বিজ্ঞাপন

‘নারী নয়, নিজেকে মানুষ হিসেবে ভাবতে পারাটা খুব জরুরি’

March 8, 2018 | 2:48 pm

[আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সারাবাংলার আয়োজনে গত ৬ মার্চ ২০১৮ তে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ আড্ডা ‘আমাদের গল্প’।  এতে অংশ নেন বিভিন্ন অঙ্গনে খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা পাওয়া সাতজন সফল নারী। তাঁরা তাদের পরিবারে বেড়ে ওঠা, পেশাগত জীবনে পদার্পণ, নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে নিষ্ঠা-একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করা, পারিবারিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পেশা কিংবা ব্যক্তি জীবনের মূল্যায়নসহ নানা বিষয় আড্ডায় তুলে ধরেন। প্রায় চার ঘণ্টার ওই আড্ডায় অংশগ্রহণকারীরা একে অন্যের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রাণখুলে। আড্ডায় তাঁদের বক্তব্য আজ সারাবাংলার পাতায় প্রকাশ করা হল]

বিজ্ঞাপন

।। কাকলী প্রধান ।।

উপস্থিত অতিথিদের সবার জীবনের দুঃসাহসী গল্পগুলো শুনতে শুনতে আমি কী বলব তাই ভাবছিলাম এতক্ষণ। তাছাড়া, ক্যামেরার পিছনে কাজ করি তো তাই কীভাবে গুছিয়ে কথা বলব সেটাও বুঝতে পারিনা অনেকসময়। সবার এত সংগ্রামমুখর জীবন যে আমার মনে হচ্ছে আমিই সবচাইতে সুবিধাজনক অবস্থান থেকে উঠে আসা নারী। নিজে যেহেতু সুবিধা পেয়েছি তাই সমাজকে আরও অনেক কিছু দেবার ছিল আমার বলে মনে হচ্ছে।

সবকিছু পেয়ে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বড় হয়েছি। তাছাড়া বাবাও ছিলেন রাজিনীতিবিদ। তাই বলব আমার জন্য উঠে আসার পথটা তৈরিই ছিল অনেকটা। ব্যক্তিগত জীবনে তাই খুব বেশি সংগ্রামের সম্মুখীন হতে হয়নি আমাকে। যতটুকু যা নেতিবাচক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি তা কর্মজীবনে এসে।

বিজ্ঞাপন

সাংবাদিক হতেই চেয়েছিলাম, তাই এই পেশাই বেছে নিয়েছি। ব্যাক্তিগত জীবনটা মসৃণ হলেও পেশাগত জীবনে এসে পরিচিত হয়েছি ইনহাউজ পলিটিক্সের সাথে। সেসব কীভাবে মোকাবিলা করতে হয় তা আমি জানতাম না। কারণ, আমি বেশি হলে ‘মারপিট’ করতে পারি। কিন্তু অফিসে তো আর তা করা সম্ভব না।

এমনিতে আমি আজীবন ভীষণই প্রতিবাদী। আমার গায়ে ছোঁয়া দিতে না দিতেই আমি উলটে মার দিতাম। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে মেরে রক্তাক্ত করার ইতিহাসও আমার আছে। একরোখা আমার দ্বারা তাই কথার জালে পলিটিক্স করে চাকরি টিকিয়ে রাখা সম্ভব ছিল না। তাই চাকরি ছাড়তে বাধ্য হই।

আমি জানি আমি প্রকৃতিগতভাবেই মেধাবী। নিজেকে মেধাবী বলছি বলে কেউ আবার অন্যভাবে নেবেন না দয়া করে। তবে আমার মেধা প্রকৃতিপ্রদত্ত আর তা সহ্য করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। নিজের মেধা দিয়ে যখন খুব ভালো একটা অবস্থানে যাচ্ছিলাম তখন এসব ইন হাউজ পলিটিক্সের মাঝে পড়ে আমাকে চাকরি ছাড়তে হয়। তখন বয়সও খুব কম ছিল তাই সেসব বুঝতেও পারিনি।

বিজ্ঞাপন

 

 

সেই দুঃসময়য়ে আমার জীবনে আমার পাশে একজন পুরুষ এসে দাঁড়িয়েছিল। আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তাই আমি মেয়েদের বলি যখন বিয়ে করবেন তখন সেই মানুষটাকেই বিয়ে করবেন যার সাথে আপনি থাকতে পারবেন। সে যেন আপনার কাজের ক্ষেত্রে কোন বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়।

বিজ্ঞাপন

তো যাই হোক আমার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে ছিল সে তখন বলল তোমার এত মেজাজ, তুমি তো কোথায় টিকতে পারবা না। তুমি বরং চিত্র সাংবাদিক হও। এটা একদম স্বাধীন পেশা। এতে কারও কাছে কোন দায়বদ্ধতা নাই, শুধুমাত্র নিজের কাছে ছাড়া।

এরমধ্যে শিক্ষকতায় গেলেও সেখানে মন বসাতে পারছিলাম না। কারণ, কলেজের তো দূরের কথা নার্সারির বাচ্চাদের পড়ানোর মত যোগ্যতা বা ধৈর্য আমার নাই বলে আমি মনে করি। তাই আবার ফিরে আসি নিজের চেনা পথে, সাংবাদিকতায়।

আর ফিরে আসার পথটাও আমার জন্য তৈরি করে দেওয়া ছিল। স্বামী আর শ্বশুরবাড়ি থেকেও পূর্ণ সমর্থন, সাহায্য আর কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পেয়েছি। আমি পারিবারিকভাবে খুবই ভাগ্যবান আর অনুভব করি সবারই এমন পরিবার পাবার অধিকার আছে।

তো আবার যখন ফটো সাংবাদিকতায় আসলাম তখন নানারকম বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি কাজ করতে গিয়ে। আমি একজন নারী হয়ে ফটো সাংবাদিকতায় এসেছি আর তা নিয়ে আমার পেছনে দাঁড়িয়েও অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করেছে। সেসব অবহেলা করে নিজের কাজে মনযোগী হয়েছি, নিজের মেধার উপর ভরসা রেখেছি। সারাজীবন মনে রেখেছি আমাকে আমার কাজকেই সবচাইতে গুরুত্ব দিতে হবে। অফিসে কোনদিন নারী হিসেবে আলাদা সুবিধা নেইনি। ডে অফে কাজ করতে বললেও কোনদিন কোন অজুহাত দেখিয়ে ‘না’ করিনি।

 

 

এখনো ছুটি নিলে আমার সব কাজ গুছিয়ে তারপর ছুটি নেই। নিজের কাজের জায়গায় নিজে সৎ বলেই আমি চাকরির জায়গাতেও যথেষ্ট বিশ্বাস অর্জন করেছি।

আর কেউ যদি নারী হিসেবে আলাদা সুযোগ খোঁজে তাহলে সেটা তার থেকেও আমাদের সামাজিক কাঠামোর দোষ। আমাদের সামাজিক কাঠামোই এভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। তাই আমাদের নিজেদের মানুষ হিসেবে ভাবতে পারাটা খুব জরুরি।

আর আমার বিশ্বাস একজন মা-ই পারে সন্তানের মাঝে সেই চেতনা জাগ্রত করতে। তাই পুরুষ ভাই বা বন্ধুদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা নিজেরাও মানুষ হন আর আপনার পাশের সঙ্গীটিকেও মানুষ হওয়ার সুযোগ দিন।

 

অনুলেখ

যদি পুরুষ নির্মাতা হতাম, পরিচিতি অনেক বেশি হত

অধিকার আদায়ের জন্যে বলতে গেলে যুদ্ধ করতে হয়েছে

মেয়েরা এখন আর দাঁতে দাঁত চেপে নির্যাতন সহ্য করে না

মানুষ হতে পেরেছে এমন পুরুষের সংখ্যা খুবই কম

সবাইকে শেখাই কীভাবে নিজের শরীর পরীক্ষা করতে হব

লজ্জা তো আমার না, লজ্জা তো তোদের, সমাজের

 

ন: রাজনীন ফারজানা

 

সারাবাংলা/এসএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন