বিজ্ঞাপন

রাত পোহালেই চেতনার একুশ

February 20, 2018 | 7:03 pm

এসএম মুন্না

বিজ্ঞাপন

রাত পোহালেই চেতনার একুশ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে একুশে অনুষ্ঠানমালার প্রস্তুতি। তারই অংশ হিসেবে ক্ষণে ক্ষণে মাইকে ভেসে আসছে ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি। এই সুর ফের জানিয়ে দিচ্ছে মাতৃভাষার কথা; যারা এই বাংলার ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে তাদের কথা।

বই আর পাঠকের ঢল নামার দিন কাল বুধবার একুশে ফেব্রুয়ারি। মাসজুড়ে বইমেলা হলেও এই একটি দিনের অপেক্ষায় থাকেন উৎসবপ্রিয় বাঙালি। তবে আজ মঙ্গলবারও একুশের ছোঁয়া লেগেছে। প্রকাশকরা উন্মুখ থাকেন বইপ্রেমীদের হাতে সর্বশেষ নতুন বইটি তুলে দেওয়ার জন্য। বাহারি বইয়ের ঝাঁপি খুলে যায় এ দিন। সবচেয়ে আলোচিত বইটা উঠবে স্টলে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রভাতফেরি থেকে লাখো মানুষের ঢল নামবে। মেলার দুয়ার দেওয়া হবে সকাল ৮টায়। চলবে একটানা রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।

একাডেমির মেলা মঞ্চে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে ‘স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর’। এবার এই পর্বটি সভাপতিত্ব করবেন কবি কামাল চৌধুরী। মেলা মঞ্চে বিকেল চারটায় ‘একুশে ফেব্রুয়ারির লক্ষ্য কী, অর্জনের পথ কোন দিকে?’ শীর্ষক একুশে স্মারক বক্তব্য রাখবেন ইমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস প্রফেসর আনিসুজ্জামান।

বিজ্ঞাপন

মেলার ২০তম দিন মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় মেলার দুয়ার খোলে দেওয়া হয়। এর পর থেকে মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীর পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে বই কেনার তালিকা, শরীরে আঁকানো উল্কি-আলপনা, মেলা মাঠের সাজ-সজ্জা সবখানেই ছিল একুশের ছাপ। একুশের প্রাক্কালে কেউ কেউ এসেছিলেন ভাষা আন্দোলনের স্মারক চিহ্ন সম্বলিত পোশাক পরে। কারোর কপালে বাঁধা ছিল জাতীয় পতাকা। কেউবা নিজের গালকেই চিত্রপটে রূপান্তরিত করে আঁকিয়ে নিয়েছেন জাতীয় পতাকা আর শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি। আবার কারো টি-শার্টের বুক বরাবর ছিল ভাষা শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরের প্রতিকৃতি।

অনেকেই স্টলে স্টলে খোঁজ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন আর দেশের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি নিয়ে প্রকাশিত বইয়ের। যদিও কয়েক দিন থেকেই মু্ক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও ইতিহাস-সংস্কৃতিব বিষয়ক বই বেশ বিক্রি হয়েছে বলে জানালেন প্রকাশকরা। এবারও মহান ভাষা আন্দোলন নিয়ে নতুন বইয়ের সংখ্যা একেবারেই কম। যাও আছে তা পুরনো বইয়ে পরিমার্জিত সংস্করণ।

ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক ‘ভাষা আন্দোলন নিয়ে এখনো লিখে চলেছেন। ছোটদের জন্য তার লেখা বেশ কয়েকটি বই আছে। ভাষা আন্দোলনের রচনা কে কম এই প্রসঙ্গে তিনি সারাবাংলাকে বলেন ‘ছোটদের জন্য একুশ নিয়ে বই লেখা খুব জরুরি। ছোটবেলা থেকেই একুশ বিষয়ে জানা থাকা দরকার।’

বিজ্ঞাপন

কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন নিয়ে কবিতাসহ অনেক কিছু লেখা যায়। কেউ কেউ লিখছেনও। কিন্তু ইতিহাস ভিত্তিক ছোটদের বই ক’জন আর লেখেন। এই নিয়ে বছরের পর বছর ধরে লেখা উচিত। শুধু লেখাই নয়, এ ধরনের বই পড়ার জন্য নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তবেই তো একুশে চেতনায় বোধসম্পন্ন জাতি গড়ে উঠবে।’

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানও ভাষা আন্দোলনের ওপর বেশিসংখ্যক বই প্রকাশের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। এবারে মেলায় (০২-১৯ ফেব্রুয়ারি) দুই হাজার ৮৪৫ নতুন বই এসেছে। কিন্তু ভাষা আন্দোলন বিষয়ক বই সংখ্যা আলাদা করে জানাতে পারেনি বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ। তবে মুক্তিযুদ্ধ বই এসেছে ৫২টি। গত বছর এই সময়সীমার মধ্যে প্রকাশিত হয়েছিল দুই হাজার ৩৯০টি নতুন বই। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ৬৫টি। সেই তুলনায় এবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই গতবারের চেয়ে ১৩টি কম প্রকাশিত হয়েছে।

মেলা ঘুরেও ভাষা আন্দোলন বিষয়ক নতুন বইয়ের সন্ধান খুব একটা পাওয়া যায়নি। নতুন বইয়ের মধ্যে রয়েছে— গোলাম কুদ্দুছের ‘ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ: প্রসঙ্গ সালাউদ্দিন’, শামসুজ্জামান শামসের ‘ছোটদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’, ড. মিজান রহমানের ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস’।

আগের বছরগুলোতে প্রকাশিত ভাষা আন্দোলন বিষয়ক বইয়ের কাটতি রয়েছে এবারও। প্রকাশকদের দেওয়া তথ্য মতে-আহমদ রফিকের ‘একুশের দিনলিপি’, আবুল কাসেম ফজলুল হকের ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র’, ইমেরিটাস প্রফেসর রফিকুল ইসলামের ‘বাংলাদেশের সাহিত্যে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ’, এমআর মাহবুবের ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও ভাষা সংগ্রামের স্মৃতি’, জাহানারা তোফায়েলের ‘আমার স্মৃতিতে ভাষা আন্দোলন’, মোনায়েম সরকারের ‘মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের গান’, মাহবুবুল হকের ‘ভাষার লড়াই থেকে মুক্তিযুদ্ধ’ অন্যতম।

বিজ্ঞাপন

এবার প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও দেশের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি নিয়ে প্রকাশিত নতুন বইয়ের মধ্যে রয়েছে— ‘সৌন্দর্যের সোনালী বাহন: ভাষা ও সাহিত্য’-মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ (আহমদ প্রকাশন), ‘কথাসাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য’-চৌধুরী শাহজাহান (ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ), ‘ইতিহাস সমাজ ও সংস্কৃতি’-শফিউদ্দিন তালুকদার (কথাপ্রকাশ), ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মিত্রবাহিনী’-আসাদুজ্জামান আসাদ, (আগামী প্রকাশনী), ‘নোয়াখালীর নারী মুক্তিযোদ্ধা’-এ. কে. এম. গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ (তৃণলতা প্রকাশ), ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ’-শামসুজ্জামান খান (বাংলা একাডেমি), ‘ভাটকবিতায় মুক্তিযুদ্ধ’-হাসান ইকবাল (অয়ন প্রকাশন), ‘বং থেকে বাংলা’-রিজিয়া রহমান, (ইত্যাদি), ‘ভারতবর্ষ এবং বাঙালির স্বশাসন (১ম খণ্ড)’ শেখ হাফিজুর রহমান (বাংলা একাডেমি), ‘গণমাধ্যম ১৯৭১ বিশ্ব সংবাদপত্র’-হারুন হাবীব (অন্যপ্রকাশ), ‘যশোরের গণহত্যা’-ফখরে আলম (বিদ্যাপ্রকাশ), ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পেছনের কথা’-রঙ্গলাল দেব চৌধুরী (মূর্ধন্য), ‘বাঙালির সংস্কৃতি সাধনা’-মামুন সিদ্দিকী (কথাপ্রকাশ), ‘ভয়াল ২৫ মার্চ রাত ও মুজিবনগর ইতিহাস’-ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম (ভোরের শিশির), ‘সংস্কৃতি কথা যুক্তিবাদ মুক্তচিন্তা’-আহমদ রফিক (অনিন্দ্য প্রকাশ), ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মিত্রবাহিনী’-আসাদুজ্জামান আসাদ (আগামী), ‘মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ : হাজার বছরের উত্তরাধিকার’-এ কে এম শাহনাওয়াজ (অবসর), ‘গজারিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’-সাহাদাত পারভেজ ( উৎস প্রকাশন), ‘যশোরের ভাষা আন্দোলন’-ফখরে আলম (বিদ্যা প্রকাশ), ‘বুদ্ধিজীবী ও রাষ্ট্র: পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ’-শামসুজ্জামান খান (দি রয়েল পাবলিশার্স)।

ভাষা আন্দোলন বিষয়ক পুরনো বইয়ের মধ্যে রয়েছে— আনিসুজ্জামানের সম্পাদনায় ‘প্রথম শহিদ মিনার ও পিয়ারু সরদার’ (বাংলা একাডেমি), আহমদ রফিকের ‘ভাষা-আন্দোলনে ইতিহাস বিকৃতি’ তমদ্দুন মজলিস ও কমিউনিস্ট পার্টি’ (বিপ্লবীদের কথা), এম আর মাহবুবের ‘একুশের স্মারক’ (নালন্দা), হাসান হাফিজের সম্পাদনায় ‘আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি’ (অনন্যা), ড. রফিকুল ইসলামের ‘একুশের শহীদেরা বাংলা ভাষার শহীদেরা’ (ময়ূরপঙ্খী), এ কে এম শাহনাওয়াজের ‘ভাষা আন্দোলন : পরিপ্রেক্ষিত ও ইতিহাস’ (অবসর), তাজুল মোহাম্মদের ‘ভাষা-সংগ্রামীদের কথা : বৃহত্তর সিলেট’ (সাহিত্য প্রকাশ), আবুল মোমেনের ‘ভাষা আন্দোলনের কথা’ (শিশু একাডেমী)।

সারাবাংলা/এসএমএম/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন