক বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে ঢাকা শহরের পানির চাহিদা পূরণের জন্য নির্ভরশীল হতে হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর। ঢাকায় এখন যে হারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে, কয়েক বছর পরে আর তা সম্ভব হবে না। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর এবং মাটি ও পানির স্তরের মধ্যে বিরাট ফাঁকা জায়গা তৈরি হচ্ছে। ফলে যেকোনো সময় সামান্য ভূমিকম্পেই ঢাকা শহর দেবে যেতে পারে। তাই  ভূগর্ভস্থ  পানির ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমিয়ে নদী-খালগুলো পুনরায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে এখনই।

পরিবেশবাদীরা আরও বলেন, বর্তমানে ঢাকা শহরের অন্যতম সমস্যা জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারত। সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, শুধু ড্রেনেজ সিস্টেমের মাধ্যমে এই জলাবদ্ধতার সমাধান সম্ভব নয়। এই সমস্যা সমাধান করতে হলে ঢাকার নদী ও খালগুলোকে সচল করতে হবে অন্যথায় ঢাকার অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়বে।

বিজ্ঞাপন

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন— পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম, নোঙর-এর সভাপতি সুমন শামস, সচেতন নগরবাসী সংগঠন-এর সভাপতি রোস্তম খান, স্বপ্নের সিঁড়ি সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি উম্মে সালমা, কবি বাঙ্গাল আবু সাঈদ স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান আলাল, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক হোসেন, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুস, স্বচ্ছ ফাউন্ডেশন-এর মহাসচিব আশরাফুল আলম, সোস্যাল লিংক ফর হিউম্যান রাইটস-এর সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, আইনজীবী আজাদী আকাশ, অদম্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি আইরিন আক্তার, নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের মোহাম্মদ শাহিন, জন অধিকার ফাউন্ডেশনের  জাহাঙ্গীর হোসেন, সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন, সাংবাদিক ইলিয়াস আহম্মেদ, খাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আব্দুল্লাহ প্রমুখ।

মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে আদি বুড়িগঙ্গা নদীর মৃতদশা পরিদর্শনের জন্য একটি পদযাত্রা নদীটির কাছে গিয়ে মুমূর্ষ নদীর পর্যবেক্ষণ করা হয়।

সারাবাংলা/জেআইএল/আইজেকে

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন