বিজ্ঞাপন

‘এক সেলফি নিয়ে যেন বিশ্বজয় করে ফেলেছে’

September 16, 2023 | 6:29 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আমেরিকার প্রধানমন্ত্রী জো বাইডেনের সঙ্গে সেলফি তুলে আওয়ামী লীগ যেন বিশ্বজয় করে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের আবদুল খালেক মিলনায়তনে চট্টগ্রাম জেলা গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে প্রতিদিন বিদেশিদের কাছে ধর্না দিচ্ছে অভিযোগ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকারি দল অভিযোগ করছে বিরোধী দল বিদেশমুখী। খালি বিদেশিদের কাছে গিয়ে তারা ধর্না দেয়। ধর্না কারা দেয় সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে। এক সেলফি নিয়ে আওয়ামী লীগ যেন বিশ্বজয় করে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন আটলান্টিকের পাড়ে যাওয়ার দরকার কি। এখন তিনি নিজেই নিউইয়র্ক যাচ্ছেন। উনি বলেছিলেন, আমেরিকা বঙ্গোপসাগর এই অঞ্চল দখল করতে চায়, ঘাঁটি করতে চায়, সেন্টমার্টিন নিতে চায়।’

‘আর আমরা দেখতে পাই একটি সেলফি তোলা নিয়ে তাদের কত আগ্রহ। আর সেটা খোদ প্রধানমন্ত্রীর অফিস সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কীভাবে নির্দেশনা দিয়েছে। কারা বিদেশিদের কাছে ধর্না দিতে যায় সেটা বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রমাণ হয়ে গেছে। প্রতিদিন তারা বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংগ্রাম চলছে। সেই সংগ্রামে যুগপৎ আন্দোলনের ধারায় এক দফার ভিত্তিতে সংগ্রাম চলছে। এক দফায় পরিষ্কার করে বলা হচ্ছে, আমরা বর্তমান সরকারের পদত্যাগ চাই। আমরা চাই একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ বাংলাদেশে এই সরকার রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে যে সমস্ত মামলা, ফরমায়েশি সাজা সেটা বাতিল করে নির্বাচনের একটি অবাধ পরিবেশ তারা তৈরি করবে।’

‘বিদ্যমান যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এখন চলছে যেটা একটি ফ্যাসিস্ট শাসন কায়েম হয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যে প্রাথমিক ভিত্তি ভোটাধিকার সেটাই জনগণ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমাদের লড়াই তাই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের ভোটাধিকারের লড়াই। এটা একটি বিশেষ দলের লড়াই নয়। বিএনপি, গণসংহতি আন্দোলনের লড়াই নয়। এটা ১৮ কোটি মানুষের লড়াই।’

নিজ দলের কর্মী ও সমর্থকদের ভোটও আওয়ামী লীগ সরকার কেড়ে নিয়েছে অভিযোগ করে সাকি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য দল। দেশের জনগণের একটি অংশের প্রতিনিধিকারী একটি রাজনৈতিক দল। তারা কিন্তু তাদের দলের সমর্থক ও সদস্যদেরও ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারাও কিন্তু ভোট দিতে পারে না। তাদের কর্মীরা ফেসবুকে ও নানা জায়গায় বলেছে, আমি তো নৌকাতেই ভোট দিতাম। আমি তো ভোট দিতে চাই। সেটাও দিতে পারি না।’

বিজ্ঞাপন

‘আওয়ামী লীগ সরকার একটি ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা কায়েম করেছে। যেখানে সমস্ত নাগরিকের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে লুটপাটের সাম্রাজ্যে আর ভয়ের ত্রাস সৃষ্টির সাম্রাজ্যে পরিণিত করেছে। ৪০ লাখের মতো মামলা দিয়েছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর। প্রায়ই এক লাখের বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা আছে। বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সবাই মামলার আসামি।’

১৯৭২ সালের সংবিধানে বঙ্গবন্ধুকে সম্রাটের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ তার জম্মের মধ্যে দিয়ে ঘোষণা দিয়েছিল এই রাষ্ট্র নাগরিকদের জন্য সাম্য, মানবিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান যাকে বাংলাদেশের বিরাট অংশের মানুষ বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, আমি মানুষের অধিকার চাই। কিন্তু ৭২ সালে এসে দেখলাম সংবিধানের ক্ষমতা এমনভাবে তৈরি হলো সেখানে এটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, আমিই প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই, বাংলাদেশের মানুষের অধিকার চাই না।’

‘৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোর মধ্যেই এই দেশে তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন তাকে সম্রাটের মতো ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। সব মানুষের অধিকারের কথা একদিকে, আরেকদিকে প্রধানমন্ত্রী হবেন সবার ঊর্ধ্বে- এমন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। তাকে কোনো কিছু জবাবদিহিতা করা যায় না। সমস্ত রাষ্ট্রশক্তিকে তিনি পকেটে ঢুকিয়ে ফেলতে পারেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে যদি ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয় এই ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বদল করতে হবে। এই ব্যবস্থা বদল করতে হলে সংবিধানে ক্ষমতার ভারসাম্য ও জবাবদিহিতা তৈরী করতে হবে। ২০১৪ সালে তারা পার পেয়েছে। ২০১৮ সালে রাতের আঁধারে ভোট চুরি করে এখনো পার পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এবার তারা পার পাবেন না। কারণ বিরোধী দল এবার ভোটাধিকারের জন্য লড়ছে। আর ভোটাধিকারের জন্য দরকার গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা।’

বিজ্ঞাপন

‘সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার ৩১ দফা ও সংস্কার প্রস্তাব আজ বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে হাজির করা হয়েছে। এটাই আমাদের অনেক বড় একটি শক্তি। রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কার কর্মসূচি আগামী দিনে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের অবসান ঘটিয়ে বাস্তবায়নের মাধ্যেমে এই দেশের মানুষের নাগরিক অধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এটাই আমাদের আন্দোলনের সবচেয়ে বড় নৈতিক শক্তি।’

নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে আওয়ামী লীগ সরকার উঠেপড়ে লেগেছে। গণতন্ত্রের অধিকারের জন্য মানুষ আজ রাজপথে। সবার এখন একটাই দাবি। সেটা হচ্ছে স্বৈরাচারী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে জনগণ ভোট দেবে না। শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর তথ্যনুসারে বাংলাদেশ থেকে প্রায়ই ১২ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে।’

‘এই টাকাগুলো তো সাধারণ জনগণের। এর বিরুদ্ধে কেউ বা কোনো দল কথা বলতে পারে না। কথা বললেই হাতুড়ি লীগ এসে হামলা করে। মানুষ এখন জেগে উঠেছে। গণতন্ত্রের বিজয় হবেই। স্বৈরাচার এরশাদ, আইয়ুবের বিদায় জনগণের হাতে হয়েছে। ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনকেও বিদায় নিতে হয়েছে। শেখ হাসিনা গংদেরও বিদায়ের ঘণ্টা জনগণ বাজাবে।’

চট্টগ্রাম জেলা গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমির সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সমন্বয়কারী ফাহিম শরীফ খানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন— জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) স্থায়ী কমিটির সদস্য জবিউল ইসলাম, এলডিপি দক্ষিণ জেলার আহবায়ক কফিল উদ্দিন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের নুর হোসেন ও গণসংহতি আন্দোলনের চট্টগ্রামের নির্বাহী সমন্বয়কারী ফরহাদ জামান জনি।

সারাবাংলা/আইসি/এনএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন