বিজ্ঞাপন

ভুয়া কোম্পানি খুলে নিম্নমানের পিপিই সরবরাহ করতেন সাহেদ

July 18, 2020 | 4:46 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনার সুযোগে ভুয়া কোম্পানি খুলে বিভিন্ন হাসপাতালে নিম্নমানের পিপিই ও বিভিন্ন ধরণের সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করতেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ। শনিবার (১৮ জুলাই) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে প্রথম দিন রিমান্ড শেষে সাহেদ সম্পর্কে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন।

বিজ্ঞাপন

আব্দুল বাতেন বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা সাহেদের অনেক ধরণের প্রতারণার কথা জেনেছি। এছাড়াও নানা রকম প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন সাহেদ। করোনাকালের প্রথম দিকে যখন পিপিই ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রীর সংকট চলছিল তখন ভুয়া একটি কোম্পানি খুলে নিম্নমানের স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করতেন সাহেদ।’

তিনি বলেন, ‘তাকে আরও অনেকদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। তখন নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসবে। এর বাইরে আরেক সহযোগী মাসুদ পারভেজও নানা ধরণের তথ্য দিচ্ছে। তাদের দুজনকে আলাদাভাবে এবং মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

এদিকে সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সাহেদের প্রতারণার ক্ষেত্রে কোনো একক বিষয়ে সীমাবদ্ধ ছিল না। নানা কৌশলে তিনি প্রতারণা করতেন। এসব প্রতারণা করতে তিনি নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণ করতেও নিয়েছেন প্রতারণার নানা কৌশল। রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা এবং করোনা রোগীদের সেবা নিয়ে প্রতারণার বিষয়টি সামনে চলে আসছে- এমন আভাস পেয়েই তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধোঁকা দিতে নেন আরেক কৌশল। প্রথমে তিনি প্রচার করেন- তার হাসপাতালের নাম করে করোনার ভুয়া পরীক্ষা করছে একটি প্রতারকচক্র। এটি প্রচারের পর তিনি পরিকল্পনা করছিলেন, রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজনকে ‘চাকরিচ্যুত’ করার।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: ভারতে পালিয়ে যেতে ৫০ লাখ টাকা চুক্তি করেছিলেন সাহেদ

এক্ষেত্রেও সবার চোখকে ফাঁকি দেওয়ার এক অভিনব কৌশল বেছে নেন সাহেদ। এই চাকরিচ্যুতির ঘটনাটি হবে একটি নাটকের মতো । যাদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে বলে প্রচার করা হবে, তাদের বেতন আরও ১০ হাজার টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই র‌্যাব হাসপাতালে অভিযান চালায় এবং প্রতারণার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়।

গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেয় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলাও করে র‌্যাব। এরপর গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দেয় সাহেদ। অবশেষে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার শাকরা কোমরপুর সীমান্ত এলাকা থেকে বোরকা পরা অবস্থায় র‌্যাব তাকে। সাহেদ এখন ১০ দিনের রিমান্ডে ডিবির কাছে রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

করোনা পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে। তার বিভিন্ন অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ উঠে আসে সারাবাংলার অনুসন্ধানেও। এ ছাড়া হাসপাতালটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ জমা পড়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে।

গত ৬ জুলাই হাসপাতালটিতে অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে বিভিন্ন অনিয়ম-প্রতারণার প্রমাণ মেলে। করোনা পরীক্ষার নামে প্রতারণার অভিযোগ আসায় রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে প্রশাসন। পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে তার করোনা পরীক্ষার অনুমোদন বাতিল করা হয়।

র‌্যাব জানায়, বাসায় গিয়ে করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের অনুমতি না থাকলেও তারা সে কাজটি করত। আবার হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ক্ষেত্রেও সরকারি ব্যবস্থাপনায় করোনা পরীক্ষা করা হলেও তারা এর জন্য টাকা নিতেন। রিজেন্ট হাসপাতাল সরকারিভাবে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য অধিদফতরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে রোগীদের কাছ থেকে।

র‌্যাবের অভিযানের পর রিজেন্ট হাসপাতালের সবধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। এর মধ্যে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদসহ ১৭ জনের নামে মামলা দায়ের করে র‌্যাব। অভিযানের দিনই আটক হয়েছিলেন আটজন। পরে সাহেদের ঘনিষ্ঠ তারেক শিবলীকেও রাজধানীর নাখালপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তবে সাহেদ পলাতক ছিলেন। হাসপাতালে অভিযানের এক সপ্তাহ পর সাতক্ষীরায় র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে সাহেদ।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

পরীক্ষা ছাড়াই করোনার রিপোর্ট দিত রিজেন্ট হাসপাতাল
রিজেন্ট চেয়ারম্যান সাহেদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর
‘অপরাধ ঢাকতে কৌশল নিয়েছিল রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ’
‘প্রতারণা করে ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে প্রায় তিন কোটি টাকার বিল চেয়েছিল রিজেন্ট

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন