বিজ্ঞাপন

কেমন ছিল ২০১৭’র দেশীয় সাজপোশাক?

December 29, 2017 | 2:03 pm

আফরোজ ন্যান্সি

বিজ্ঞাপন

ব্যাক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশের সবথেকে চমৎকার মাধ্যম হচ্ছে পোশাক আর তাই আধুনিক মানুষ মাত্রেই খুব বেশী পোশাক সচেতন। কিছুদিন পরপরই তাই বদলে যাচ্ছে ফ্যাশন সচেতন নারী- পুরুষদের ব্যবহৃত পোশাকের ধরন। ২০১৭ সাল প্রায় শেষের দিকে, একটু পিছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে এ বছরটি ফ্যাশনবিশ্বে বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে গেছে।

এ বছর পোশাকের ক্ষেত্রে তারুণ্যের রুচিতে সবথেকে বড় যে পরিবর্তনটি ফ্যাশন ডিজাইনাররা লক্ষ্য করেছেন সেটি হলো দেশীয় পোশাক পরার প্রতি ঝোঁক। এরই জের ধরে বছর জুড়ে চাহিদা ছিলো সুতি, সিল্ক, অ্যান্ডি, খাদি, মসলিন, তাঁত প্রভৃতি কাপড়ের। ইদানীং উৎসবে অনুষ্ঠানে কিংবা কাজের জায়গাতেও মেয়েদের ফ্যাশনে শাড়ির চল লক্ষ্যনীয় মাত্রায় বেড়েছে। সুতি, সিল্ক, হাফসিল্ক, জামদানী প্রভৃতি শাড়ির চল দেখা গেলেও মূলত চলতি বছরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলো হাফসিল্কের শাড়ি। এর পাশাপাশি তাঁতের শাড়িও বেশ চলেছে সারা বছর।

চলতি বছরে জামদানিও স্বমহিমায় ফিরে এসেছে। গত কয়েক বছর ধরে শাড়ির আঁচল এবং জমিনে এমব্রয়ডারি আর হাতের কাজের চল থাকলেও এ বছর সেটি বদলে গিয়েছে। এ বছর শাড়ির আঁচল কিংবা জমিনের চাইতে শাড়ির পাড়ে বেশী নজর দিয়েছেন ডিজাইনাররা। চওড়া পাড়ের বর্ণিল কারুকাজময় এসব শাড়ির জমিনের সঙ্গে মিল রেখে নয় বরং বিপরীত রঙের আঁচল ও পাড়ের শাড়ির চাহিদাই বেশি ছিলো। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে ব্লাউজ পরার ধারনাটিও এ বছর এসে পালটে গেছে। বরং বিপরীত রঙের, বর্ণিল ছাপার স্লিভলেস কিংবা লম্বা হাতার পাশাপাশি ঘটি হাতার ব্লাউজের চল দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

মডেলঃ আঁখি ভদ্র

শাড়ি ছাড়াও তরুনীদের অন্যান্য পোশাকেও এসেছে নানা পরিবর্তন। কামিজের ওপর কটি পরার চলটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এ বছর। তাছাড়া পালাজ্জোর পাশাপাশি ঢোলা কুচির সালোয়ার ছিলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে। লং গাউন, ম্যাক্সি ড্রেসের মতন পোশাকগুলো পশ্চিমাধাঁচ থেকে কিছুটা পালটে দেশীয় ঢঙে জনপ্রিয়তা লাভ করছে তরুনীদের কাছে। মেয়েদের কামিজ, টপস ইত্যাদিতে প্রিন্টের ব্যবহার কমে গিয়ে লেস এবং প্যাঁচওয়ার্কের প্রাধান্য বেশি দেখা গেছে।

বছরজুড়ে ফ্যাশন ট্রেন্ড নিয়ে ডিজাইনার এমদাদ হক বলেন, এ বছর গামছা ট্রেন্ডটি পোশাকের ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শুধু দেশেই নয় আন্তর্জাতিক ফ্যাশানেও গামছার মতন দেখতে ছোট চেক খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মেয়েদের পোশাকে সুতি, ভয়েল, লিনেন , সিল্ক কাপড়ে এমব্রয়ডারি, টাইডাই, স্ক্রিনপ্রিন্ট, ব্লক ও হাতের কাজের চল গত বছরের মতোই এবারেও বাজার দখল করে ছিলো।

ছেলেদের ফ্যাশনে পাঞ্জাবীর চল সবসময়ই ছিলো। এবছর ছেলেদের ফ্যাশনে ক্যাজুয়াল পাঞ্জাবীর চাহিদা খুব বেশী দেখা গেছে তাছাড়া পাঞ্জাবীতে শেরওয়ানি কাট চলতি ফ্যাশনে ভিন্নমাত্রা দিয়েছে। মেয়েদের কামিজের মতোই ছেলেদেরও পাঞ্জাবীর ওপর কটি পরার চলটি বেশ জনপ্রিয় ছিল। একেবারে বডি ফিটিং কিংবা লুজ নয় বরং মিডিয়াম ফিটিং এবং মিডলেন্থের পাঞ্জাবীরই প্রচলন দেখা গেছে এবার।

বিজ্ঞাপন

ফতুয়া এবং শার্টে প্রিন্টের চল ছিলো গত কয়েক বছরের মতোই। প্রিন্টেড ডিজাইনের শার্টে ডেনিমের কারসাজি বেশি দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ডিজাইনার ফাতেমা বিন আসাদ। আমাদের দেশে ডেনিমের ওপর সব চেয়ে বেশি দেখা যায় স্ক্রিনপ্রিন্টের কাজ। খুব আটসাটো কিংবা ঢোলা নয় বরং সেমি ফিটিংসের শার্ট এবং ফতুয়ার চল ছিলো সারা বছর। এছাড়াও নানারকম স্টাইলিশ ব্লেজার ছেলেদের ফ্যাশন বাজার দখল করেছিলো।

মডেলঃ আরেফীন শুভ

গেলো বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে পোশাকে হালকা রঙ বেশি দেখা গেলেও এ বছর নারী পুরুষ নির্বিশেষে উভয়ের পোশাকেই উজ্জ্বল রঙের আধিপত্য ছিল। খুব সহজে মানুষের চোখে পরে এরকম গাঢ় রঙের পোশাকের চল ছিলো সব বয়সের নারী পুরুষের পোশাকে। বেগুনী, কমলা, নিয়ন, গোলাপী ইত্যাদি কড়া রঙের চাহিদা ছিলো বেশী।

চলতি বছরে পোশাকের প্যার্টানের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন ডিজাইনাররা। খুব বেশী আটোসাটো নয় বরং কিছুটা ঢিলেঢালাভাবের পোশাক এবং গত বছরের লংলেন্থের পোশাক বদলে গিয়ে এবার চাহিদা বেড়েছে মিডলেন্থের পোশাকের। এছাড়া একই পোশাকে বিভিন্ন ধরনের লেয়ার কাট জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

মডেলঃ মম মুস্তাফা

ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ার সাথে সাথে পোশাকেও লেগেছে এর ছোঁয়া। গত বছর পোশাকে ফুলেল নকশার প্রাধান্য থাকলেও চলতি বছর মোটিফের দিক থেকে দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উপাদানগুলোই প্রাধান্য পেয়েছে। বিভিন্ন ধরনের জিওমেট্রিক মোটিফ, বিশেষত চরকা, সাইকেল ইত্যাদি দেশীয় জিনিষগুলি এ বছরের পোশাকে মোটিফ হিসেবে এসেছে। অল্প কিছু বিমূর্ত মোটিফের ব্যবহার দেখা গেছে। থিমভিত্তিক পোশাক বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে চলতি বছরের ফ্যাশনে ।

বিজ্ঞাপন

মডেলঃ বীথি হক

ইদানীং গয়না পরার ক্ষেত্রে তরুনীদের রুচি ও চাহিদার বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কাপড়ের সঙ্গে কনট্রাস্ট হয় এমন গয়নায়ই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এখনকার তরুণীরা। বড়, ঝোলানো, নকশা করা, গর্জিয়াস কানের দুল, নাকে পরার জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের ছোট- বড় নথসহ সলিড গয়নাগুলোই তরুনীদের কাছে বেশী গুরুত্ব পাচ্ছে। পোশাকে এমব্রয়ডারির কাজ প্রায় উঠে গেলেও গয়নায় সুতার এবং এমব্রয়ডারির কাজ হাল আমলে বেশ চলছে।

মডেলঃ মম মুস্তাফা

চামড়ার সঙ্গে কাপড়, সিনথেটিক ও পাথরের নকশা করা হ্যান্ডব্যাগ তরুনীদের ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সানগ্লাসের ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে চাহিদার দিক থেকে ওভার সাইজের সানগ্লাস এগিয়ে আছে।

ছেলেমেয়ে উভয়ের ফ্যাশনেই বছরজুড়ে চাহিদা ছিলো স্কয়ার শেপের জুতোর। মেয়েদের ক্ষেত্রে গোড়ালি খোলা শিলোয়েট হিল জুতাগুলো বেশ জনপ্রিয় ছিল। এছাড়া নান ধরণের বুটজুতোও দেখা গিয়েছে ফ্যাশনের শীর্ষে।

মডেলঃ মম মুস্তাফা

ফ্যাশন জগতে একথা সর্বজনবিদিত যে পুরনো দিনের ফ্যাশনগুলোই বারবার ঘুরেফিরে আসে। চলতি বছরের ফ্যাশনেও তাই ঘুরেফিরে এসেছে গামছা চেকের ট্রেন্ড, সুতোর কাজের পায়েল, বিভিন্ন সাইজের রূপো কিংবা মেটালের নথ, গয়নায় এমব্রয়ডারির কাজ, মিডলেন্থের পোশাকের চাহিদা।

ফিচার ফটো মডেল- বীথি হক ও আত্রোলিতা

ছবি- নূর

সারাবাংলা/এএন/এসএস/আরএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন