বিজ্ঞাপন

বৈশ্বিকভাবে কমলেও বাংলাদেশে বাড়ছে এইচআইভি সংক্রমণের হার

December 1, 2018 | 9:05 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নতুন করে চলতি বছরে এইচআইভিতে সংক্রমিত হয়েছেন ৮৬৯ জন আর গত এক বছরে এ রোগে মারা গেছেন ১৪৮ জন। ১৯৮৯ সালে প্রথম এইচআইভি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হবার পর এ পর্যন্ত মোট ডায়াগনোসিস হওয়া রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৪৫৫ জন।

আজ শনিবার (১ ডিসেম্বর) বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়, বৈশ্বিকভাবে এইচআইভি সংক্রমণ কমছে, তবে বাংলাদেশে আক্রান্তের হার বাড়ছে। সরকারের জাতীয় এইডস-এসটিডি কর্মসূচি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব জি এম সালেহ উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে এইচআইভি-এইডস নির্মূলের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, বাংলাদেশ তা অর্জন করতে সক্ষম হবে।’

আমরা দেশ থেকে ইতোমধ্যে ম্যালেরিয়া, টিবি নির্মূল করতে পেরেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক রোগ পরাজিত করতে পেরেছি, এইডসকেও পরাজিত করতে সক্ষম হবো।’

বিজ্ঞাপন

এইডসকে ঘাতক উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদকগ্রহণ করার মাধ্যমে এ ঘাতক ছড়ায়। আমাদেরকে শেষ করে দিচ্ছে এই রোগ। ড্রাগ অ্যাডিক্টেড যারা রয়েছেন তারাই শিরায় মাদক নেওয়ার মাধ্যমে এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।’

‘তাই মাদক থেকে যুবসমাজকে দূরে রাখতে হবে, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে আর এ কাজে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এই কাজে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে একত্রিত করে কাজ করতে হব’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগে এইডস রোগীদের চিহ্নিত করা যেত না কিন্তু এখন চিহ্নিত করা যাচ্ছে বলেই ধরা পরছে জেলা পর্যায়ে অনেক জায়গায় এইডস ছড়িয়ে গিয়েছে, রোগী সর্ম্পকে জানা যাচ্ছে। যখন চিহ্নিত করতে পেরেছি, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারছি তাহলে কেন নির্মূল করতে পারবো না নির্ধারিত সময়ের মধ্যে, কেন পরাজিত করতে পারবো না?’

আমাদের দেশে ধর্মীয় অনুশাসনে বিশ্বাস করি, কিন্তু পারিবারিক বন্ধন যদি দৃঢ় করতে না পারি এবং কুসংস্কার রোধ করতে না পারি—তাহলে এইডস ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাবে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাবধান থাকতে হবে। সাংবাদিক, চিকিৎসক, সমাজকর্মী, শিক্ষক সবাইকে এ নিয়ে কাজ করতে হবে, এ রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইউনিট, পঙ্গু হাসপাতালের বর্ধিতভবনসহ গত কয়েক মাসে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করে স্বাস্থ্যখাতে অনেক স্থাপনা উদ্বোধণ করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এইচআইভি এইডস নিয়ে লজ্জার কিছু নেই। রক্তের অন্য পরীক্ষার মতোই এইচআইভি পরীক্ষা করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে এইচআইভি-এইডসের সর্বশেষ পরিস্থিতি উপস্থাপন করেন জাতীয় এইডস-এসটিডি কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম। তিনি জানান, গত ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত দেশে মোট ৮৬৯ জন নতুন করে এইচআইভি সংক্রমিত মানুষ শনাক্ত হয়েছে আর এই সময়ে মারা গিয়েছে ১৪৮ জন।

১৯৮৯ সালে প্রথম দেশে এইডস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় এবং এরপর থেকে দেশে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৪৫৫ জন মানুষ শনাক্ত হয়েছে। আর মারা গিয়েছে ১ হাজার ২২ জন। আর দেশে অনুমিত এইচআইভি সংক্রমিত মানুষ রয়েছেন ১৩ হাজারের মতো, কিন্তু এদের মধ্যে শতকরা ৬০ শতাংশকে শনাক্ত করা গেলেও বাকী ৪০ শতাংশকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে ইউনিসেফের প্রতিনিধি অ্যাডওয়ার্ড বেগবেদার বলেন, বিশ্বে এইচআইভি সংক্রমণের হার বাড়ছে, কিন্তু বাংলাদেশে সংক্রমণ কমছে না, বাড়ছে। তিনি বলেন, এইচআইভি-এইডস নিয়ন্ত্রণে কর্মসূচি চালাতে সরকারের দাতাদের ওপর নীর্ভরত কমিয়েছে, বরং, সরকার নিজেই এখন কর্মসূচিতে অর্থায়ন করছে। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সেবার আওতা বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দেন।

অনুষ্ঠানে এইডস রোগীদের নিয়ে কাজ করা পিএল এইচআইভি (পিপল লিভিং উইথ এইচআইভি) নেটওয়ার্কের সভাপতি হাফিজ উদ্দিন বলেন, এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিরা সমাজে নানা ধরণের বৈষম্যের শিকার হন, তারা অবহেলার শিকার। তাই এসব মানুষদের স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব নয়।

আক্রান্ত ব্যক্তিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নিজের কথা বলতে হবে, নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে হবে এবং নিজেদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরতে হবে।

এসটিআই নেটওয়ার্কের সভাপতি আবু ইউসুফ চৌধুরী বলেন, দেশে এইচআইভি সংক্রমণ কম—এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে কারণ, মনে রাখতে হবে দেশে সংক্রমণ হচ্ছে ঊর্ধ্বগতিতে।

সারাবাংলা/জেএ/এমআই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন