বিজ্ঞাপন

আপিলে খালেদা জিয়ার সাজা বেড়ে ১০ বছর

October 30, 2018 | 10:34 am

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় দুদকের রিভিশন আবেদন গ্রহণ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। নিম্ন আদালতে খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল এই মামলায়। একইসঙ্গে এ মামলায় অন্য দুই আসামির আপিল হাইকোর্ট খারিজ করে দিলে তাদের নিম্ন আদালতে পাওয়া ১০ বছরের সাজা বহাল থাকছে।

মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) সকালে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আরও পড়ুন- ‘খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই’

সকাল ১০টা ৩১ মিনিটে এজলাসে বসেন বিচারকরা। এরপর মাত্র তিন মিনিটেই রায়ের মূল অংশটি পড়ে আদালতের কার্যক্রম শেষ করেন তারা। আদালত বলেন, আমরা রায়ের অপারেটিভ অংশ ঘোষণা করব।

বিজ্ঞাপন

রায় ঘোষণায় প্রথমেই খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির খালাস চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। পরে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়াতে দুদকের করা রিভিশন আবেদন গ্রহণ করে আদালত খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন।

এসময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খানসহ বিপুলসংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। তবে খালেদা জিয়ার পক্ষে সিনিয়র কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। তবে আদালত চত্বরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আপিলের রায় ঘিরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই হাইকোর্ট এলাকায় ছিল কড়া নিরাপত্তা। সকাল ৯টা থেকেই পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের ১৭ নম্বর আদালত ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেন। অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে হাইকোর্টে ছিল কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এসময় আদালত চত্বরে প্রবেশেও ছিল কড়াকড়ি। যারা প্রবেশ করছিলেন, তাদেরও তল্লাশি করা হয়।

এর আগে, সোমবার (২৯ অক্টোবর) খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদন খারিজ করে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এ মামলার আপিল নিষ্পত্তির আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। পরে বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত না থাকায় বাকি আসামিদের পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে আদালত এ মামলায় যুক্তিতর্ক সমাপ্ত ঘোষণা করে আজ (মঙ্গলবার) রায়ের দিন ঠিক করে দেন আদালত।

গত ২৩ অক্টোবর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা যাবজ্জীবন চেয়ে দুদকের আইনজীবী ও বিচারিক আদালতের দেওয়া পাঁচ বছর সাজা বহাল রাখার আর্জি জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ বক্তব্য শেষ করে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। ওই দিনই তাকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন। এই মামলার রায় ঘোষণার ১১ দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২০ ফেব্রুয়ারি তারা খালেদা জিয়ার সাজা কমানোর আবেদন করেন।

২২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ এবং অর্থদণ্ড স্থগিত করে নথি তলব করা হয়। পরে ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। ১০ মে আরেক আসামি শরফুদ্দিনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত। সব মিলিয়ে এ মামলায় তিন আসামির আপিল ও দুদকের আবেদনের ওপর শুনানি সমাপ্তি করে রায় ঘোষণার জন্য দিন ঠিক করেছেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। এরপর এ বিচারকের উপর অনাস্থা জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে খালেদা জিয়া। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলাটি স্থানান্তর করে বিশেষ জজ আদালত ৫-এ দেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত রায় দেন।

এ মামলায় ছয় আসামির মধ্যে খালেদা জিয়াসহ তিন জন কারাবন্দি, তিন আসামি পলাতক। খালেদা জিয়া ছাড়া কারাগারে থাকা বাকি দু’জন হলেন— মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। পলাতক তিনজন হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

মামলার এজাহারে জানা যায়, ১৯৯১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন রমনা শাখার সোনালী ব্যাংকে প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন, যার নম্বর ৫৪১৬। ওই হিসাবে ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ডি ডি নম্বর ১৫৩৩৬৭৯৭০-তে ১৯৯১ সালের ৯ জুন ১২ লাখ ৫৫ হাজার মার্কিন ডলার (তৎকালীন বাংলাদেশি মুদ্রায় চার কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা) জমা হয়।

পরে খালেদা জিয়া বিভিন্ন সময়ে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন আসামির নামে ‘এফডিআর’ করে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে উত্তোলন করেন, যা দণ্ডবিধির ৪০৯ এবং ১০৯ ধারা ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ ২ নম্বর আইনের ৫(২) ধারায় অপরাধ করেছেন।

সারাবাংলা/এজেডকে/ইউজে/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন