বিজ্ঞাপন

বিদায় হে কিংবদন্তি!

November 26, 2020 | 3:09 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

একজন মানুষ কতটা জনপ্রিয় হলে তাবৎ দুনিয়ার সংবাদমাধ্যম তার প্রতিটি পদক্ষেপ অনুসরণ করে, তাকে দেখামাত্রই জ্বলে উঠে হাজারো ক্যামেরার ফ্ল্যাশ লাইট, ক্লিক ক্লিক ধ্বনিতে মুখর হয় অত্র চত্বর! একজন খেলোয়াড়ের জীবন কতাটা বর্ণাঢ্য হলে অবসরের পরেও তিনি থাকেন পাদ প্রদীপের আলোয়! যেখানেই যান সংবাদমাধ্যম ও ভক্তকুল হালের বিশ্বসেরা মেসি, নেইমার, রোনালদোদের মাঠের ক্যারিসমা উপেক্ষা করে তার প্রতিটি মুভ দেখতেই উতলা হয়ে থাকেন। যাপিত জীবনে আর্জেন্টাইন যাদুকর ডিয়েগো ম্যারাডোনা ছিলেন এমনই এক মানুষ, এমনই এক খেলোয়াড়। ফুটবল দুনিয়ার অপার বিস্ময়ের নাম ম্যারাডোনা, এক উন্মাতাল অনুভুতির নাম ম্যারাডোনা।

বিজ্ঞাপন

দৈনিক ইনকিলাবের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি শামীম চৌধুরী গিয়েছিলেন ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ কাভার করতে। বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরে ম্যারাডোনার জনপ্রিয়তা বর্ণনা করতে গিয়ে বলছিলেন, ‘আর্জেন্টিনার ম্যাচে ম্যারাডোনা খেলা দেখতে এলেন। মাঠে ছিল অগনিত ক্যামেরা। মজার ব্যাপার হলো এর ৫০ শতাংশই ম্যারাডোনার দিকে তাক করা ছিল। তিনি কখন কি করেন, বলেন; এমকি গোলের পরে কিংবা গোলের সুযোগ তৈরি হলেও তার যে প্রতিক্রিয়া তা ফ্রেমবন্দি করাই ছিল তাদের কাজ।’

সেই ম্যারাডোনা আজ পরপারের বাসিন্দা। নভেম্বর তার মস্তিস্কে অস্ত্রোপচারের পর অতিমাত্রায় মদ্যপ নির্ভরতা কমাতে চিকিৎসা করে আসছিলেন চিকিৎসকেরা। পাছে উদ্দেশ্য একটাই। কিংবদন্তিকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। কিন্তু তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২১ মিনিটে ৬০ বছর বয়সে আর্জন্টিনায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন ‘ফুটবল ঈশ্বর’। তাঁর মৃত্যুতে এক যোগে কেঁপে উঠেছে গোটা বিশ্ব। প্রতিটি দেশের ভক্ত হৃদয়ে হচ্ছে রক্তক্ষরণ, চলছে শোকের মাতম।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বের বাকি আর দশটি দেশের মতো এদেশেও এর ব্যতিক্রম চোখে পড়েনি। ভক্তহদয়ে হচ্ছে রক্তক্ষরণ, চলছে শোকের মাতম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুললেই চোখে পড়ছে তাদের আহাজারি। যেন খুব কাছের কাউকে হারিয়েছেন।

সত্যিই তো তাই। সেই ছেলেবেলা থেকে যে নায়ককে হৃদয়ে ধারণ করেছেন, যার ভিউ কার্ড পকেটে নিয়ে ঘুরেছেন, ১০ নাম্বার জার্সি গায়ে বল নিয়ে ছুটে চলা যার পোস্টার ঘরের দেয়ালে সাটিয়ে রেখেছেন, টিভিতে যাকে দেখলেই থমকে দাঁড়িয়েছেন সেই তিনি যে আজ নেই!

বিজ্ঞাপন

তাঁর চলে যাওয়ায় তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে আর্জেন্টিনা। গতরাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ মাঠে গড়ানোর আগে পালিত হয়েছে এক মিনিটের নীরবতা। আগামি সাত দিন ইউরোপের প্রতিটি লিগের আগেও তা পালিত হবে।

কিংবদন্তির বিয়োগে গতকালই ফুটবলের ‘রাজা’ পেলে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘তোমার সঙ্গে আবার আকাশে ফুটবল খেলব।’

ম্যানসিটি ম্যানেজার পেপ গার্দিওলা বলেছেন, ‘তুমিই ফুটবলকে সুন্দর করে তুলেছ। একবছর আগে আর্জেন্টিনায় গিয়েছিলাম। সেখানে একটি ব্যানারে লেখা ছিল, ডিয়েগো, তুমি তোমার জীবনের সঙ্গে কী করেছ সেটা আমারদের কাছে মুখ্য নয়। বরং তুমি আমাদের কী দিয়েছ সেটাই মুখ্য।’

বিজ্ঞাপন

সত্যিই তো তাই। যে ম্যারাডোনার যাদুকরি পায়ে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা বিশ্ব জয়ের সোনালি গৌরব গাঁথা রচনা করল, যার ক্যারিশমায় ৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলল সেই তিনিই অ-শৃঙ্খল জীবনাচারণে ‘ঈশ্বরের বেয়ারা পুত্র’র তকমা পেলে তাদের কী ই বা এসে যায়?

বরং তাঁর মৃত্যুতে আর্জেন্টিনা হারিয়েছে একজন কিংবদন্তি, একজন রুপকথার ফুটবল যাদুকর। যিনি আর কখনোই ইহলোকে ফিরবেন না, যাকে দেখলেই ক্যামেরার ফ্ল্যাশ লাইটের আলোয় ভেসে যাবে না সম্মেলন কক্ষ, ক্যামেরার শাটারের ক্লিক ক্লিক ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠবে না প্রেস কনফারেন্সের বদ্ধ চার দেয়াল, পাপ্পারাজিরাও একটি ছবি তুলতে পাশের হোটেলের কক্ষে কিংবা সৈকতের তপ্ত বালুতে দিনের পর দিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে না।

বিদায় হে কিংবদন্তি!

সারাবাংলা/এমআরএফ/এসএস

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন