বিজ্ঞাপন

সিনহা হত্যা মামলা: রায়ের অপেক্ষা কয়েক ঘণ্টার

January 31, 2022 | 12:27 am

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

কক্সবাজার: দেড় বছর আগে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ এলাকায় পুলিশ চেকপোস্টে গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। সে ঘটনায় আদালতে বোনের দায়ের করা হত্যা মামলার রায় হতে যাচ্ছে আজ সোমবার (৩১ জানুয়ারি)। দীর্ঘ শুনানি, সাক্ষীদের জবানবন্দি, জেরা ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য এ দিন নির্ধারণ করেছেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।

বিজ্ঞাপন

এই মামলায় আসামি হিসেবে রয়েছেন বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতসহ ১৫ জন।

রাষ্ট্রপক্ষ ও বাদী পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। এ কারণে তারা সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছেন। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের দাবি, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি বাদী পক্ষ। ফলে মামলায় আসামিরা খালাস পাবেন।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ওই সময় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও মাদক আইনের দুইটি মামলা করে। আসামি করা হয় সিনহার সঙ্গী সাইদুল ইসলাম সিফাতকে। রামু থানায় মাদক আইনে দায়ের করা আরেক মামলায় আসামি করা হয় নিহত সিনহার আরেক সঙ্গী শিপ্রা দেবনাথকে।

এর চার দিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন আদালতে।

বিজ্ঞাপন

সেই মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিতকে।

ওই বছরের ৭ আগস্ট মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও মোট সাত জনকে র‌্যাব গ্রেফতার করে।

গত বছরের ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে।

এ মামলায় চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫-এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে মামলার ১৫ আসামির সবাই কারাগারে রয়েছেন। তারা হলেন— বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ দাশের পরিকল্পনা ও নির্দেশেই সিনহাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে ওসি প্রদীপের আইনজীবীর দাবি, মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় ষড়যন্ত্রের শিকার প্রদীপ। ২৩ আগস্ট থেকে শুরু হয় এ কার্যক্রম।

প্রথম দফায় তিন কার্যদিবসে আসামিদের ভূমিকা আদালতে তুলে ধরেন বাদীসহ চার জন সাক্ষী। এরপর ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্য, জেরা, দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে টানা সাড়ে চার মাসে বিচার কাজ শেষে মামলাটি রায়ের জন্য প্রস্তুত করেন আদালত। গত ১২ জানুয়ারি আদালত জানান, ৩১ জানুয়ারি মামলাটির রায় ঘোষণা হবে।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডটি আলোড়ন ফেলে সারাদেশে। মামলাটির রায় কী হয়, তা জানতেও অনেকেই অধীর আগ্রহের অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। ঘটনার দেড় বছর পেরিয়ে এসে সেই রায় এখন কেবল ঘোষণার অপেক্ষা।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন