বিজ্ঞাপন

সবার ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে বিশ্বসম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান

November 9, 2020 | 8:33 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকটিস উদ্ভাবিত হলে তা মানবজাতিকে চরম অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দেবে বলে মনে করছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এ ক্ষেত্রে বিশ্বের সব দেশ ও অঞ্চল যেন একই সময়ে ও সমানভাবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পায়, সেটি নিশ্চিত করতে জাতিসংঘসহ বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপতি বলেন, গোটা বিশ্ববাসীর মতো আমরাও আশাবাদী— অচিরেই করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কৃত হবে, যা গোটা মানবজাতিকে এক চরম অনিশ্চয়তা, হতাশা, উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তি দেবে। স্বস্তি ফিরে আসবে ঘরে ঘরে। তবে এ ভ্যাকসিন বিশ্বের সব দেশ ও অঞ্চল যেন একই সময়ে ও সমভাবে পায়, তা নিশ্চিতকরতে বিশ্বসম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। আমি জাতিসংঘসহ বহুজাতিক সংস্থা ও উন্নত বিশ্বকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন- ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদাভাবে করে দেখার সুযোগ নেই’

সোমবার (৯ নভেম্বর) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে স্মারক বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয় সন্ধ্যা ৬টায়। বিউগলে রাষ্ট্রপতির আগমনি অর্কেস্ট্রা বাজানোর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ৬টা ৭ মিনিটে সংসদ কক্ষে পৌঁছালে প্রথা অনুযায়ী জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যসহ অধিবেশন কক্ষে থাকা সবাই দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে সম্মান জানান। ৬টা ৩৪ মিনিটে স্পিকারের পাশে রাখা ডায়াসে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন রাষ্ট্রপতি, যিনি গণপরিষদ ও দেশের প্রথম সংসদের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে আইনসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন।

বিজ্ঞাপন

মুজিববর্ষের বিশেষ অধিবেশনের স্মারক বক্তৃতায় চলমান করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস মানবসভ্যতাকে ইতিহাসের এক চরম বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর অপার সম্ভাবনাময় বিশ্বকে ঠেলে দিয়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে। করোনার প্রভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি, কর্মহীন হয়ে পড়েছে কোটি কোটি মানুষ। উন্নত বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায়। বাংলাদেশও এর ব্যাতিক্রম নয়। এরই মধ্যে করোনায় আমরা অনেককে হারিয়েছি, যাদের মধ্যে রয়েছেন বরেণ্য রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, নার্সসহ নানা পেশা ও বয়সের মানুষ।

তিনি বলেন, করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পসহ অর্থনীতির সব খাতে। ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন কোটি কোটি মানুষ। জীবনযাত্রায় নেমে আসে অচলাবস্থা। এ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন, প্রতিনিয়ত ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন, দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। তার সময়োচিত সাহসী সিদ্ধান্ত ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার সাহসিকতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য আমি আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন যেন সবাই পায়, সেজন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, একক বা আঞ্চলিক ভিত্তিতে এর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। আজ আমরা কেউই সুরক্ষিত নই, যতক্ষণ না পর্যন্ত সুরক্ষার জন্য ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে। অতীতে মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্লেগ, স্প্যানিশ ফ্লু, কলেরা, টাইফয়েড, যক্ষা, হাম, মেনিনজাইটিস, পোলিও ইত্যাদি মহামারি ও সংক্রামক ব্যাধিতে কোটি কোটি  লোক প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান থেমে থাকেনি। সময়ের অগ্নিপরীক্ষায় মানুষ এসবের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছে। তাই একসময় যা মহামারি ছিল, আজ তা বিশ্ব থেকে নির্মূল হয়েছে।

আরও পড়ুন- বিরোধী দলের কথা আগে শুনতে হবে— বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রপতি

করোনার ভ্যাকসিন বিশ্বের সব দেশ সমভাবে পায়, তা নিশ্চিত করতে বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এ ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা এ জেনে আশাবাদী যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যথাসময়ে ভ্যাকসিন পাওয়ার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না‘। করোনা মহামারি আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করলেও থামিয়ে দিতে পারেনি। আমি আশা করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে করোনাসহ সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে বাঙালি জাতি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে এবং গড়ে তুলবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন