বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা! দায় কার?

August 13, 2023 | 2:59 pm

রায়হান উদ্দিন

বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয় চট্টগ্রামকে। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এমন একটি শহর যে শহর ছাড়া বাংলাদেশ কল্পনা করা যায় না। বিশ্বের চোখও থাকে চট্টগ্রাম বন্দরনগরীর প্রতি। প্রচলিত একটি কথা শুনি বর্ষার সময়! চট্টগ্রাম ডুবলে ডুবে যাবে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানেই বাংলাদেশের উন্নয়ন। চট্টগ্রামে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। জনসাধারণের প্রশ্ন তা কি পরিকল্পনা করে করা হচ্ছে? উন্নয়ন ভোগ করতে পারবে তো নগরবাসী?

বিজ্ঞাপন

বর্ষার সময় আসলেই নগরবাসীর হাসিমাখা মুখটি মলিন হয়ে যায়। কালোমেঘে ডেকে পেলে চারদিক। চেয়ে থাকে আকাশের দিকে। আবারো কি স্বপ্নআঁকা ঘরটি ডুবে যাবে। শ্রোতে নিয়ে যাবে কি বছরব্যাপী আঁকতে থাকা স্বপ্নগুলো। কালোমেঘ এসে কি ঘিরে পেলবে ছোট্ট সোনার সংসারটি। প্রতিবছরের মতো আবারো হানা দিবে সে বৃষ্টি। পানিতে ডুবে যাবে কি স্বপ্নের ঘরটি। একথা গুলো নগরবাসীর মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা কথা। নগরবাসী জানে তলিয়ে থাকা পানির মধ্যে বন্দি হয়ে থাকাটা কতটা কষ্ট। এতো সুন্দর চট্টগ্রাম নগরীতে একটু বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় পুরা শহর। পানি বন্দি থাকতে হয় লাখো মানুষকে। কষ্টের শেষ সীমা থাকে না। আসলে কষ্ট টা হতো না যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী নগরীতে কাজ করা হতো। জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী অপরিকল্পিত নগরায়ণ। বাজেট হয়, কাজ হয়, উন্নয়ন হয়। কিন্তু সুফল পায়না নগরবাসী। এর জন্য দায়ী কারা? একটু বৃষ্টি হলেই নিস্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়। ভারী বৃষ্টি হলেই হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি। অল্প বৃষ্টিতেই চট্টগ্রাম নগরীর রাস্তাগুলো সমুদ্রে পরিণত হয়। শহর ছাড়িয়ে উপজেলা গুলোর বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। জনগণ অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট বাজারে যাওয়া কষ্টের সীমানা থাকে না। ডুবে থাকে কৃষি জমিগুলো। পাহাড় ধসে নিস্তব্ধতা বিরাজ করে অনেক পরিবারে। তার চেয়ে বেশি ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে থাকা। পাহাড় ধসে নিস্তব্ধতা বিরাজ করে অনেক পরিবারে। স্বজনহারা হয় অনেকেই। জনসাধারণের অশ্রুর ফোটাঁ গড়িয়ে পড়ে পানিতে। অশ্রুর পানি জলাবদ্ধতার পানিতে মিশে যাই। দেখতে পাইনা কেউ৷ কারো আবার অশ্রু পড়ে নিশিরাতে। অভিযোগ শুনার মতো কেউ নেই।

দায়িত্বশীলরা জলাবদ্ধতার সময় দায়ী করে একজন অন্যজনকে। এভাবেই তারা জলাবদ্ধতার সময় বর্ষাকাল পার করে দেই। আর তাদের এই ঘেসাঘেসির মাশুল দিতে হয় নগরবাসীর। কষ্ট পোহাতে হয় জনসাধারণের। মাথাব্যাথা নেই কারো। তদারকি কারার জন্য নাই কেউ। জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশাসন দায়ী। তাদের সমন্বয়হীনতার কারণে এই জলাবদ্ধতা। নালা, ড্রেনে আবর্জনা ফেলার কারণে নালা, ড্রেনগুলো জমে থাকে। ভরাট হয়ে থাকে খালগুলো। এগুলো পরিস্কার করে না কেউ। যার ফলে পানি যেতে পারে না, জমে থাকে। নগরীর নিম্নাঞ্চলের পানি যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম চাকতাই খাল। সেই খাল টিও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যে সুইচ গেইট করা হচ্ছে। সেটাও সংকুচিত। যার ফলে আরো ভরাট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। পানি সহজে নামবে না৷ শুধু মেইন রোডের পাশের নালা পরিস্কার করলে হবে না, অলিগলিতেও নালা নর্দমা পরিস্কার করতে হবে। পানি চলে যাওয়ার ব্যবস্হা করতে হবে। জনগণও তার জন্য অনেকটা দায়ি। তারা অনেক কিছু ময়লা আবর্জনা নালার মধ্যে পেলে। যার ফলে নালাগুলো জমাট হয়ে যায়। জনগণের উচিত সচেতন হওয়া। নালা, নর্দমা, ড্রেন, খালে আবর্জনা না ফেলা।

জলাবদ্ধতা নিরসনে বেড়িবাঁধের জন্য ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু এর সুফল পেলনা না চট্টগ্রামবাসী। প্রতিবছরের মতো এবছরও চট্টগ্রামের মানুষ পানির নিচে। জলাবদ্ধতার বিষয়টি হালকা ভাবে নিলে হবে না। চট্টগ্রামের এ জলাবদ্ধতার সমস্যা এখন জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান করতে না পারলে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে৷ সরকারকে ভাবতে হবে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা কিভাবে নিরসন করা যাই। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বয় করে এ জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সকলকে নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করতে হবে। সচেতন করতে হবে জনসাধারণকে। তাহলেই জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাবে। এই ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। এই ভোগান্তি থেকে মানুষ মুক্তি চাই। জলাবদ্ধতা নিরসন হলে জনগণের হাসি ফুটবে, হাসি ফুটবে নগরবাসীর, হাসি ফুটবে বাংলাদেশের।

বিজ্ঞাপন

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন