বিজ্ঞাপন

‘গতানুগতিক’ বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা অর্থনীতিবিদদের

June 11, 2020 | 10:37 pm

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই দেশের ৫০তম বাজেট উত্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার এই বাজেট দেশের ইতিহাসে বৃহত্তম। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজেটে সংস্কার নিয়ে কিছু উল্লেখ নেই। ৮ দশমিক ২ শতাংশের যে বড় জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বড় অঙ্কের ঋণ  নেওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তার সঙ্গেও ভিন্নমত রয়েছে তাদের। সবমিলিয়ে এবারের বাজেটকে ‘গতানুগতিক’ মনে করছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। কেবল বাজেটের আকার নয়, এই বাজেটের ঘাটতির আকারও বৃহত্তম— ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৬ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঘাটতির আকার ছিল জিডিপি’র ৫ শতাংশ। করোনাকালের কথা মাথায় রেখে এই বাজেটে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী।

আরও পড়ুন- মোবাইল কলে খরচ বাড়ছে, ১০০ টাকায় সরকার নেবে বাড়তি ৩ টাকা

বাজেট কেমন হয়েছে— জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, বাজেটে যে অঙ্কগুলো ধরা হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো যোগসূত্র নেই। কারণ জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ শতাংশের বেশি। বাজেট রাজস্ব ব্যয়ও আনুপাতিক হারে তৈরি করা হয়। জিডিপির আকার পূরণ হবে না। রাজস্ব আদায়েও সফলতা আসবে না। এনবিআর থেকে বলা হয়েছে, টার্গেট অর্জন সম্ভব হবে না। আমি তাদের সঙ্গে একমত। এদিকে, করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধ্বস। সুতরাং ভ্যাট ঘাটতি, ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও আমদানিতে ধ্বস এবং ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে আয় কমে গেছে। আয়কর ও করপোরেট কর বেশি বাড়বে না। সুতরাং বাজেটে ঘাটতি বেশি হবে। ব্যাংকি খাত থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য যে টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানেও সমস্যা হবে। কেননা ব্যাংকিং খাত এরই মধ্যে তারল্য সংকটে আছে। ফলে বেসরকারি খাতে সমস্যা হবে।

আরও পড়ুন- চাল-আটা-পেঁয়াজসহ যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে

মির্জ্জা আজিজ বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে গুরুত্বের যে কথা বলা হচ্ছে, সেখানেও অনেক কিছু দেখার আছে। কেননা বাজেটে বরাদ্দে স্বাস্থ্য রয়েছে ১০টি স্থানে। কাজেই স্বাস্থ্যকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, বাজেট ভালো ও মন্দ মিলিয়ে হয়েছে। বাজেটে আশা আছে। করোনা দমন করার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ আছে। করোনার সংক্রমণ যদি থামিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে বাজেট বাস্তবায়ন হবে। তবে প্রবৃদ্ধি বেশি ধরা হয়েছে। প্রবৃদ্ধি পূরণ করতে হলে জিডিপির ৩৬ ভাগ বাস্তবায়ন করতে হয়, যা সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন- বাজেটে দাম বাড়ছে যেসব পণ্যের

তিনি আরও বলেন, কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। স্বাস্থ্য খাতেও বেড়েছে। অন্যদিকে ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের কথা উল্লেখ করা হলেও কী ধরনের সংস্কার করা হবে, তা কিন্তু বলা হয়নি। ব্যাংকিং খাতে ঋণখেলাপিরা রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে কী করা হবে, সেটা কিন্তু বলা নেই। তাই এগুলো বাজেটে থাকলে আরও ভালো হতো।

বাজেটে ‘নতুনত্ব, উদ্ভাবন ও অ্যাকশন প্ল্যান’ প্রত্যাশা করেছিলেন অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এর কিছুই দেখতে পাননি বলে মনে করছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা পুরষের ৩ লাখ, নারীর সাড়ে ৩ লাখ

সাহেলউদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, আমি ভেবেছিলাম বাজেটে নতুনত্ব থাকবে। ইনোভেটিভ কিছু থাকবে। অ্যাকশন প্ল্যান থাকবে। এরকম বাজেট চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা হয়নি। আগেও যেমন বাজেট ছিল, এখনো ঠিক তেমনই আছে। জিডিপি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ, এটি কিভাবে বাস্তবায়ন হবে? একটু কম হলে বা ৬-এর দিকে হলে কিছুটা আশা থাকত। বেসরকারি খাতে কাজ না হলে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ব্যাংকিং খাত থেকে ৮৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হয়েছে। এমনিতে তারল্য সংকটে রয়েছে ব্যাংক, এ অবস্থায় এ লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে স্বাস্থ্য খাতে কিছুটা হলেও আশা দেখছেন সাবেক এই গভর্নর। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে মোটামুটি ঠিক আছে। তবে শুধু বেতন-ভাতা দিয়ে বরাদ্দ খরচ করলে কোনো লাভ হবে না। এছাড়া স্বাস্থ্য বিমা ও শষ্য বিমার কথাও কিছু বলা নেই। এটা দরকার ছিল। প্রবাসীদের ভাষা শিক্ষার কোনো কথা বলা নেই। এটারও প্রয়োজন ছিল। একইসঙ্গে কিছু সংস্কারের কথা বলা দরকার ছিল। অর্থনৈতিক খাতে সংস্কার না হলে কোনো কাজে আসবে না। ব্যাং খাতে দুর্নীতি তো আছেই। অন্তত একটি-দু’টি সংস্কারের কথা বললে ভালো হতো। সবকিছু বিবেচনায় আমার কাছে বাজেট অর্থবহ মনে হয়েছে।

আরও পড়ুন- করোনাতেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮.২ শতাংশ

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বাজেটকে সরাসরি ‘গতানুগতিক’ বলছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, করোনাকে সামনে রেখে যে ব্যতিক্রমধর্মী বাজেট চেয়েছিলাম, সেটা হয়নি। করোনা যে সংকট তৈরি করেছে, তারা মনে করেছে আগামী ছয় মাসে এটা কেটে যাবে। কিন্তু তাদের ধারণা ভুল। এই অনুমান ঠিক হয়নি। করোনার পরিপ্রেক্ষিতে যে ধরনের বাজেট হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়নি। আর অন্যান্য যা কিছু বাজেটে আছে, সেগুলোও আগের মতোই গতানুগতিক।

আরও পড়ুন-

এক নজরে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট

কৃষিতে ভর্তুকি সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা

মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেল প্রস্তাবিত বাজেট

বাজেটে স্বর্ণ আমদানির ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার

করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য উপকরণে মূসক ছাড়

প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ সাড়ে ৩৪ হাজার কোটি টাকা

বাজেটে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা

৭৮৬ কোটি থেকে বাজেট ছাড়াল সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা

বরাদ্দ কমেছে ডাক-আইসিটিতে, বেড়েছে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে

করোনা মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব

পুঁজিবাজার, জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাটে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ

ভিডিওতে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীর

‘বড়’ ঘাটতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট

সারাবাংলা/এসজে/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন