বিজ্ঞাপন

পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী কে এই শাহবাজ শরিফ

April 11, 2022 | 8:31 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মিয়া মোহাম্মদ শাহবাজ শরিফ। ৩৪২ আসনের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ১৭৪ জনের ভোটে তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগেই অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানো ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ১৫৫ জন সদস্য গণপদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য আহ্বান করা অধিবেশন বর্জন করেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১১ এপ্রিল) পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে ছিল সংসদ নির্বাচন। এতে শাহবাগ শরিফের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন পিটিআইয়ের শাহ মাহমুদ কুরেশি। তবে পিটিআই সদস্যদের গণপদত্যাগে শাহবাজ শরিফের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া ছিল সময়ের ব্যাপার। স্পিকার আসাদ কায়সারের পদত্যাগ ও ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির অধিবেশন পরিচালনায় অপারগতা প্রকাশের পর আয়াজ সাদিকরে সভাপতিত্বে অধিবেশনে শেষ পর্যন্ত জয় পেয়েছেন পাকিস্তান মুসলিম লীগের (নওয়াজ) এই প্রেসিডেন্ট।

পাকিস্তানের রাজনীতিতে শাহবাজ শরিফ নতুন কেউ নন। দেশটির প্রভাবশালী শরিফ পরিবারের অন্যতম সদস্য তিনি। ব্যবসায়ী মহল এবং রাজনৈতিক অঙ্গনেও পরিচিত মুখ। পাঞ্জাবে তিন মেয়াদে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

১৯৫০ সালে জন্ম নেন শাহবাজ শরিফ। মিয়া মোহাম্মদ শরিফের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। তার বড় ভাই নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

শাহবাজ শরিফ নিজে এক জন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। ইত্তেফাক গ্রুপ অব কোম্পানি যৌথ অংশীদার তিনি। ১৯৮৫ সালে তিনি লাহোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

শাহবাজ পাঞ্জাব প্রাদেশিক সংসদে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৮৮ সালে। ১৯৯০ সালে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ১৯৯৩ সালে তিনি ফের পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন। ওই সময় তিনি প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন। পরে ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন শাহবাজ। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের সেনাপ্রদান পারভেজ মোশাররফের অভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত তিনি সেই পদে বহাল ছিলেন। অভ্যুত্থানের পর অবশ্য শরিফ পরিবারকে সৌদি আরবে নির্বাসিত হতে হয়।

পরে দেশে ফিরে ২০০৮ সালে ফের পাঞ্জবের মুখ্যমন্ত্রী হন শাহবাজ। ২০১৩ সাল পর্যন্ত পূর্ণ মেয়াদে সেই দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্তও তিনি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ)-এর প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ

পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ)-এর প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ

শাহবাজ নিজেকে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর বদলে ‘খাদিম-ই-আলা’ বা প্রধান খাদেম হিসেবেই অভিহিত করে এসেছেন। পাঞ্জাবের মেট্রো বাস প্রকল্পকে তার প্রাদেশিক সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে মনে করা হয়।

এরপর শাহবাজ ফের জাতীয় পরিষদে ফিরে আসেন। ২০১৮ সালে শাহবাজ জাতীয় পরিষদে একাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কেবল লাহোরে ১৩২ নম্বর আসনে জয় পান। ওই সময় অবশ্য পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের ১৬৪ ও ১৬৫ নম্বর আসনে জয় পেয়েছিলেন তিনি। তবে তিনি জাতীয় পরিষদের আসনটি রেখে প্রাদেশিক পরিষদের দুইটি আসন ছেড়ে দেন। জাতীয় পরিষদে পিএমএল-এন’র পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে ওই নির্বাচনে ইমরান খানের ১৭৬ ভোটের বিপরীতে শাহবাজ পেয়েছিলেন ৯৬ ভোট। তাতে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে শাহবাজ পিএমএল-এন-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিজ্ঞাপন

শাহবাজের পরবর্তী প্রজন্মও রাজনীতিতে যুক্ত বেশ ভালোভাবেই। তার ছেলে হামজা শাহবাজ শরিফ পাঞ্জাব প্রাদেশিক সরকারের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী পদে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী। ইমরান খান তথা পিটিআইয়ের আমলে হামজা পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন।

বড় ভাই নওয়াজ শরিফের সঙ্গে শাহবাজ শরিফ

বড় ভাই নওয়াজ শরিফের সঙ্গে শাহবাজ শরিফ

রাজনৈতিকভাবে শাহবাজ শরিফ তার বড় ভাই নওয়াজ শরিফের কট্টর সমর্থক। ২০১৮ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পার্টির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর শাহবাজ বলেন, আমার বিশ্বাস— নওয়াজ শরিফই পাকিস্তানের একমাত্র রাজনীতিবিদ ও নেতা, যাকে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র রাজনৈতিক উত্তরসূরী বলা যায়। আমরা সৌভাগ্যবান যে আমরা তার (নওয়াজ) মতো একজন নেতাকে পেয়েছি।

পাকিস্তানের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে গত মার্চে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের পর থেকেই মূলত পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শাহবাজের নাম উঠে আসছিল। ওই অনাস্থা প্রস্তাবের পর ইমরান খানের জোট সরকারের শরিক দল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টে (এমকিউএম) বিরোধী শিবিরে যোগ দিলে ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানো নিশ্চিত হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে বিরোধী দলীয় নেতা শাহবাজেরও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ সুগম হয়।

সেই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে অবশ্য দফায় দফায় নাটকীয়তা ঘটে। এক পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার অনাস্থা প্রস্তাবটি খারিজ করে দেন। ওই সময় ইমরান খানের পরামর্শে প্রেসিডেন্ট সংসদও ভেঙে দেন। পরে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে সংসদ পুনর্বহাল হয়, অনাস্থা ভোট ফেরত আসে সংসদে। শনিবার মধ্যরাতের পর সংসদ অধিবেশনে অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান ইমরান খান। ওই সময় জাতীয় পরিষদের ঘোষণা দেওয়া হয়, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন হবে সোমবার।

এই নির্বাচনে স্বাভাবিকভাবেই বিরোধী দলীয় শিবির থেকে শাহবাজকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ইমরান খানের দল পিটিআই থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় শাহ মাহমুদ কুরেশিকে। তবে সোমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার পরপরই পিটিআইয়ের সদস্যরা গণপদত্যাগ করেন। এসময় উপস্থিত সংসদ সদস্যদের ১৭৪ জনের ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শাহবাজ।

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন