বিজ্ঞাপন

দেশপ্রিয়র বাড়ি রক্ষা পাওয়ায় আনন্দ শোভাযাত্রা

January 29, 2021 | 9:18 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সরিয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তের বাড়ি রক্ষা করায় চট্টগ্রামে আনন্দ শোভাযাত্রা হয়েছে। বাড়িরক্ষার আন্দোলনের মূল ‍দুই সংগঠক একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি আবুল মোমেন এবং মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্তের আহ্বানে এ শোভাযাত্রায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারও মানুষ অংশ নেন।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে নগরীর চেরাগি চত্বর থেকে শুরু হয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা বিভিন্ন সড়ক ঘুরে রহমতগঞ্জে দেশপ্রিয়র বাড়ির সামনে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে আবুল মোমেন বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে যাত্রামোহন সেনের বাড়িটি রক্ষার আন্দোলনে নেমেছিলাম। আপনারা দেখেছেন, ভবনটিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। অর্থাৎ জাদুঘর নির্মাণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ভবনটি সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও নাগরিক সমাজকে বসে থাকলে হবে না। নাগরিক সমাজের কাজ হবে সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা। আমরা আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই এটিকে জাদুঘরে রূপদানের কাজ শুরু হবে।’

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘জেএম (যাত্রামোহন) সেন ভবনের শতবছরের ঐতিহ্য আছে। আমরা সেটি রক্ষার আন্দোলনে নেমেছিলাম। এ আন্দোলনে চট্টগ্রামের দলমত, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ যুক্ত হয়েছিল। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, তিনি আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা অনুধাবন করেছিলেন বলেই জেএম সেন ভবনকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহের যারা নায়ক ছিলেন তাদের স্মৃতিকেও অম্লান করে রাখা হবে।’

বিজ্ঞাপন

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান, প্রীতিলতা ট্রাস্টের সভাপতি পংকজ চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্রের সভাপতি আলীউর রহমান, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তাপস হোড়, চট্টগ্রাম যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রুবেল পাল। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, শৈবাল দাশ সুমন, নীলু নাগ ও রুমকি সেনগুপ্ত বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, নগরীর রহমতগঞ্জে ঐতিহাসিক বাড়িটি আঠারো শতকের খ্যাতিমান বাঙালি আইনজীবী যাত্রামোহন সেনগুপ্তের। তাঁর ছেলে দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৩৩ সালে কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান। তাঁর স্ত্রী কংগ্রেসনেত্রী নেলী সেনগুপ্ত ১৯৭০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে চিকিৎসার জন্য দিল্লী যান। দেশে ফিরে তিনি দেখেন তার বাড়িটি দখল হয়ে গেছে। পরে ভারতে চলে যান তিনি। ১৯৭৩ সালে নেলী সেনগুপ্ত মারা গেলে তাদের বাড়িসহ সব সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।

বিজ্ঞাপন

সেই বাড়ি সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেন শামসুদ্দিন মো. ইছহাক নামে এক ব্যক্তি। সেখানে প্রথমে বাংলা কলেজ এবং ১৯৭৫ সালের পর শিশুবাগ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। শামসুদ্দিনের মৃত্যুর পর তার ছেলেরা স্কুলটি পরিচালনা করছিলেন। তবে সেখানে যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িটি তারা অক্ষত রেখেছিলেন।

গত ৪ জানুয়ারি এম ফরিদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি বাড়িটি কিনেছেন দাবি করে কিছু লোকজন সেটি দখল করতে যান। সন্ত্রাসী কায়দায় প্রথমে শিশুবাগ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া হয়। এরপর বুলডোজার দিয়ে ঐতিহাসিক বাড়িটির সামনের অংশ ভাঙা শুরু করে। খবর পেয়ে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত স্থানীয়দের নিয়ে বুলডোজারের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ করেন।

৬ জানুয়ারি একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই বাড়ির দখল ও অবস্থানের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে হাইকোর্ট। জেলা প্রশাসনের আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত থেকেও এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে আদালতের আদেশের পরও ওই জায়গায় দখলদার এম ফরিদ চৌধুরীর লোকজন সার্বক্ষণিক অবস্থান শুরু করেন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের ধারাবাহিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গত ২৩ জানুয়ারি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বের করে দিয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সেই বাড়ির সামনে টানানো হয়েছে ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থান’ লেখা সাইনবোর্ড।

সারাবাংলা/আরডি/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন