বিজ্ঞাপন

বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে সময় বাড়ছে জুন পর্যন্ত

February 26, 2021 | 10:37 am

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ‘হাতিরঝিলের ক্যানসার’খ্যাত বিজিএমএই ভবন ভাঙার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ বছরের মাঝামাঝি কাজ শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। করোনার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় আগামী জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ। মৌখিকভাবে প্রথমে তিন মাস সময় দেওয়া হলেও আগামী জুন পর্যন্তই তাদের সময় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

বিজ্ঞাপন

রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস সারাবাংলাকে বলেন, কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছে। তাদেরকে সময় দেয়া হবে। করোনার কারণে তারা কাজ করতে পারেনি। আর এখন সময় না দিয়ে কোনো উপায় নেই। কারণ ভবন ভাঙতে ভাঙতে তারা তিনতলা পর্যন্ত নেমে এসেছে। তাই এই মুহূর্তে আমরা তাদের সময় দিয়ে সহায়তা করব।’

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক নছরুল্লাহ খান রাশেদ সারাবাংলাকে বলেন, তিনতলায় হেমার দিয়ে কাজ চলছে। আগামী মার্চের মধ্যে উপরের তিনতলা ভাঙার পুরো কাজ শেষ হবে। পরে আমরা বলতে পারবো পরে বেজমেন্টেরে দুই তলা কিভাবে ভাঙতে পারব। ওই দুইতলা ভাঙতে বর্তমান যন্ত্রের চেয়ে আধুনিক যন্ত্র লাগবে, না এই যন্ত্র দিয়েই চলবে।’ তিনি বলেন, আমরা জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছি। এই সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করি।

বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের নিচতলায় কয়েকজন কর্মী কাজ করছেন। উপরের তিনতলায় হেমারিং মেশিন দিয়ে কাজ চলছিল বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। নিরাপত্তার স্বার্থে ভবনের ভেতরে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ভবন ভাঙার তদারকির কাজের দায়িত্বে থাকা মো. মনসুর সারাবাংলাকে বলেন, এখন হেমারিং গাড়ি দিয়ে ওপরের তিনতলা ভাঙার কাজ চলছে। মেশিন দিয়ে একদিনেই অর্ধেক ফ্লোর ভেঙে ফেলা সম্ভব। আগে আমরা এখানে ১২০ জন কাজ করলেও এখন ২০ থেকে ৩০ জন কাজ করছে। মেশিন চলায় এখন শ্রমিক কম।

তিনি জানান, বিজিএমইএ ভবনের উপরের তিনটি ফ্লোরের প্রথম তলার ছাদ ভেঙে তিন তলায় হেমারিং মেশিন উঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) হেমারিং মেশিন দিয়ে তিন তলার ছাদ ভাঙার কাজ হয়েছে। আর নিচ তলায় কয়েক জন কর্মী ভবন ভাঙার কাজ তদারকি করছেন।

বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার সময় বেশকিছু শর্ত মেনে চলতে হচ্ছে ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজকে। কাজটি ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার শর্ত ছিল। ভবনের চারদিকে সেফটি কভার ও সেফটি নেটিং ব্যবহার করতে হয়েছে এবং সেফটি ব্র্যাকেট স্থাপন করে মালামাল ব্যবহার করতে হয়েছে। ভবন ভাঙার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির চলাচল, নিয়ন্ত্রণ ও কার্যরত অবস্থায় যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। হেলমেট, সেফটি বুট ও ফলস প্রোটেকশনের মতো পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট সার্বক্ষণিক ব্যবহার করতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

২০১০ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। পত্রিকার প্রতিবেদনটি হাইকোর্ট নজরে নিয়ে ‘ভবনটি কেন ভাঙা হবে না?’— তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। পরে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলতে রায় দেন।

এরপর আপিল ও রিভিউয়ে ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্ত বহাল থাকলেও দফায় দফায় সময় প্রার্থনা করে বিজিএমইএ। শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল বিজিএমইএকে শেষবারের মতো একবছরের সময় দেন সর্বোচ্চ আদালত। আদালতের বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হয় ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল। পরে ১৬ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবন ভাঙার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।

ওই সময় ভবনে থাকা মালামালা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই দিনই ভবনটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে আবারও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভবনটিতে থেকে যাওয়া মালপত্র সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেয় রাজউক। এরপর জটিলতা শুরু হয় ভবনটি ভাঙার প্রক্রিয়া ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া নিয়ে। শুরুতে ডিনাইমাইট ব্যবহার করে ভবন ভাঙার কথা বলেন রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার। গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমও এক ব্রিফিংয়ে একই তথ্য জানান।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন