বিজ্ঞাপন

‘গুলি করে হত্যা আর সহ্য করা হবে না’

September 24, 2022 | 9:44 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: গুলি করে হত্যা আর সহ্য করা হবে না বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

মুন্সীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মীরকাদিম যুব দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শাওন হত্যার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী যুবদল এই সমাবেশ আয়োজন করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কথায় কথায় গুলি করবেন, কথায় কথায় জেল দেবেন, কথায় কথায় আগুন জ্বালিয়ে দেবেন এদেশের মানুষ তা আর সহ্য করবে না। দুই শাওনের মৃত্যুতে, রহিমের বা নুরে আলমের মৃত্যুতে মানুষের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, যে অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে সেই অভ্যুত্থানকে বন্ধ করা সম্ভব হবে না। সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল সবাই জেগে উঠেছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আসুন আজকে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই এবং মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করি, সমস্ত রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করি এবং একটা দুর্বার গণআন্দোলন সৃষ্টি করি। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ দানব সরকারকে পরাজিত করি, পদত্যাগ করতে বাধ্য করি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের পরিস্কার কথা এখনও সময় আছে আপনারা পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারকে ক্ষমতা দিয়ে এবং সংসদ বিলুপ্ত করুন। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের সরকার গঠন করুন।’

তিনি বলেন, ‘শাওনের বাবা বলেছেন, আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তারা আমাদের দেশের মানুষের অধিকারগুলোকে হত্যা করেছে। পিতার কাঁদে সন্তানের লাশ। এর চেয়ে বড় কষ্টের আর কিছু হতে পারে না।’

বিজ্ঞাপন

‘আজকে সকালে যখন পত্রিকা দেখছিলাম, সেই পত্রিকায় শাওনের ৭ মাসের ফুটফুটে বাচ্চা, তার পিতা ও স্ত্রীর ছবি দেখার পরে আমাদের আর এই জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার কোনো কারণ নেই। এখন আমাদের রাজপথে নেমে পুরোপুরিভাবে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য যে দায়ী তাকে সরাতে হবে। শুধু শাওন নয়, এই আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে চারজনের রক্ত নিয়েছে শেখ হাসিনা’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘রক্ত ঝরিয়ে, হত্যা করে, ভয় দেখিয়ে, গুম করে, বাড়ি-ঘর, মিল-কারখানা পুড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। মুন্সীগঞ্জে শুধুমাত্র শাওনকে হত্যা করে তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি। এরপরে তারা বিএনপির নেতার কারখানা জ্বালিয়ে দিয়েছে, বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং গোটা মুন্সীগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এভাবেই তারা সারাদেশে ত্রাস সৃষ্টি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। যারা গত ১৫ বছরে আমাদের ৬শ নেতা-কর্মীকে গুম করেছে, সহাস্রাধিক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে, ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। তারা জাতিসংঘে গিয়ে বলে যে, যুদ্ধ চাই, তারা বলে যে, নিষেধাজ্ঞা চাই না। কোনো মুখে এই কথা বলেন? কারণ, যে দেশে আপনি বাস করেন, যে দেশে আপনি প্রতিনিধিত্ব করছেন, সেই দেশে আপনি মানুষ হত্যা করছেন।’

শাওনের বাসা ছোয়াব আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার মৃত ছেলের নামে মামলা করা হয়েছে। এটি কীভাবে হয়? আমরা কোন দেশে বাস করি। আমি গরিব মানুষ। আমার ছেলে মিছিলে গেছে তাকে গুলি করে মারছে। আমি আপনাদের কাছে বিচার চাই যারা আমার ছেলেকে গুলি করে মারছে তাদের বিচার করে দেবেন।’

বিজ্ঞাপন

‘আমার বাড়িতে সমস্যা, বাড়িতে একজনে আমারে হুমকি দিতাছে– এমন কিছু কইতাছে, মামলা করব, এই করব। আমি ভয়ে আছি। আমি আপনাদের কাছে একটা কথা বলি যে, আমার নিরাপত্তাকে দেব। এখানে এই সাংবাদিক ভাইয়েরা আছেন- আপনারা আমার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন’— বলেন ছোয়াব আলী ভূঁইয়া।

সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ভোলা থেকে মুন্সীগঞ্জ চারজন শহিদ হয়েছে। আজকে একজন পিতার আকুল আর্তনাদ আপনারা শুনেছেন। বাংলাদেশে বহু এলাকা থেকে বহু কর্মীকে গুম করা হয়েছে, বহু কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। সবাইকে আপনাদের সামনে হাজির করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আজকে একজন পিতা তার সন্তানের জন্য বিচার চাইলেন। জনতার কাছে এ বিচার চেয়েছেন। তিনি সরকারের কাছে বিচার চাননি। কারণ, এই সরকার বিচারহীনতায় ভুগছে। এই সরকার চুরি, লুটের সরকার, এই সরকারের কাছে বিচার চেয়ে নেই- এটা শাওনের পিতা ঠিকই বুঝে নিয়েছে। এখন আর বিচার চাই না, এখন আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে।’

যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নার সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, কামরুজ্জামান রতন, সাইফুল আলম নিরব, যুব দলের মামুন হাসান, নুরুল ইসলাম নয়ন, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, গোলাম মওলা শাহিন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানি, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরাফত আলী সপু, আলী নেওয়াজ, মহানগর বিএনপির আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন