বিজ্ঞাপন

‘পুঁজিবাজার ঠিকমতো কাজ না করায় ব্যাংকখাতে চাপ বাড়ছে’

July 6, 2019 | 10:00 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পুঁজিবাজার ঠিকমতো কাজ না করায় ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ নিতে হচ্ছে। এতে ব্যাংকখাতের ওপর চাপ বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড.এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৬ জুলাই) বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ব্যাংকিং অ্যালমনাক-২০১৭’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুল রহমান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সভাপতি ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এবিবি’র সাবেক সভাপতি নূরুল আমিন, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল উদ্দিন প্রমুখ।

মির্জা আজিজ বলেন, ‘পুঁজিবাজারকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আর এই শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ব্যাংকখাতের একটা ভূমিকা রয়েছে। পুঁজিবাজারের তারল্য প্রবাহের বিষয়েও ব্যাংকগুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ আমাদের দেশে অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে থাকেন। একটি আরেকটির সঙ্গে সম্পর্কিত।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা আজিজ বলেন, ‘বেশিরভাগ ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত, ব্যাংকের কার্যক্রম পুঁজিবাজারে সার্বিকভাবে প্রভাবিত করে। ফলে ব্যাংকখাতের শেয়ারে বড়রকমের ধস হলে সার্বিকভাবে পুঁজিবাজারেও ধস নামবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হবে।’

মির্জা আজিজ আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে খেলাপি ঋণ অত্যন্ত বেশি। আমরা যখন খেলাপি ঋণের কথা বলি, তখন কিন্তু নানা রকম রিস্ট্রাকচারিং করে বা রাইটআপ করে অনেক টাকা বাদ দিচ্ছি। এতে করে খেলাপি ঋণ থেকে সেই টাকাটা বাদ পড়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশে রাইট আপের তথ্য দেয়া হয়। আমরা ১০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ দেখাচ্ছি আর ২০০ কোটি টাকা রিশিডিউল করে কিংবা রাইট আপ করে রেখেছি এটা কিন্তু ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক চিত্রের প্রতিফলন হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সারাবিশ্বে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা হল সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য না পাওয়া। এর ফলে একজন ডিপোজিটর কোন ব্যাংকে অর্থ রাখবেন, সেটা তার পক্ষে বিচার বিশ্লেষণ করা মুশকিল। ফলে গ্রাহক তার বাড়ির কাছের ব্যাংকেই অর্থ রাখেন। অন্যদিকে যখন একজন গ্রাহক ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন তার ঋণ প্রস্তাবে এমন কিছু তথ্য উপস্থাপন করেন যা ব্যাংকের জন্য বেশ লাভজনক এবং ব্যাংকের কোনো ঝুঁকি নেই। গ্রাহকের কাছে যে তথ্য রয়েছে ব্যাংকের কাছে সেই তথ্য পুরোপুরি থাকে না। এতে করে অনেক সময় ব্যাংক অপাত্রে ঋণ দেওয়া হয়। এই দুইটি কারণে অনেক সময় আর্থিক খাতে কেলেঙ্কারি ঘটে থাকে।’

বিজ্ঞাপন

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ এমন জায়গায় এসেছে। এখন মানুষ না খেয়ে মরছে কি না, দুর্ভিক্ষ রয়েছে কিনা? এই দিকগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ না। এখানে দেখতে হবে অর্থায়নের মাধ্যমগুলো আধুনিক হচ্ছে কিনা? এটা হলো নতুন চ্যালেঞ্জ। আমাদের শিল্পায়ন করতে হবে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে, আমাদের বহুমুখী অর্থনীতির কর্মকাণ্ড করতে হবে। সে জন্য আমাদের অর্থায়ন দরকার।’

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেক্টর এখনও অর্থনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এ মুহূর্তে ব্যাংকখাতে চারটি স্ব-বিরোধী পরিসংখ্যান আমরা দেখতে পাই। সেগুলো হলো, ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, তারল্য সংকট, উচ্চ সুদের হার এবং উচ্চ পরিচালন মুনাফা। এই চারটি পরিসংখ্যান মিলিয়ে বলব ব্যাংকিং সেক্টরের স্বাস্থ্য ভালো না। এই স্বাস্থ্য আরও উন্নত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের সমস্যা শুধু ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমেই সমাধান হবে না। অনান্য অর্থায়নের মাধ্যমগুলোকে উন্নত করতে হবে। বিশেষ করে পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদে অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ফলে ব্যাংক খাতের সমস্যা সমাধান করতে হলে অনান্য খাতগুলো থেকে অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ বাড়াতে হবে।’

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের দেশে দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর এই ক্ষেত্রে বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করতে হবে। ব্যাংক খাতের পাশাপাশি পুজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ বাড়াতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংক খাতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য জানা। এই ব্যাংকিং অ্যালমনাক বইটি আর্থিক খাতের তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে।’

সারাবাংলা/জিএস/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন