বিজ্ঞাপন

করোনার বিস্তৃতি রোধে যে ১০ নির্দেশনা সরকারের

March 23, 2020 | 7:40 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তৃতি ঠেকাতে আগামী ২৬ মার্চ থেকে শুরু করে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এই সময়ের মধ্যে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যেন কেউ ঘরের বাইরে বের না হন, সেটি নিশ্চিত করতে সবার প্রতি অনুরোধও জানানো হয়েছে। করোনার বিস্তৃতি ঠেকাতে এই সাধারণ ছুটির ঘোষণাসহ ১০ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৩ মার্চ) বিকেলে সচিবালয়ে এক জরুরি ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এই ঘোষণা দেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিফিংয়ের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার করোনাভাইরাস। যে কারণে স্বাধীনতা দিবসের সব অনুষ্ঠানও স্থগিত করা হয়েছে। আমাদের চিকিৎসকরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের সবাইকে তাদের সহায়তা করতে হবে।

আরও পড়ুন- ২৬ মার্চ থেকে ১০ দিন সাধারণ ছুটি

বিজ্ঞাপন

পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি এবং তা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী সোমবার দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এর আগে তিনি সেনাপ্রধানের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। সার্বিক বিষয় আলোচনার মাধ্যমে তিনি ১০টি নির্দেশনা দিয়েছেন। এই ১০টি নির্দেশনা হলো—

১. করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কাঁচাবাজার, খাবার ও ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবার জন্য এই ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে না। একইসঙ্গে জনসাধারণকে অনুরোধ করা হয়েছে তারা যেন সাধারণ ছুটির এই সময়ে তারা যেন জরুরি প্রয়োজন (খাবার বা ওষুধ কেনা, চিকিৎসা, মরদেহ সৎকার ইত্যাদি) ছাড়া কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে না যান।

২. সাধারণ ছুটির সময়ে বিভিন্ন অফিস-আদালতের প্রয়োজনীয় কাজ অনলাইনে করতে হবে। সরকারি অফিসগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ, হাসপাতাল, পুলি, ফায়ার সার্ভিস, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো যারা প্রয়োজন মনে করবে, তারা অফিস খোলা রাখবে।

বিজ্ঞাপন

৩. গণপরিবহন চলাচল সীমিত থাকবে। জনসাধারণকে যথাসম্ভব গণপরিবহন ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে যাদের গণপরিবহন ব্যবহার করতে হবে, তাদেরও করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়িচালক ও সহকারীদের অবশ্যই মাস্ক ও গ্লাভস পরাসহ পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. জনগণের প্রয়োজন বিবেচনায় ছুটিকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

৫. আগামীকাল ২৪ মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার জন্য প্রশাসনকে সহায়তা করবে সেনাবাহিনী। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে তারা জেলা ও বিভাগীয় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেনটাইন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করবে।

৬. করোনাভাইরাসের কারণে নিম্ন আয়ের কোনো ব্যক্তি যদি স্বাভাবিক জীবনযাপনে সক্ষম না হয়, তারা সরকারের ‘ঘরে ফেরা কর্মসূচি’র আওতায় নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে থাকতে পারবেন এবং আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে পারবেন। জেলা প্রশাসকরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

বিজ্ঞাপন

৭. ভাসানচরে এক লাখ লোকের পর্যাপ্ত আবাসন ও পর্যাপ্ত জীবিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সময়ে দরিদ্র বা নিম্ন আয়ের কেউ যদি ভাসানচরে গিয়ে সরকারের এই আবাসন ও জীবিকার সুবিধা নিতে চায়, তার জন্য তহবিল করে দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসকদের সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

৮. করোনাভাইরাসজনিত কার্যক্রম বাস্তবায়নের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় ও অন্নসংস্থানে অসুবিধা নিরসনের জন্য জেলা প্রশাসকদের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি জেলা প্রশাসকদের সমন্বয় করে নিতে হবে।

৯. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনকে (বিএমএ) নির্দেশ দিয়েছেন, পাঁচশ জন চিকিৎসকের একটি তালিকা যেন তারা তৈরি রাখেন। এসব চিকিৎসককে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কার্যক্রমে বিভিন্ন প্রয়োজনমতো ব্যবহার করা যায়।

১০. সব ধরনের সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় সমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশেষ করে অসুস্থ, জ্বর-সর্দিকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মসজিদে যেতে বারবার নিষেধ করা হয়েছে। আমরা বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের অনুরোধ জানাচ্ছি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে এবং আমাদের দেশের ধর্মীয় নেতাদের পক্ষ থেকেও বারবার অনুরোধ জানানো হচ্ছে, যাদের এমন শারীরিক অসুবিধা রয়েছে, তারা দয়া করে মসজিদে যাবেন না। আপনারা বাড়িতে নামাজ পড়বেন।

এ নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ের জনগণের কাছে বিস্তারিতভাবে পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমকর্মীদের আহ্বান জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যারা আছেন, তারাও নিশ্চয় বলবেন, লকডাউন বিষয়টি সায়েন্টিফিক নয়। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মূল বিষয় হচ্ছে সোস্যাল ডিসটেন্সিং। সরকার এই বিষয়টিকে বিশেষভাবে প্রধান্য দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন