বিজ্ঞাপন

নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে জরুরি মিডওয়াইফদের পদায়ন

May 28, 2018 | 9:12 am

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।  

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে তিন লাখ নারী গর্ভবতী অবস্থায় এবং সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা যান। প্রসবের সময় মৃত্যুর অন্যতম কারণ অপ্রশিক্ষিত নারীদের হাতে সন্তান প্রসব। তাই গর্ভকালীন, প্রসবকালীন এবং প্রসব পরবর্তী সময়ে মায়েদের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য ‍সুবিধা নিশ্চিতে অর্থাৎ নিরাপদ মাতৃত্ব সেবা নিশ্চিত করতে মিডওয়াইফ পদ তৈরি করা হয়। কিন্তু সারাদেশে এখনও নিশ্চিত হয়নি মিডওয়াইফদের পদায়ন। আর মিডওয়াইফদের পদায়ন না হওয়াতে নিশ্চিত হচ্ছে না নিরাপদ মাতৃত্ব।

আজ ২৮ মার্চ । নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। দিবসটিতে এবারের প্রতিপাদ্য ’কমাতে মাতৃমৃত্যুর হার মিডওয়াইফ পাশে থাকা একান্ত দরকার’। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফরাই পারেন গর্ভকালীন অবস্থা থেকে শুরু করে সন্তান প্রসবের সময় এবং পরবর্তী সময়ে একজন মা ও নবজাতকের জন্য সুস্থ ও নিরাপদ সেবা দিতে। তবে গত ১৪ মাসেও ৬০০ মিডওয়াইদের পোস্টিং (পদায়ন) হয়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার মিডওয়াইফকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে দেড় হাজার মিডওয়াইফকে প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

২০১০ সালে জাতিসংঘ তিন হাজার মিডওয়াইফ তৈরি করার কথা বলে। এরপর ২০১৩ সাল থেকে মিডওয়াইফ তৈরির শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তাদের জন্য ইউএনএফপির সহায়তায় চালু হয়েছে অনলাইন মাস্টার্স ডিগ্রি। একইসঙ্গে বাংলাদেশে নার্সিং কাউন্সিলের নামের সঙ্গে মিডওয়াইফারি যুক্ত করে চালু হয়েছে ‘বাংলাদেশে নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল’।

সরকারি ৩৮টি নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি ১৬টি নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স চালু রয়েছে।

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশ থাকা স্বত্ত্বেও গত ১৪ মাসে পদায়ন পাননি ৬০০ মিডওয়াইফ। পদায়ন না হওয়াতে গত ২৪ এপ্রিল তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনও করেন।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মিডওয়াইফ সারাবাংলাকে বলেন, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর গত বছর মার্চে পিএসসি তাদের পোস্টিং এর জন্য সুপারিশ করে। কিন্তু পুলিশ ভেরিফিকেশন ও মেডিকেল টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রায় ১৪ মাস চলে গেলেও তারা পোস্টিং পাননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে আমরা একাধিকবার যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কাজ হয়নি। আবার অনেকে প্রায় দুই বছর ধরে অপেক্ষায় আছেন-যারা সরকারি পরীক্ষায় পাস করেছেন। এ করণে তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও চাকরি নিতে পারছেন না।

২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ‍সরকারি কর্মকমিশন (নন-ক্যাডার) ৬০০ জন মিডওয়াইফ নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

নাম প্রকাশ করার শর্তে রাজধানী ঢাকার একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সন্তান জন্মদানের পর এরা কেবল হেল্পিং হ্যান্ড অর্থাৎ সেবা শুশ্রূষার কাজ করে থাকেন। কিন্তু এখন সরকার যাদেরকে মিডওয়াইফ হিসেবে বলছে তারা তিনবছরের একটি ডিপ্লোমা করবে। তারা সিনিয়র নার্সদের চেয়েও কোয়ালিফাইড হবে। এই তিন বছরে ডিপ্লোমাধারী মিডওয়াইফ আর আয়া কাম মিডওয়াইফ-তাদের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে।’

জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এই মিডওয়াইফ কার্ক্রমে সহায়তা দিচ্ছে। ইউএনএফপিএ-র প্রোজেক্ট টেকনিক্যাল অফিসার-মিডওয়াইফারি ফরিদা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য কিছুটা সময় লাগছে। তবে ইতোমধ্যেই প্রথম ব্যাচের এই ৬০০ জনের ভেতরে এখন ১৮ জনের মতো বাকি রয়েছে। এটা হয়ে গেলেই নিয়োগ হয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী এই পেশার বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহী এবং তার জন্যই তিন হাজার পদ তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে ফরিদা বেগম বলেন, যেহেতু তিন বছরের ডিপ্লোমা করতে এদের সময় লাগবে তাই সিনিয়র নার্সদের মধ্য থেকেই ছয় মাসের ট্রেনিং দিয়ে মোট ১ হাজার ২০০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে মিডওয়াইফ হিসেবে প্রথম ব্যাচের ৬০০ জন নিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছে।

আপাতত উপজেলা ও ইউনিয়ন সাবসেন্টারের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য তিন হাজার পদ তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পুরো দেশে তিন হাজার পোস্ট দিয়ে কাজ করা সম্ভব না, উপজেলা, জেলা ও মেডিকেল কলেজগুলোতেও মিডওয়াইফ দরকার।

এখন মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে এবং মায়ের ফ্যাসিলিটেতে আসছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেন ফ্যাসিলিটিতে এসে মানুষ সার্ভিস পায় সেজন্য আমাদের আরও মিডওয়াইফ দরকার।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার সুরাইয়া বেগম সারাবাংলাকে বলেন, আমরা বারবার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি মন্ত্রণালয়কে। কিন্তু হচ্ছে-হবে বলেও তাদের নিয়োগ হচ্ছে না-বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব বিব্রত অবস্থায় রয়েছি বলেন তিনি।

সারবাংলা/জেএ/টিএম

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন