বিজ্ঞাপন

বারেক সাহেবের বিকল্প ভাবনা

November 19, 2018 | 2:45 pm

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ।।

বিজ্ঞাপন

দুপুরে সাধারণত বাসায় ফেরা হয় না বারেক সাহেবের। সকালে ব্যবসা, সন্ধ্যায় রাজনীতি – বাসায় ফিরতে ফিরতে সেই গভীর রাত। আজ ফিরেছেন। ফিরেছেন অনেকটা বাধ্য হয়েই। ঢুকেই অবশ্য অগোছালো ঘর-দোর দেখে মেজাজটা খিচড়ে যায় বারেক সাহেবের। ‘বেটা আবুল ইদানিং কোন কাজই করছে না’।

সকালে বিদেশী বায়ারের সাথে মিটিং ছিল। বিকেলে আবার ফ্রন্টের মিটিং। স্যুট-টাই খুলে পায়জামা-পাঞ্জাবি পড়ে দৌড়াতে হবে। ঐক্যের খিচুড়ীতে কখন কোনটা পড়বেন আর বলবেন তাল করে উঠতে পারছেন না বারেক সাহেব। ফ্রন্টের ব্যানারে জনসভাতো বেশ কয়েকটাই হলো। জনগনতো সব জামাতের। এ অবশ্য পুরোনো বিষয়। চলে আসছে অনেকদিন ধরেই। মিটিংয়ে-মিছিলে, জনসভায়-পিকেটিংয়ে, গাড়ি ভাঙ্গায় আর পোড়ানোয় – সব কিছুতেই তাদের খুটি যে জামাত সে তো সবারই জানা। দেখতে দেখতে এসব চোখ সওয়া হয়ে গেছে বারেক সাহেবেরও। এসবের পেছনের চক্করও ভালই বোঝেন বারেক সাহেব। বোঝেন আরো অনেকেই। কেউ বলেন আর কেউ বলেন না। পার্থক্য এতটুকুই। বারেক সাহেব ‘না বলার’ দলে। এমনিতেই দলের অবস্থা নাজুক। তার উপর তিনি আবার নাজুক দলের নাজুক নেতা। দলকে কারা যে ইদানিং নাড়ায়-চাড়ায় ভাল বুঝে উঠতে পারছেন না বারেক সাহেব। মাঝে দলে ছিল ‘নতুন গোফ গজানোদের’ তান্ডব। রাজনীতি বলতে তো টকশো আর প্রেসক্লাব। দুজায়গাতেই ছিল এদের দারুন দাপট। দখলে ছিল দলের অভিজাত এলাকার কার্যালয়টিও। তাদের চাপে চীনাপন্থীদের দলে যাকে বলে চিরে-চ্যাপ্টা অবস্থা। নাক টিপলে যাদের কিনা দুধ বেড়োয় তাদের চাপেই যেখানে বড় নেতাদের নাভিশ্বাস উঠার জোগার, সেখানে বারেক সাহেবরা তো কোন ছাড়?

দলেতো অকর্মন্য লোকের কমতি নেই। ইদানিং যোগ হয়েছে একদল বিদেশ ফেরত উকিল। ‘বিদেশে ভাত থাকলে এরা দেশে করেটা কি’? ভাবেন বারেক সাহেব। তিনি ভাবলেও ভাবেনি দলের বেশিরভাগ নেতাই। কিছু বুড়ো আর একপাল নতুন উকিল গাজন নষ্ট করেছে পুরোপুরিই। যার যা কাজ তার তাই করা উচিত। বড় আদালত যেখানে দলের দুই বড় নেতার চেয়ার নিয়েই টানাটানি শুরু করেছে, যেখানে এরা আদালতে যুক্তিতে না পেরে আদালতের বাইরে কুস্তা-কুস্তি করছে ‘ডব্লিউ ডব্লিউ এ ‘- কায়দায়। এতে কাজের কাজ কি হলো আর দলের ভোটই বা কয়টা বাড়লো তা অবশ্য আল্লাহ ভালই জানেন! আর সেদিন নমিনেশন পেপার বিক্রি করতে গিয়ে দলের অফিসের সামনে যা ঘটানো হলো, এখন আর নির্বাচনে গিয়ে পয়সা নষ্ট ছাড়া অন্য কোন প্রাপ্তি যোগের সম্ভবনা কমই দেখছেন তিনি। ভাবছেন কখননা সরকারী দল আবার ‘# থ্যাংক ইউ বিরোধী দল’ ক্যাম্পেইন চালু করে। নির্বাচনের আগে তাদের এত বড় উপকার তো অন্য কেউ আর করতে পারতো না!

বিজ্ঞাপন

দলের অবস্থাতো অবশ্যই অগোছালো। হঠাৎ বাসায় ফিরে দেখা তার ঘরের চেয়েও ঢের বেশি অগোছালো। তার উপর এসব ঐক্য-ফৈক্যে কি লাভ তাও মাথায় ঢোকে না বারেক সাহেবের। তবে ‘ঢাল নাই তলোয়াল নাই নিধিরাম সর্দারের’ এই গুষ্টিকে একদম সহ্য হয় না তার। একেক দলে দুই কুড়ি কর্মী আছে কিনা সন্দেহ, অথচ কত লম্বা তাদের দাবির ফর্দ। দল প্রতি দুটো করে আসন ছাড়লেওতো পঞ্চাশের বেশি আসন হারাতে হয়। এতো সহজ পাটিগণিত। তবুও কেউ বোঝেনা কেন বিষয়টা?

অগোছালো ঘর দেখে মেজাজ খারাপ হলেও নিজেকে আস্তে আস্তে সামলানোর চেষ্টা করেন বারেক সাহেব। আসলে ভেতরে বাইরে সবকিছু এত বেশি অগোছালো যে মেজাজ সামলানোটা মাঝে মধ্যেই কঠিন হয়ে পরে। কিন্তু করবেনটা কি? যাবেনটা কোথায়? কেমন যেন অসহায় অসহায় লাগে বারেক সাহেবের।

ইদানিং আরো বেশি দম বন্ধ লাগে চারপাশে আওয়ামী লীগ দেখতে দেখতে। কোথায় নেই ওরা? সংসদে ওরা। আছে টকশোতে আর বিলবোর্ডেও। আর এখনতো নিজ দলেই আওয়ামী আগ্রাসন। কি অনায়াসেই না একদল পরিত্যাক্ত আওয়ামী লীগার দলটা চুরি করে নিয়ে গেল – অবাক হয়ে দেখেন বারেক সাহেব। ‘নেতারা না হয় নিজেরটা বুঝছেন, নাকে সরিষার তেল দিয়ে কি ঘুমাচ্ছেন দলের কর্মীরা’? প্রতিদিন দলে-দলে দলে এসে ভিড়ছে এরা। কেউ আসছে ‘বাম’ গলি দিয়ে তো, কেউ আসছে সুপ্রিমকোর্টের করিডোর ধরে। কেউ গামছায় মুখ মুছতে মুছতে দলে ঢুকছে তো, কেউ আসছে মাইনরিটি কোটায়।

বিজ্ঞাপন

হঠাৎ কেন যেন নির্বাচনে ফলাফলটা পরিস্কার হয়ে যায় বারেক সাহেবের কাছে। যে দলের উচ্ছিষ্টরা ঢাল-তলোয়ার ছাড়াই তার দলটাকে হাইজ্যাক করে নিল, সেই দলকে তারা ত্রিশ তারিখে হারিয়ে দেবেন এটা কেন যেন আর বিশ্বাস করতে মন চাইছে না বারেক সাহেবের। ‘যা বাবা তোরা ঐক্য কর। আমার এসব ঐক্য-ফৈক্য পোষাবে না’, ভাবেন বারেক সাহেবে। আমি বরং ‘বিকল্প’ খুজি গিয়ে।

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : চিকিৎসক ও লেখক।

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন