বিজ্ঞাপন

নারীদের সব ক্ষেত্রে অবস্থান ধরে রাখার অাহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

December 9, 2018 | 5:58 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সংসার ও কর্মস্থল, উভয় ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থান ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা কথা প্রচলিত আছে, সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। তাই আমাদের সংসারও যেমন রাখতে হবে আবার কর্মস্থলেও নিজের অবস্থানটা ধরে রাখতে হবে। অধিকার আদায়ের কান্না আমরা কাঁদতে চাই না। অধিকার আদায় ও অর্জন করে নিতে হয়।’

রোববার (৯ ডিসেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপন এবং রোকেয়া পদক-২০১৮ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

পুরস্কারপ্রাপ্তরা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। রোকেয়া পদকপ্রাপ্তরা হলেন সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জিন্নাতুনেসা তালুকদার, প্রফেসর জোহরা রিচ, শিলা রায়, রমা চৌধুরী (মরণোত্তর) বেগম রোকেয়া (মরণোত্তর) ৫ জন। রমা চৌধুরীর পক্ষে তার ছেলে জহরলাল চক্রবর্তী, রোকেয়া বেগমের পক্ষ থেকে তার মেয়ে শারমিন জাহান, শিলা রায়ের পক্ষ থেকে গৌরী রাণী ভট্টচার্য পুরস্কার গ্রহণ করেন। বাকি দুজন নিজে উপস্থিত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।

বিজ্ঞাপন

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম সূচনা বক্তব‌্য রাখেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে নারীদের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়িতেও একটা সময় ছিল মেয়েরা নয়-দশ বছর হলে আর স্কুল যেতে পারত না। ঘরে মাস্টার রেখে পড়ানো হতো। আর স্কুলে যাবার কোনো সুযোগও ছিল না। স্কুল এত দূরে ছিল, সেখানে ছেলেরাই যেতে পারত না। রাস্তাঘাট ছিল না। নৌকায় করে অথবা কাঁদা-পানি পেরিয়ে যেতে হতো। আস্তে আস্তে ক্লাস এইট পর্যন্ত যেতে পারতো। এর পর ধীরে ধীরে যারা একটু শহরে থাকত, একটু সযোগ পেত কিন্তু গ্রামের মেয়েরা সুযোগই পেত না।’

বিজ্ঞাপন

‘আমরা যখনি ক্ষমতায় এসেছি আমরা চেষ্টা করেছি মেয়েদের শিক্ষাটাকে সব থেকে গুরুত্ব দিতে। মেয়েরা যেন সেই প্রাইমারি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত যেতে পারে, সে ব্যবস্থাটা আমরা করেছি। স্বাধীনতা অর্জন করার ফলে এই সুযোগটা পেয়েছি। কাজেই স্বাধীন রাষ্ট্রে মেয়েদের পড়াশোনার সব রকমের সুযোগ হয়েছে।’

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯৬ সালে দেখলাম বাবা-মা মেয়েদের লেড়াপড়া করাতে চায় না। আর একটা কারণ হলো আর্থিকভাবে মেয়েরা তো কিছু করতে পারবে না। বিয়ে হয়ে যাবে, পরের ঘরে চলে যাবে। বাবা-মায়ের কী লাভ হবে। অনেক শিক্ষিত পরিবার, পিএইচডি করা তাদের মুখেও একথা শুনেছি।’

এ কারণে প্রথমবার সরকারে এসে প্রাাইমারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ কোটায় শুধুমাত্র মেয়েরা চাকরি পাবে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম।

নারী উন্নয়ন নীতিমালাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কোনো উচ্চ পদে মেয়েদের পদায়ন হতো না। কারণ মেয়েরা পারবে না, মেয়েরা পারবে না এরকম একটা ভাব ছিল। আমি প্রথম এসপি, ডিসি, সচিব এবং হাইকোর্টে জজ পদে নিয়োগ দেওয়া শুরু করলাম। শুরুটা করা বেশ কঠিন ছিল। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীতে নারীদের কোনো অবস্থান ছিল না। একমাত্র মেডিকেল বোর্ড ছাড়া আর কোথাও মেয়েরা যেতে পারত না। বর্তমানে বিজিবি, পুলিশে আছে এমনকি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও মেয়েরা কাজ করে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করছে। আমরা সব জায়গায় আমাদের জায়গাটা করেছি। কিন্তু প্রথমে এই জায়গায় নিয়ে আসতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। এটা হলো বাস্তবতা। আজকে আর সেই অবস্থা নেই। বরং বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে এগিয়ে আছে।’

বিজ্ঞাপন

‘আমেরিকায় আজ পর্যন্ত কোনো মহিলা কিন্তু প্রেসিডেন্ট হতে পারে নাই। ১৯৮৭ সালে একটা নির্বাচনে ওয়াল্টার মারনেল তিনি তার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে পছন্দ নিয়েছিলেন জিয়ার্ডিন ফেরারুনকে। ওনি কেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে একজন মহিলাকে সঙ্গে নিলেন সেজন্য সেবার বেচারা নির্বাচনে জিততেই পারে নাই।’

সেই দিক থেকে বাংলাদেশ এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কারণ আজকে প্রধানমন্ত্রীর পদ, স্পিকারের পদ, বিরোধী দলীয় নেতার পর, সংসদ উপনেতার পদ; একটি সরকারের চার চারটি পদ মেয়েরাই দখল করে আছে।

এই অঞ্চলের মানুষই কিন্তু সারাবিশ্বকে পথ দেখিয়েছে। এটা হলো বাস্তবতা। আমাদের দেশে এখনো কিছু কিছু জায়গায় কুপমণ্ডুকতা আছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে সবকিছুর সাথে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকে। মেয়েরাও যখন অর্থ উপার্জন করতে পারে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সমাজে তাদের একটা জায়গা হয়। যে কথাটা জাতির পিতা কিন্তু বলতেন। আর্থিকভাবে মেয়েরা যদি স্বাবলম্বী হতে না পারে তাহলে তার কোনো স্থান সংসারেও থাকে না সমাজেও থাকে না। এটাই হচ্ছে প্রকৃত বাস্তবতা।’

সেদিকে লক্ষ্য করেই চাকরিক্ষেত্র থেকে শুরু করে আমাদের মেয়েদের সুযোগটা করে দিয়েছি যার সুফলটা এখন মেয়েরা পাচ্ছে।

রবীন্দ্রনাথ লিখে গিয়েছেন, ‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দেবে অধিকার, হে বিধাতা’ এই কান্না আমরা কাঁদতে চাই না। অধিকার আদায় করে নিতে হয়। অধিকারটা অর্জন করে নিতে হয়।

পাশাপাশি অধিকার আদায়ের নামে সংসারে যেন ঝামেলা বা অশান্তি না হয় সে বিষয়েও খেয়াল রাখার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, এখানে সকলেরই একটা দায়িত্ব থাকবে। পরিবারের প্রতিও দায়িত্ব আছে, সমাজের প্রতিও দায়িত্ব আছে। সে দায়িত্ববোধটা থাকতে হবে। পরিমিতিবোধটা থাকতে হবে। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পরিমিতিবোধ।

‘আমরা যথেষ্ট এগিয়ে গেছি এগিয়ে যাবো। আমরা এইটুকু চাই, আমাদের মেয়েরা সুশিক্ষিত হবে। নিজের সন্তানকে ভাল শিক্ষা দেবে। উপযুক্ত নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলবে। জঙ্গিাবদ সন্ত্রাস মাদক এসব থেকে সন্তানরা যেন দূরে থাকে তার জন্য মায়েদের বিশেষ করে নজর দিতে হবে। যেন ছেলেমেয়েরা নিজেদের মনের কথা, মার কাছে বলতে পারে। মা-বাবা হচ্ছে বড় বন্ধু। তারা যেন বন্ধু হিসাবে মা-বাবার কাছে সুখ-দুঃখ বা কোন অনুভূতি থাকে সেটা যেন সহজে বলতে পারে, সহজে মিশতে পারে, সেই ধরনের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে এবং এই উদ্যোগটা মাকেই নিতে হবে।’

‘আমাদের বেগম রোকেয়া যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন এবং তার যে স্বপ্ন ছিল আজকে পৃথিবী সেই দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ; আমরা এইদিক থেকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছি। বেগম রোকেয়া যে স্বপ্ন দেখেছে সেটাকে আমরা বৃথা যেতে দেইনি এবং দেবও না।’

আজকে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, ‘আমরা এগিয়ে নিয়ে যাবো। আর বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে উঠবে বলেও আশাবাদ করেন। এ ছাড়াও নিজের একমাত্র কন্যা সন্তান সায়মা হোসেনের জন্মদিন যে আজ সেটিও স্মরণ করেন তিনি। এ জন্য নিজের মেয়ে সায়মার জন্য দোয়া কামনা করেন তিনি।’

সারাবাংলা/এনআর/এমআই

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন