বিজ্ঞাপন

লিবিয়ায় হত্যাকাণ্ড: পরিবারে শোকের ছায়া

May 31, 2020 | 3:30 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

কাজের সন্ধানে ও উন্নত জীবনের আশায় তারা পাড়ি দিয়েছিলেন লিবিয়ায়। কিন্তু সবকিছু নিঃশেষ হয়ে গেল, চলে যেতে হলো না ফেরার দেশে।  লিবিয়ার মানবপাচারকারীদের গুলিতে নিহতদের বাড়িতে এখন শোকের মাতম। আর যাদের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি তাদের পরিবারের সদস্যদের দিন কাটছে চরম উৎকন্ঠায়।

বিজ্ঞাপন

নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে মাগুরা ও যশোরের কয়েকজন বাসিন্দার সন্ধান পাওয়া গেছে। আর ভৈরবের ৯ জন বাসিন্দার এখনো কোন খোঁজ মেলেনি।

ভৈরবের এই ৯ পরিবারের সদস্যরা জানান, বেনগাজী থেকে ত্রিপুলি যাওয়ার পথে দেশীয় দালাল চক্রের মাধ্যমে তাদের জিম্মি করে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবী করা হয় । মুক্তিপণ দিতে না পরায় তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয় । এব্যাপারে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তারা।

ভৈরব থানা সূত্রে জানা যায়, লিবিয়ায় পাড়ি জমানো ভৈরবের বিভিন্ন উপজেলার ৯জন যুবকের সন্ধান মিলছে না । তারা হলেন, সাদেকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের মেহের আলীর ছেলে সাদ্দাম হোসেন আকাশ,  একই ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামের আব্দুল আলীর ছেলে সোহাগ আহমেদ ,আকবর নগর গ্রামের জিন্নত আলীর ছেলে মাহাবুব হোসেন , শ্র্রীনগর গ্রামের বাচ্চুর ছেলে সাকিব হোসেন ,শম্ভুপুর বড় কান্দার আ:সাত্তার মিয়ার ছেলে জানু মিয়া , একই গ্রামের লিয়াকত মিয়ার ছেলে মামুন মিয়া , একই এলাকার সাদ্দাম মিয়া , মোকশেদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী , ভৈরব বাজার কাঠপট্রি এলাকার রাজন চন্দ্র দাস।

বিজ্ঞাপন

ভৈরব থানার ওসি মো: শাহিন জানান, লিবিয়ায় নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে ভৈরবের বাসিন্দাদের ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে । দালালদের ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর এলাকার ইফসুফ খানের ছেলে লাল চাঁদ মানবপাচারকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। একই এলাকার ফুল মিয়ার ছেলে তরিকুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন বলে জানা গেছে।

নিহতের পিতা ইউসুফ খান জানান, তার ছেলে লাল চাঁদ প্রায় আনুমানিক ১৫ দিন ধরে অপহরণকারী চক্রের হাতে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলির দক্ষিণের শহর মিজদায় আটক ছিল। সম্ভবত সেখানেই ২৮ শে মে সকালে তাকে হত্যা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরো জানান, তার ছেলে ইতালিতে অভিবাসনের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে গত বছরের শেষের দিকে তিনি দুবাই হয়ে বেনগাজি বিমান বন্দরে পৌছান। এরপর গত কয়েক মাস ধরে তাকে লিবিয়ায় গোপনে রাখা হয়েছিল। পরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি দিকে রওনার পরিকল্পনা ছিল। কিন্ত পরবর্তীতে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে পারেননি বলে জানান ইউসুফ খান।

নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে চার মাস আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার খাটবাড়িয়া গ্রামের রাকিবুল ইসলাম (২০)। দালালের মাধ্যমে তিনি পাড়ি দেন লিবিয়ায়। কিন্তু দালাল চক্র লিবিয়ার একটি শহরে তাকে আটকে রেখে নির্যাতন শুরু করে।

পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মুঠোফোনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরিবারের লোকজন টাকা দিতে রাজিও হন। এরই মধ্যে খবর আসে দালাল চক্র রাকিবুলকে গুলি করে হত্যা করেছে।

রাকিবুলের বড় ভাই সোহেল রানা বলেন, উন্নত জীবনের আশায় দেশ ছেড়েছিলেন রাবিকুল। ভালো কাজের জন্য দালালের মাধ্যমে তাকে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। কিন্তু শুরু থেকেই দালালরা তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে। পরে তাকে আটকে রেখে ১৭ মে মুঠোফোনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ওই টাকা দুবাই থেকে তারা নিতে চায়। ভাইয়ের মুক্তির জন্য ওই টাকা দিতে রাজিও হয়েছিলেন তারা। আগামী ১ জুন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রাকিবুল যশোর সরকারি সিটি কলেজে অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। রাকিবুলের চাচাতো ভাই লিবিয়াপ্রবাসী। ওই ভাই লিবিয়ায় থাকা এক বাংলাদেশি দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাকিবুলকে লিবিয়ায় নিয়ে যান।

সারাবাংলা/টিসি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন