বিজ্ঞাপন

ভারতকে কাঁপিয়েও পারলো না টাইগাররা

September 28, 2018 | 9:41 pm

।। স্পোর্টস ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

গত এশিয়া কাপে বাংলাদেশের মেয়েদের কাছে হেরেছিল ভারতের মেয়েরা। শেষ বলে হারতে হলো টাইগারদের। ছেলেদের আসরে তৃতীয়বারের মতো ও টানা দ্বিতীয়বার এশিয়ার শ্রেষ্ঠ টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। গতবারের মতো এবারো এশিয়া কাপের ফাইনালে টাইগারদের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ২২৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে টিম ইন্ডিয়া। বাংলাদেশকে হারতে হয় ৩ উইকেটে। টি-টোয়েন্টি ফরমেটে গত আসরে ভারতের কাছে হেরে ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হয়নি বাংলাদেশের। তার আগে ২০১২ সালে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরে ট্রফিতে চুমু দেয়া হয়নি ম্যাশদের।

এবারের আসরের গ্রুপপর্বে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে এশিয়া কাপের মিশন শুরু করেছিল গতবারের রানার্সআপ বাংলাদেশ। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারতে হয়েছিল মাশরাফির দলকে। সুপার ফোরে ভারতের বিপক্ষে পরাজয়ের পর টুর্নামেন্টে টিকে থাকাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় টাইগারদের সামনে। আফগানদের সুপার ফোরের ম্যাচে হারিয়ে ফাইনালের আশা টিকিয়ে রাখে মুশফিক-সাকিবরা। এরপর শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে নামে লাল-সবুজরা। এদিকে, এশিয়া কাপের এবারের আসরে ভারত অপরাজিত থেকে ফাইনালে নামে। গ্রুপপর্বে পাকিস্তান-হংকংকে হারিয়ে সুপার ফোরে উঠা ভারত হারিয়ে দেয় বাংলাদেশকে। পরে পাকিস্তানকেও উড়িয়ে দেয় টিম ইন্ডিয়া। আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি ড্র করে। এর আগে এশিয়া কাপে ১১বার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও ভারত। এরমধ্যে দশবারই জয় পেয়েছে টিম ইন্ডিয়া। একবার জিতেছে বাংলাদেশ। ২০১২ সালের আসরে ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়েছিল টাইগাররা। এছাড়া ওয়ানডে ফরম্যাটে এর আগে ৩৪ ম্যাচের মুখোমুখিতে ২৮টিতে জয় পেয়েছে ভারত। বাংলাদেশের জয় ছিল ৫টিতে।

বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটায় দুবাইয়ের মাঠে নামে দুই দল। টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারতের দলপতি রোহিত শর্মা। ৪৮.৩ ওভারে বাংলাদেশ সবকটি উইকেট হারিয়ে তোলে ২২২ রান। ওপেনিং জুটিতেই এসেছিল ১২০ রান। বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিংয়ে নামেন লিটন দাস এবং মেহেদি হাসান মিরাজ। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে বাংলাদেশ বিনা উইকেটে তুলে নেয় ৬৫ রান। ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির পরেই ক্যাচ তুলে দিয়ে জীবন পান লিটন দাস। ২০০৩-০৪ মৌসুমে ভিবি সিরিজের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সাইমন্ডস ভারতের বিপক্ষে ৩২ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন। লিটন এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ৩৩ বলে ফিফটি তুলে নেন। যা কোনো ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি। ১৮তম ওভারে দলীয় শতক তুলে নেন মিরাজ-লিটন।

বিজ্ঞাপন

ইনিংসের ২১তম ওভারে কেদার যাদবের বলে আম্বাতি রাইডুর হাতে ক্যাচ তুলে দেন মিরাজ। তার আগে ৫৯ বলে তিনটি বাউন্ডারিতে ৩২ রান করেন তিনি। দলীয় ১২০ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আগের ২৭ ওয়ানডেতে বাংলাদেশি কোনো ওপেনিং জুটিতে শতক আসেনি। সবশেষ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে শতক এসেছিল। ২৪তম ওভারে যুভেন্দ্র চাহালের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন ইমরুল কায়েস। তিন নম্বরে নামা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার আগে ১২ বলে করেন ২ রান। দলীয় ১২৮ রানের মাথায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট হারায়।

২৭তম ওভারে বিদায় নেন মুশফিকুর রহিম। কেদার যাদবের বলে ডিপ-মিড উইকেটে জাসপ্রিত বুমরাহর হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ৫ রান। দলীয় ১৩৭ রানের মাথায় বাংলাদেশ তৃতীয় উইকেট হারায়। স্কোরবোর্ডে আর মাত্র ২ রান যোগ হতেই ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন মোহাম্মদ মিঠুন (২)। ২৯তম ওভারে ৮৭ বলে ১১টি চার আর দুটি ছক্কায় ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন দাস। ৩৩তম ওভারে দলীয় ১৫১ রানের মাথায় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বিদায়ে বাংলাদেশ পঞ্চম উইকেট হারায়। কুলদীপ যাদবের বলে বাউন্ডারি সীমানায় জাসপ্রিত বুমরাহর হাতে ধরা পড়েন মাহমুদুল্লাহ (৪)।

এরপর দলীয় ১৮৮ রানে মহেন্দ্র সিং ধোনির বিতর্কিত স্ট্যাম্পিংয়ে ব্যক্তিগত ১২১ রানে ফেরেন ওপেনার লিটন দাস। এর আগে ১১৭ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন লিটন। দলীয় ১৯৬ রানে কুলদীপ যাদবের বলে স্ট্যাম্পিং হয়ে ফেরেন ৯ বলে ১ ছক্কায় ৭ রান করা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। এরপর দলীয় ২১৩ রানে রানআউট হয়ে ফেরেন নাজমুল হোসেন অপু (৭)। ইনিংসের ৪৯তম ওভারে ডাবল রান নিতে গিয়ে রানআউট হন সৌম্য সরকার। বিদায়ের আগে এই বাঁহাতির ব্যাট থেকে আসে ৩৩ রান। ৪৫ বলে একটি চার আর একটি ছক্কায় সৌম্য তার ইনিংসটি সাজান। একই ওভারে রুবেল হোসেন বোল্ড হন। অপরাজিত ছিলেন মোস্তাফিজ। কুলদীপ যাদব তিনটি আর কেদার যাদব দুটি করে উইকেট পান। যুভেন্দ্র চাহাল আর জাসপ্রিত বুমরাহ একটি করে উইকেট তুলে নেন।

বিজ্ঞাপন

২২৩ রানের টার্গেটে ওপেনিংয়ে নামেন রোহিত শর্মা এবং শিখর ধাওয়ান। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মাশরাফি আক্রমণে আনেন নাজমুল ইসলাম অপুকে। ওভারের চতুর্থ বলে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শিখর ধাওয়ান। বিদায়ের আগে এই বাঁহাতি ১৪ বলে তিনটি চারের সাহায্যে করেন ১৫ রান। দলীয় ৩৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় ভারত। ইনিংসের অষ্টম ওভারে মাশরাফি নিজেই বোলিং আক্রমণে আসেন। তৃতীয় বলেই ফিরিয়ে দেন তিন নম্বরে নামা আম্বাতি রাইডুকে। উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হওয়ার আগে রাইডু ৭ বলে ২ রান করেন।

ক্রমেই বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে ওঠা ভারতের রানমেশিন রোহিত শর্মাকে ইনিংসের ১৭তম ওভারে বিদায় করে দেন রুবেল হোসেন। দলীয় ৮৩ রানের মাথায় ভারত তৃতীয় উইকেট হারায়। অপুর হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায়ের আগে ৫৫ বলে তিনটি করে চার ও ছক্কায় রোহিত করেন ৪৮ রান। এরপর মাহমুদউল্লাহর করা ৩১তম ওভারের চতুর্থ বলে এলবির শিকার হয়ে দলীয় ১৩৭ রানে ফেরেন দিনেশ কার্তিক (৩৭)। ইনিংসের ৩৭তম ওভারের প্রথম বলেই মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ফিরিয়ে দেন মোস্তাফিজ। উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হওয়ার আগে ধোনি ৬৭ বলে করেন ৩৬ রান। ৩৮তম ওভারে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন ২০ বলে ১৯ রান করা কেদার যাদব।

দলীয় ২১২ রানে রুবেলের বলে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন রবীন্দ্র জাদেজা (২৩)। এরপর এবারো মাঠে নামেন কেদার যাদব। এরপর ৪৯তম ওভারের প্রথম বলেই ২১ রানে ভুবনেশ্বর কুমারকে ফেরান মোস্তাফিজ। মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। শেষ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ৬ রান। শেষ বলে জয়সূচক রান পায় তারা। কেদার যাদব ২৩ আর কুলদীপ যাদব ৫ রানে অপরাজিত থাকেন। রুবেল ১০ ওভারে ২৬ রানে দুটি, মোস্তাফিজ ১০ ওভারে ৩৮ রানে দুটি, মাশরাফি ১০ ওভারে ৩৫ রানে একটি, নাজমুল অপু ১০ ওভারে ৫৬ রানে একটি, মাহমুদুল্লাহ ৬ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে একটি আর মিরাজ ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে উইকেট শূন্য থাকেন।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করে গাজী টিভি। ম্যাচটি সরাসরি দেখা যায় এই লিঙ্কে: https://www.rabbitholebd.com/

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ একাদশ: মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), মোহাম্মদ মিথুন, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল ইসলাম অপু, রুবেল হোসেন এবং মোস্তাফিজুর রহমান।

ভারত একাদশ: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শিখর ধাওয়ান, আম্বাতি রাইডু, কেদার যাদব, মহেন্দ্র সিং ধোনি, দিনেশ কার্তিক, কুলদীপ যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা, যুভেন্দ্র চাহাল, ভুবনেশ্বর কুমার এবং জাসপ্রিত বুমরাহ।

সারাবাংলা/এমআরপি/এসএন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন