বিজ্ঞাপন

জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে সম্মিলিত বর্ণিল কুচকাওয়াজ

December 16, 2019 | 3:28 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মহান বিজয় দিবসে প্যারেড গ্রাউন্ডে সম্মিলিত কুচকাওয়াজ প্রদর্শন ও সালাম গ্রহণ করছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ প্রদর্শনী দেখেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হয় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের বিজয় দিবসের কর্মসূচি। জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকাররে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের তত্ত্বাবধান এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের ব্যবস্থাপনায় এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।

কুচকাওয়াজের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি সালাম গ্রহণ করেন। পরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যারেড গ্রাউন্ডে বিভিন্ন বাহিনীর প্রদর্শনী দেখেন। এর আগে সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে জাতীয় প্যারেন্ড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আবু মোজাফফর মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব চৌধুরী ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত উপস্থিত ছিলেন। তার কিছুক্ষণ আগে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে আসেন প্রধানমন্ত্রী।

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মহান মুক্তিযুদ্ধে রক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে পরিচিত হয়ে দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করার প্রেরণা পাবে, সেই প্রত্যাশায় প্রতিবারের ন্যায় এবারও জাতীয় কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে সব কন্টিনজেন্ট প্যারেড ময়দানে প্রবেশ করে। এরপর জাতীয় পতাকাবাহী দল কুচকাওয়াজে যোগদান করেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও তিন বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত হন। পরে প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমনের কিছুক্ষণ পর রাষ্ট্রপতি উপস্থিত হন।

বিজ্ঞাপন

প্রতি বছর বিজয় দিবসে শেরেবাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড ময়দানে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, বিএনসিসি, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপি, কোস্ট গার্ড এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজে অংশ নেন। প্যারেড গ্রাউন্ডে এসেই অভিবাদন মঞ্চে যান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিভিআইপি গ্যালারিতে নিজের আসন গ্রহণ করেন। এরপর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সালাম গ্রহণ এবং কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। পরে পদাতিক বহরের কুচকাওয়াজ, আর্মি এভিয়েশন, নেভাল এভিয়েশন এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ট্রাইপাস্ট, মর্ডানাইজড ইন কান্ট্রি কন্টিনজেন্টের অভিবাদন, ওয়ার ডগ এবং অশ্বারোহী দলের অভিবাদন। প্যারাটুপার দলের অবতরণ ও অভিবাদন, যান্ত্রিক বছরের কুচকাওয়াজ, বিমানবাহিনীর ফ্লাইপাস্ট, বিমানবাহিনীর অ্যারোম্যাটি ডিসপ্লে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্যান্ট কন্টিনজেন্টের কুচকাওয়াজ, সম্মিলিত বাদক দলের কুচকাওয়াজ প্রদর্শিত হয়।

এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতিকে সম্মান জানিয়ে গার্ড অব অনার করা হয়। এরপর খোলা জিপে প্যারেড পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্যারেড পরিদর্শন শেষে রাষ্ট্রপতি পুনরায় অভিবাদন মঞ্চে অবস্থান করলে শুরু হয় মহান বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ। অভিবাদন মঞ্চ থেকে কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। প্যারেড গ্রাউন্ডে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের পাশাপাশি প্যারেড গ্রাউন্ডের আকাশ থেকেও রাষ্ট্রপতিকে সালাম দেওয়া হয়। প্যারেড গ্রাউন্ডের আকাশে আর্মি অ্যাভিয়েশন, নেভাল অ্যাভিয়েশন ও র্যা ব অ্যাভিয়েশনের মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট এবং আকাশ থেকে পতাকা নিয়ে ফ্রিফল জাম্প দিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে অবতরণ করেন প্যারা কমান্ডোরা। কুচকাওয়াজে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল বিমানবাহিনীর প্রদর্শনী।

কুচকাওয়াজ উপলক্ষে প্যারেড গ্রাউন্ড এলাকা সাজানো হয়েছিল লাল সবুজে। বিলবোর্ড ফেস্টুন সাজানো হয়েছে লাল সবুজে। মাঠে লাল-সবুজের সজ্জা অন্যরকম আবহ তৈরি করেছিল। অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকাবাহী দল সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার সময় সকলে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান। পদাতিক কুচকাওয়াজের পর শুরু হয় বিভিন্ন যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী। কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকারী যান্ত্রিক বহরে সমরাস্ত্রের পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর। ঘোষণা মঞ্চ বিভিন্ন উন্নয়ন পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আগ্রহে এ পর্যন্ত আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় দুই লাখ ৯৮ হাজার ২৪৯টি ভূমি, গৃহহীন ও ছিন্নমূল অসহায় পরিবারকে পুর্নবাসন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

কুচকাওয়াজের যান্ত্রিক বহরে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্বলিত সুসজ্জিত গাড়ি বহর অংশ নেয়। এছাড়া এয়ারবোর্ন কন্টিজেন্টের অংশগ্রহণ এবং সেনাবাহিনীর প্যারাট্রুপাররা আকাশ থেকে অবতরণ করে কুচকাওয়াজকে আরও আকর্ষনীয় করে তোলে। বিভিন্ন যান্ত্রিক বহরের প্রদর্শনীর পরই শুরু হয় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট ও অ্যারোবেটিক ডিসপ্লে।

কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য বেসরকারি টেলিভিশন এবং রেডিও চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারসহ প্যারেড গ্রাউন্ডে আসার পথে সড়কলোতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বিজয় দিবসের চেতনা সম্বলিত ব্যানার ও বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়। ঢাকা শহরে সার্ক ফোয়ারা থেকে জাহাঙ্গীর গেট, বিজয় স্মরণী, বিজয় চত্বর, গণভবন হতে রোকেয়া স্মরণী হয়ে আগারগাঁও এবং রাসেল চত্বর হয়ে আমিন বাজার পর্যন্ত ব্যানার ও বিলবোর্ড সমূহের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধ তথা বাঙলি জাতির অমর ইতিহাসের ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটানো হয়। পোডিয়ামের উভয় পার্শ্বে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ছবি প্রদর্শিত হয়। প্যারেড গ্রাউন্ডের বিভিন্ন সাজসজ্জায় এবং পোডিয়ামের উভয় পাশে স্থাপিত বিভিন্ন বিলবোর্ড ও ফেস্টুনে স্বাধীনতার প্রতীক জাতীয় পতাকার রঙ লাল-সবুজে ফুটিয়ে তোলা হয়। কুচকাওয়াজ শেষে রাষ্ট্রপতি প্যারেডে অংশগ্রহণকারী সব কন্টিনজেন্ট কমান্ডারদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন নবম পদাতিক ডিভিশনের কর্নেল আবদুল বাতিক ইমানী। চিকিৎসা বিষয়ে সমন্বয়কারী হিসাবে ছিলেন কর্নেল মো. রেজাউর রহমান এবং প্রশাসনিক দায়িত্বে কর্ণেল খায়রুজ্জামান।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন