বিজ্ঞাপন

বাসা থেকে যুবককে তুলে নিয়ে মাথা ন্যাড়া করে নির্যাতন

February 20, 2024 | 2:21 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে এক যুবককে তুলে নিয়ে উলঙ্গ করে মাথা ন্যাড়া করে ভিডিও করার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার শিকার যুবকসহ জড়িতরা ভারতীয় ভিসা আবেদন ফরম পূরণের ব্যবসা করেন এবং এ নিয়েই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে নগরীর খুলশী থানা পুলিশ বাসা থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। আগের রাতে ওই বাসার নিচে কেয়ারটেকারের কক্ষে ঘটনাটি ঘটে।

গ্রেফতার সৈয়দ মাহবুব-ই-খোদা-জিতু (৩৮) চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এস কে খোদা তোতনের ছেলে। নগরীর খুলশী আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর সড়কে সালমা ভিলা নামে তাদের একটি পাঁচতলা ভবন আছে। গ্রেফতার অপরজন আবু তাহের (৪০) ওই ভবনের কেয়ারটেকার হিসেবে কর্মরত এবং জিতুর সহযোগী বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ঘটনার শিকার আল আমিন হাওলাদার (৩৩) ঝাউতলা রেলওয়ে কলোনির বাসিন্দা। তার বাড়ি বরিশাল জেলায়।

বিজ্ঞাপন

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত রোববার রাতে জিতু ভিকটিম আল আমিনকে তার বাসা থেকে তুলে নিজের বাসার নিচে কেয়ারটেকারের রুমে নিয়ে নির্যাতন করে। তাকে উলঙ্গ করে জিতু নিজেই মাথা ন্যাড়া করে দেয়। জিতুর নির্দেশে আবু তাহের সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে। ঘটনার পরপরই সোর্সের মাধ্যমে আমাদের কাছে এ তথ্য আসে। প্রাথমিক তদন্তের মধ্যেই আল আমিন থানায় এসে অভিযোগ করেন।’

‘অভিযোগ পেয়েই আমরা বাসায় অভিযান চালিয়ে জিতু ও তাদের কেয়ারটেকার আবু তাহেরকে গ্রেফতার করি। উভয়ের মোবাইলে হোয়াটস অ্যাপে উলঙ্গ করে মাথা ন্যাড়া করার ভিডিওটি পাওয়া গেছে।’

আল আমিন জানান, খুলশীতে ভারতীয় সহকারি হাই কমিশন কার্যালয়ের সামনে জিতুর একটি কম্পিউটারের দোকান আছে, যেখানে ভারতীয় ভিসা আবেদনের ফরম পূরণ করা হয়। তার পাশে পিয়াস নামে আরেকজনেরও একই কাজে যুক্ত এমন আরেকটি দোকান আছে।

বিজ্ঞাপন

আর ঘটনার শিকার আল আমিন হাওলাদার ‘ভিসা দালাল’ হিসেবে সহকারি হাই কমিশন কার্যালয়ের সামনে ঘোরাফেরা করেন। ফরম পূরণে আগ্রহী ভিসার আবেদনপ্রার্থী পেলে তাকে জিতু-পিয়াসদের দোকানে নিয়ে যান। সেখানে ফরম পূরণ করে দেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহেও সহযোগিতা করা হয়। ফরম পূরণের বিনিময়ে পাওয়া টাকা থেকে কমিশন পান আল আমিন।

জিতুর কাছে ১৩ হাজার টাকা ঋণগ্রস্ত থাকার কথা জানিয়ে আল আমিন বলেন, ‘আমি বিভিন্নসময় উনার দোকানে ফরম পূরণ করেছি। বাকিতে কাজ করায় ১৩ হাজার টাকার মতো জমে যায়। সেটার জন্য জিতু ভাই আমাকে চাপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে পিয়াস জিতুকে বলে, সে আমার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা পায়। সেই টাকা উদ্ধার করতে পারলে জিতুকে কিছু ভাগ দেবে।’

‘সেটা শুনে জিতু ভাই মোটর সাইকেল নিয়ে আমার বাসায় গিয়ে আমাকে তুলে আনেন। কেয়ারটেকারের রুমে বসিয়ে প্রথমে আমার গেঞ্জি ও লুঙ্গি খুলে ফেলেন। এরপর ওয়ান টাইম রেজার দিয়ে আমার মাথার চুল কাটা শুরু করেন। আবু তাহের ভিডিও করতে থাকেন। আমি অনেক অনুরোধ করেছি এ কাজ না করার জন্য। অর্ধেকের মতো মাথা ন্যাড়া করে তারা আমাকে আবার একটি সেলুনে নিয়ে পুরো চুল কেটে ফেলে।’

এ সংক্রান্ত দুটি ভিডিওর মধ্যে একটিতে দেখা যায়, জিতু ভুক্তভোগী আল আমীনকে একটি বাসার রুমে নিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে। সেখানে মোবাইল ফোন বের করে কোন একটা লেখা আল আমীনকে দেখিয়ে কে লেখেছে জানতে চান। আল আমীন লেখাটি তিনি লেখেনি বলার পর রেজার দিয়ে তার মাথার চুল ন্যাড়া করে দেয়।

বিজ্ঞাপন

অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মাথা অর্ধেক ন্যাড়া অবস্থায় জিতু হেলমেট পড়িয়ে আল আমীনকে একটি সেলুনে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে পুরো মাথা ন্যাড়া করে দেয়।

পুলিশ জানায়, গ্রেফতারের পর জিতু তাদের কাছে এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন। প্রথমে দাবি করেছেন- টাকাপয়সার বিরোধ নিয়ে মোাবইলে কথোপকথনের মধ্যে আল আমিন তাকে মা ধরে গালি দেয়। এতে জিতু মারাত্মক ক্ষুব্ধ হয়ে এ ঘটনা ঘটান। পরে আবার দাবি করেন- পাওনা টাকা রোববার সন্ধ্যার মধ্যে দিতে না পারলে আল আমিনই তাকে বলেছিলেন মাথা ন্যাড়া করে দিতে।

অন্যদিকে আবু তাহের পুলিশের কাছে দাবি করেন, জিতু ও আল আমিনের মধ্যে বিরোধের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। তিনি শুধু তার মালিক জিতুর নির্দেশে নিজের মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেই ভিডিও জিতুর হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে ডিলিট করে দেন।

আল আমিন অবশ্য পুরো ঘটনার জন্য এখন কম্পিউটার দোকানি পিয়াসকেই দায়ী করছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিতু ভাই, পিয়াস দু’জনই চান, আমি যেন একজনের চেয়ে আরেকজনের দোকানে বেশি কাস্টমার ফরম পূরণের জন্য নিয়ে যাই। জিতু ভাই এখানে অনেক প্রভাবশালী। ছোটবেলা থেকে উনার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। উনার বাবাকে আমি কাকা ডাকি। উনারা বিএনপি করেন, আমিও বিএনপি করি। এজন্য আমি জিতু ভাইয়ের দোকানে বেশি কাস্টমার নিই। কিন্তু পিয়াস এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জিতু ভাইকে ভুল বুঝিয়ে আমাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি করে।’

ওসি নেয়ামত উল্লাহ জানান, গ্রেফতার দু’জনকে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন