বিজ্ঞাপন

ভারতের সস্তা সফটওয়্যারে ডুবছে বোয়িং

July 13, 2019 | 12:56 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আকাশপথে বিমান দুর্ঘটনা কোনো নতুন বিষয় নয়। তবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ভুলে যদি শত শত মানুষের মৃত্যু হয় তা মেনে নেওয়া যায় না। এমনটাই ঘটেছে মার্কিন প্রসিদ্ধ বিমান কোম্পানি বোয়িং-এর ক্ষেত্রে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে কোম্পানিটির ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের দুটি বিমান ‘দুর্ঘটনার’ শিকার হয়। উড়োজাহাজ দুটি বিধ্বস্তের ধরন একই হওয়ায় সন্দেহ জাগে এয়ারলাইন্সগুলোর। বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পরবর্তীতে বোয়িং জানায়, সূক্ষ্ম সফটওয়্যার ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে বোয়িং এর ওই বিমান দুটি। তবে এই ঘটনার সঙ্গে এখন জড়িয়ে গেল ভারতের নামও। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ভারতীয় সফটওয়্যার কোম্পানি এইচসিএল হয়তো ‘গাফিলতি’ করেছে বোয়িং এর সফটওয়্যার তৈরিতে!

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: ৭৩৭-ম্যাক্স ইস্যু: ২৫ বিলিয়ন ডলারের বাজার মূল্য হারিয়েছে বোয়িং

আরও পড়ুন: বোয়িং ৭৩৭-এ একমাত্র যাত্রী মি. প্যাসেঞ্জার

বিজ্ঞাপন

যেভাবে সন্দেহের সূত্রপাত?

বিগত বছর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর, ইন্দোনেশিয়ায় লায়ন এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান বিধ্বস্ত হয়। উড্ডয়নের মাত্র ১৩ মিনিট পরই কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় বিমানটির। পরবর্তীতে ব্ল্যাকবক্স, ভয়েস রেকর্ডারের তথ্য যাচাই-বাছাই করেও বিমান দুর্ঘটনার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই দুর্ঘটনায় মারা যান ১৮৯ জন বিমানযাত্রী।

এরপর ২০১৯ সালের ১০ মার্চ, ১৫৭ জন আরোহী নিয়ে ফ্লাইট ইটি-৩০২, ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে রওনা করে। উড্ডয়নের মাত্র ছয় মিনিট পর এই বিমানটিও বিধ্বস্ত হয়। মারা যান সব বিমানযাত্রী।

বিজ্ঞাপন

বিমান দুটি বিধ্বস্তের ধরন একই হওয়ায় শুরু হয় তদন্ত। এরমধ্যে বিশ্বের সব প্রধান প্রধান এয়ারলাইন্স ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের উড্ডয়ন নিষিদ্ধ করে। সেই নিষেধাজ্ঞা কাটেনি এখনো।

তদন্ত শেষে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বোয়িং স্বীকার করে নেয় তারা বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের বিমানত্রুটি ধরতে পেরেছে। ‘অ্যান্টি স্টল’ নামে একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার সফটওয়্যার ভুলের কারণে ঘটেছে এই দুর্ঘটনা। প্রশ্নবিদ্ধ বোয়িং সফটওয়্যার ভুল নিরসনে নতুন করে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

অ্যান্টি-স্টল সিস্টেমের সফটওয়্যার ত্রুটি কি?

বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান বাজারে আসে ২০১৬ সালে। এসেই সবচেয়ে কম সময়ে জনপ্রিয়তা পায় এই মডেলটি। বোয়িং বিমানে ‘অ্যান্টি-স্টল’ নামে ‘স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা’ ব্যবস্থা যুক্ত করে ২০১৭ সালে। এই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা অ্যান্টি-স্টলের কারণে বিমানের সামনের অংশ কিছুটা নিচু হয়ে থাকতো। যাকে বলা হচ্ছে ‘নোজ ডাইভ’। তাই স্বয়ংক্রিয় নোজ ডাইভ নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হতো পাইলটদের। ইথিপিয়ার ও ইন্দোনেশিয়ার  এয়ারলাইন্সের দাবি, বোয়িং এর সব ধরনের নির্দেশনা মেনেও পাইলটরা তাদের যাত্রীদের রক্ষা করতে পারেননি।

বিজ্ঞাপন

এ বছরের ২ জুলাই ব্লুমবার্গ সফটওয়্যার শিল্প নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয় স্বল্প শ্রমমূল্যে ভারতীয় সফটওয়্যার নির্মাতাদের দিয়ে বিমানের সফটওয়্যার তৈরি করছে বোয়িং। বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্সের ওই সফটওয়্যার ত্রুটির জন্য দায়ী হতে পারে ভারতীয় সফটওয়্যার কোম্পানি এইচসিএল।

ভারত কিভাবে জড়িয়ে গেল?

বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ সফটওয়্যার রফতানিকারক দেশগুলোর একটি ভারত। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ভারতীয় উদ্যোক্তারা নিজেদের সরব উপস্থিতি জানান দিতে শুরু করেছেন। শ্রমের সহজলভ্যতা ও আর্থিক সাশ্রয়ের কারণে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো অথবা তাদের ভাড়া করা কোম্পানিগুলো সফটওয়্যার নির্মাণে ভারতকে বেছে নিচ্ছে। ভারতের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের দিতে হচ্ছে মাত্র ঘণ্টা প্রতি ৯ ডলার।

উড়োজাহাজ শিল্পে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা না থাকলেও ভারতের সফটওয়্যার নির্মাতা এইচসিএল ডেভেলপার, সিয়াটলের বোয়িং সদর দফতরে কাজ করছে। এইচসিএলের এক কর্মীর বৃত্তান্ত ঘেঁটে ব্লুমবার্গ জানায়, বোয়িং এর চাহিদা অনুযায়ী সফটওয়্যার তৈরি করছে তারা। আর সেই সফটওয়্যার কোডে ভুল হয়েছে কি না তাতে প্রশ্ন ব্লুমবার্গের। এছাড়া, বোয়িং ফ্লাইট টেস্ট পর্যালোচনার কাজ করেছে যে কোম্পানিটি সেটিও ভারতীয়। সব মিলিয়ে ব্লুমবার্গ দুর্ঘটনার জন্য আঙুল তুলেছে বোয়িং কোম্পানির ভারতীয় সফটওয়্যার নির্মাতাদের ওপর।

কি বলছে বোয়িং?

তবে বোয়িং কোম্পানি বিমান দুর্ঘটনার সঙ্গে ভারতীয় কেম্পানির কোনো রকম সম্পর্ক থাকার দাবি নাকচ করেছে। তারা বলেছে, বোয়িং যুগের পর যুগ সারা বিশ্বের সাপ্লাইয়ার ও পার্টনারদের সঙ্গে অভিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। নিরাপদ বিমানযাত্রা নিশ্চিত করতে বোয়িং বিমানের সর্বোচ্চ মান বজায় রাখার চেষ্টা করে।

এদিকে ভারত সরকারের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সামরিক যজ্ঞের নির্মাণ কাজ পেয়েছে বোয়িং। তাই সমালোচকরা ভাবছেন, ভারতীয় সফটওয়্যার কোম্পানিকে সঙ্গত কারণেই বিপদে ফেলতে চাইবে না বোয়িং।

এইচসিএলও দায় এড়িয়েছে

বিতর্কের রেশ ধরে ভারতীয় সফটওয়্যার কোম্পানি এইচসিএল জানিয়েছে, বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছে। এইচসিএল তাদের কাজের জন্য গর্বিত ও নির্দিষ্ট কোনো কাজ নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। ৭৩৭ ম্যাক্সের বিষয়েও জড়িত নয় কোম্পানিটি।

আরও পড়ুন: যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী বোয়িংকে টপকে গেল এয়ারবাস

এদিকে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ঠকিয়েছে বোয়িং

ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের নিহতদের পরিবার ও আইনজীবীদের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে বোয়িং ভুক্তভোগীদের ঠকিয়েছে। ৭৪ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দিয়ে অন্তত ৫০টি পরিবারের কাছ থেকে লিখিত নেওয়া হয়েছে তারা কখনো বোয়িং এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবেন না!

সারাবাংলা/এনএইচ

 

 

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন