বিজ্ঞাপন

‘অপরিপক্ক’ তরমুজে বাজার সয়লাব, দামেও চড়া

March 21, 2024 | 10:11 am

মাহী ইলাহি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: চৈত্রের খরতাপ। এর মধ্যেই চলছে রোজা। এই গরমে ইফতারে তরমুজের মতো মৌসুমি ফলের চাহিদা ব্যাপক। রাজশাহীর বাজারেও ক্রেতাদের জন্য তরমুজের অভাব নেই। দামে চড়া হলেও থেমে নেই সেই তরমুজের বেচাকেনাও।

বিজ্ঞাপন

ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে এখন যেসব তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে তার বেশির ভাগই অপরিপক্ক। খাওয়ার অনুপযোগী। রমজান আর চৈত্রের খরতাপে বাড়তি মুনাফার আশায় এসব তরমুজ বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে বিক্রেতারা বলছেন, এগুলো বারোমাসি তরমুজ। মৌসুমি তরমুজগুলো বাজারে উঠতে আরেকটু সময় লাগবে।

তরমুজ চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তরমুজের মৌসুম শুরু হয় মূলত বাংলা বর্ষপঞ্জির চৈত্র মাসের শেষে ও বৈশাখের শুরুতে। খ্রিষ্টীয় বর্ষপঞ্জি হিসাব করলে সময়টা দাঁড়ায় এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ। পাওয়া যায় জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু এ বছর ফেব্রুয়ারির শেষ দিক থেকেই বাজারে দেখা মিলছে তরমুজের। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষের দিকে রমজান শুরু হতে না হতেই এর বিক্রি বেড়ে গেছে।

ক্রেতারা বলছেন, পরিপূর্ণ মৌসুম শুরু না হলেও রমজানে বেশি লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা অপরিপক্ব তরমুজ মাঠ থেকে নিয়ে এসে বিক্রি করছেন। এসব তরমুজ কাটলে ভেতরে লাল রঙ পাওয়া যায় না। মিষ্টতা ও স্বাদও অনেক কম। এর সঙ্গে চড়া দাম নিয়ে ক্রেতাদের আপত্তি তো রয়েছেই। তবে বিক্রেতারা এখন বাজারের তরমুজগুলোকে বারোমাসি তরমুজই বলছেন। এগুলোর রঙ-স্বাদ মৌসুমি তরমুজের চেয়ে কিছুটা কম বলেই স্বীকার করে নিচ্ছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

রাজশাহীর বাজারে এখন তরমুজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে। ছবি: সারাবাংলা

রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাঁচ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত ওজনের তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বাজার, পাড়া ও মহল্লার মোড়ের দোকানে ছোট ও মাঝারি আকারের তরমুজ বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। গত বছর একই তরমুজের দাম ছিল প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এর আগের বছরও প্রায় একই দামে বিক্রি হয়েছিল তরমুজ।

এদিকে গত কয়েক বছর ধরে তরমুজ বিক্রির ধরন নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। বিক্রেতারা পিস হিসাবে তরমুজ কিনলেও বিক্রি করছেন কেজি দরে। এ নিয়ে চরম অসন্তুষ্ট ক্রেতারা। বিক্রেতারাও কেজি দরে বিক্রির যুৎসই কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই বাজার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও। ২০২১ সালে করোনা মহামারির সময় একবার পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রির নির্দেশ দিয়েছিল প্রশাসন। তবে সে নির্দেশনাও খুব একটা কাজে আসেনি। সম্প্রতি কেবল নাটোরে প্রশাসনকেই আবার পিস হিসাবে তরমুজ বিক্রির নির্দেশ দিতে দেখা গেছে।

নগরীর সাহেববাজার এলাকায় কথা হয় জুলফিকার রহমান নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি কেজি তরমুজ ৭০ টাকা অনেক বেশিই। তারা (ব্যবসায়ী) ক্ষেত থেকে পিস হিসাবে কিনে বিক্রি করছে কেজি দরে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে এগুলো দেখতে হবে। দেশের মানুষ ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে।’

বিজ্ঞাপন

রহমত আলী নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘ছোট্ট একটা তরমুজের ওজন হয়েছে চার কেজি। ট সাইজের তরমুজের ওজন হয়েছে চার কেজি। ৭০ টাকা কেজি হিসাবে দাম এসেছে ২৮০ টাকা। কিন্তু এই তরমুজের দাম কোনোভাবেই ১২০ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। এইটুকু তরমুজের দাম ২৮০ টাকা হলে মানুষ খাবে কীভাবে? দেশের জনগণকে নিয়ে ব্যবসায়ীরা তামাশা শুরু করেছেন। এসব দেখার যেন কেউ নেই দেশে।’

বিক্রেতারা বলছেন, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে পুরোদমে তরমুজের মৌসুম শুরু হবে। তখন দাম কিছুটা কমবে। এখনকার চড়া দামের কারণ ব্যাখ্যা করে সাহেববাজার এলাকার খুচরা ফল বিক্রেতা আবুল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের আড়ত থেকে কিনে আনতে হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। এখানে নিয়ে এসে কেজিতে মাত্র পাঁচ টাকা লাভে আমরা তরমুজ বিক্রি করছি। মৌসুম শুরু হলে দাম কমে যাবে।’

দাম বেশি হলেও তরমুজ কিনতে কার্পণ্য করছেন না অনেকেই। ছবি: সারাবাংলা

নগরীর শালবাগান এলাকার ফলের আড়তদার শাহজামাল বলেন, ‘গতবার এ সময় যে ১০০ তরমুজ ১৫ হাজার টাকায় আড়ত থেকে কেনা যেত, এবার সেই তরমুজ কিনতে হচ্ছে ২৫ হাজার টাকায়। আমাদের আরও খরচ আছে। পরিবহণ ও শ্রমিকদের টাকা দিতে হয়। সেগুলো যোগ করে পাইকারি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে। এখান থেকে নিয়ে গিয়ে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। আবার কেউ বেশি দামেও বিক্রি করছে।’

আড়তদাররা বলছেন, রাজশাহীতে এখন যেসব তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে এগুলো আনা হয়েছে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে। বিশেষ করে বরগুনা ও ভোলা থেকে আনা হচ্ছে তরমুজ। এরপর নিয়ে আসা হবে খুলনা ও চুয়াডাঙ্গা থেকে। সবশেষে বিক্রি করা হবে নাটোরের তরমুজ।

বিজ্ঞাপন

কৃষি বিভাগ বলছে, দেশে তরমুজ সাধারণত এপ্রিল-মে মাসেই ওঠে। এটাই তরমুজের প্রধান মৌসুম। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই মৌসুমের বাইরেও অন্য সময়ে, বিশেষ করে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তরমুজ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এ তরমুজকে অনেকে নাম দিয়েছেন ‘বারোমাসি তরমুজ’। অসময়ে ওঠার কারণে এগুলোর দামও বেশি।

এ ছাড়া দেশের অনেক এলাকাতেই এখন কালো রঙের খোসার তরমুজের আবাদ বেড়েছে। কিছু কিছু এলাকায় আবাদ হচ্ছে হলুদ রঙের খোসার অমৌসুমি তরমুজ। অমৌসুমি এসব তরমুজও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন