বিজ্ঞাপন

ইতিহাস গড়ে ফিরছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা

December 10, 2019 | 6:45 pm

নাহিয়ান আরেফীন ও সাহাবার সাগর, নিউজরুম এডিটর

দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের (এসএ) ১৩তম আসর বসেছিল নেপালে। হিমালয় কন্যাদের দেশে নতুন করে ইতিহাস গড়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ১৩ তম এই আসরটি বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আর থাকবেই নাই বা কেনো? এসএ গেমসে এবার যে রেকর্ড গড়ে দেশের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে। সদ্য শেষ হওয়া এই আসর থেকে বাংলাদেশ ফিরছে রেকর্ড ১৯ টি স্বর্ণপদক নিয়ে। দেশের বাইরে সর্বোচ্চ তো বটেই সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্বর্ণপদক জয়ের আসর নেপালে অনুষ্ঠিত ১৩তম এসএ গেমসের এবারের আসরটি।

বিজ্ঞাপন

এর আগে ২০১০ সালে এসএ গেমসের ১১তম আসর বসে বাংলাদেশে। আর সেবারই নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক স্বর্ণপদক জয় করে বাংলাদেশ। ১১তম আসরে সব মিলিয়ে মোট ১৮টি স্বর্ণপদক নিজেদের অর্জনের খাতায় যোগ হয়। আর সদ্য সমাপ্ত এসএ গেমসে সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে ১৯টি স্বর্ণপদক নিজেদের নামের পাশে যোগ করেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

নেপালের অনুষ্ঠিত এসএ গেমসের এবারের আসরের সর্বোচ্চ ১০টি স্বর্ণপদক এসেছে আর্চারি থেকে। আর্চারির ১০টি ইভেন্টের স্বর্ণপদকই বাগিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। এমন সাফল্য আর বাংলাদেশ দেখেনি কখনোই।

বিজ্ঞাপন

তবে ১৩তম আসরে বাংলাদেশের প্রথম স্বর্ণপদক আসে তায়কোয়ান্দোর হাত ধরে। নেপালে শুরু হওয়া এবারের আসরের দ্বিতীয় দিনে (২ ডিসেম্বর) দিপু চাকমা লাল-সবুজের পতাকাকে এনে দেয় প্রথম স্বর্ণ। এরপর তৃতীয় দিন (৩ ডিসেম্বর) আল-আমিন, অন্তরা ও মারজানের হাত ধরে আসে আরও তিনটি স্বর্ণ। তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের ঝুলিতে মোট স্বর্ণপদকের সংখ্যা দাঁড়ায় চারে।

তৃতীয় দিনে কারাতে থেকে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্বর্ণের স্বাদ এনে দেন সেনাবাহিনীর আল-আমিন। কারাতের কুমি ইভেন্টের অনূর্ধ্ব-৬০ কেজি শ্রেণিতে পান তিনি। আর সেদিনই কারাতে থেকে আরও এক স্বর্ণ এনে দেন মারজান আক্তার পিয়া। দেশের তৃতীয় স্বর্ণ আসে এই নারী অ্যাথলেটের হাত ধরে। ৫৫ কেজি কুমিতে পাকিস্তানের প্রতিযোগীকে ৪-৩ পয়েন্টের ব্যবধানে হারান তিনি।

তৃতীয় দিনের স্বর্ণজয়ের শেষ সেখানেই নয়; সেদিনই হোমায়রা আক্তার অন্তরার হাত ধরে আসে দিনের তৃতীয় এবং সব মিলিয়ে চতুর্থ স্বর্ণ। এর আগে হোমায়রাই এবারের আসরে প্রথম পদক এনে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। কারাতে নারী এককে কুমি অনূর্ধ্ব-৬১ কেজি শ্রেণিতে বাংলাদেশের হয়ে ৪র্থ স্বর্ণপদক জয় করতে ফাইনালে স্বাগতিক নেপালের আনু গুরংকে ৫-২ পয়েন্টে হারান তিনি।

বিজ্ঞাপন

নেপালে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন বেশ কেটেছিল বাংলাদেশের; তবে এরপর টানা তিন দিন অপেক্ষা করতে হয় পদকের তালিকায় স্বর্ণ যোগ করতে। তিন দিনের বিরতি শেষে আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠে বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা। এসএ গেমসের ৭ম দিনে (৭ ডিসেম্বর) যুক্ত হয় আরও তিনটি স্বর্ণপদক।

ভারোত্তোলনে সেদিন প্রথম স্বর্ণপদক এনে দেন বাংলাদেশ আনসারের মাবিয়া আক্তার। দেশের পঞ্চম স্বর্ণপদক জয়ের পথে শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগী প্রিয়ান্থিকে হারিয়ে সেরা বনে যান মাবিয়া।

সপ্তম দিন সেখানেই শেষ নয়; দিনের দ্বিতীয় স্বর্ণটি ভারোত্তোলন থেকে এনে দেন জিয়ারুল ইসলাম। পুরুষ ১০২ কেজি শ্রেণিতে বাংলাদেশকে ৬ষ্ঠ স্বর্ণ এনে দেন তিনি। এরপর সেদিনের শেষ স্বর্ণপদকটি জয় করেন ফাতেমা মুজিব। ফেন্সিংয়ের সেভার ইভেন্ট থেকে এই আর্চার বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলেন ৭ম স্বর্ণপদক।

বিজ্ঞাপন

নেপালে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ে গেমসের অষ্টম দিনে। অকল্পনীয় সাফল্য এনে দেন বাংলাদেশি তীরন্দাজরা। আর্চারদের এমন সাফল্যের কারণেই বাংলাদেশের স্বর্ণপদকের সংখ্যার ভারটা বেড়ে কুড়ির কাছাকাছি গিয়ে থেমেছে। গেমসের অষ্টম দিনে (৮ ডিসেম্বর) আর্চারির ছ’টি ইভেন্টের সবক’টিতেই স্বর্ণ বাগিয়ে নেন বঙ্গদেশীয় তীরন্দাজরা।

একে একে স্বর্ণ আসে আর্চারির কম্পাউন্ড ইভেন্টের ছয়টি ইভেন্টে থেকেই। আর আর্চারদের এমন সাফল্যে নেতৃতে দেন রুমান সানা, মো: সোহেল রানা, অসীম কুমার দাস, মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান, ইতি খাতুন, মেহনাজ আক্তার মনিরা এবং বিউটি রায়।

আর্চারি ডিসিপ্লিনের তৃতীয় দিনে রিকার্ভ পুরুষ দলগত ইভেন্টে বাংলাদেশকে ইভেন্টের প্রথম স্বর্ণ এনে দেন রুমান সানা, তামিমুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ হাকিম আহমেদ রুবেল। শ্রীলঙ্কাকে ৫-৩ সেটে হারিয়ে স্বর্ণ বাগিয়ে নেন এই আর্চাররা। এরপর রিকার্ভ নারী দলগত ইভেন্টে আবারও সেই শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগীদের হারিয়েই স্বর্ণ ছিনিয়ে আনেন বাংলাদেশের মোসাম্মৎ ইতি খাতুন, মেহনাজ আক্তার মনিরা এবং বিউটি রায়।

আর্চারময় বাংলাদেশ সেখানেই থেমে থাকেনি; দলগত নারী ও পুরুষ উভয় ইভেন্টে স্বর্ণ জয়ের পর রিকার্ভ মিশ্র দলগত ইভেন্টের ফাইনালে বাংলাদেশের রুমান সানা ও মোসাম্মৎ ইতি খাতুন জেতেন আর্চারিতে তৃতীয় স্বর্ণপদক। মিশ্র ইভেন্টে ৬-২ সেটে ভুটানকে হারায় রুমান সানা ও মোসাম্মৎ ইতি খাতুন।

কম্পাউন্ড ইভেন্টগুলো থেকেও বাংলাদেশ ছিনিয়ে আনে স্বর্ণ। কম্পাউন্ড পুরুষ দলগত ইভেন্টে ভুটানকে ২২৫-২১৪ স্কোরে হারিয়ে লাল-সবুজদের ঝুলিতে আর্চারির ৪র্থ স্বর্ণ এনে দেন মো: সোহেল রানা, অসীম কুমার দাস ও মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান।

আর্চারি থেকে লাল সবুজদের ৫ম স্বর্ণ এনে দেন সুস্মিতা বনিক, সুমা বিশ্বাস এবং শ্যামলি রায়। কম্পাউন্ড মহিলা দলগত ইভেন্টে শ্রীলঙ্কাকে ২২৬-২১৫ পয়েন্টে হারিয়ে বাংলাদেশের হয়ে ১০ম স্বর্ণ ছিনিয়ে আনেন এই নারী আর্চারেরা।

দিনের শেষ স্বর্ণ আসে কম্পাউন্ড মিশ্র দলগত ইভেন্টে। বাংলাদেশের আর্চার মো: সোহেল রানা এবং সুস্মিতা বনিক ৮ পয়েন্ট ব্যবধানে শ্রীলঙ্কার আর্চারদের হারিয়ে ইভেন্টের ৬ষ্ঠ স্বর্ণ নিজেদের ঝুলিতে ভরেন।

তবে সেখানেই শেষ নয়; আর্চারির সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলও শ্রীলঙ্কা বধ করে এনে দেন ১১তম স্বর্ণপদক। জাহানারা-সালমারা শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ থেকে শেষ পর্যন্ত স্বর্ণ ছিনিয়ে আনতে সফল হয়।

এসএ গেমসের নবম দিন (৯ ডিসেম্বর) ছিল বাংলাদেশের ইতিহাস গড়ার দিন। আগের দিন আর্চারিতে ৬টি স্বর্ণ বাগিয়ে নেয়ার পর বাংলাদেশ আর্চারি থেকে ছিনিয়ে নেয় আরও চারটি স্বর্ণ। এতে করেই আর্চারির ১০ ইভেন্টের ১০টি থেকেই স্বর্ণজয় করে বাংলাদেশের আর্চাররা। আর এর মাধ্যমেই বাংলাদেশ দেখতে থাকে ২০১০ সালের ১৮ স্বর্ণজয়ের রেকর্ড ভাঙার স্বপ্ন।

ঢাকায় আয়োজিত ১১তম এসএ গেমসের রেকর্ড ভাঙার দায়িত্ব পড়ে ছেলেদের ক্রিকেটের ওপর। আর্চারি থেকে ১০টি স্বর্ণপদক জয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের মোট স্বর্ণপদকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮’তে। আর ছেলেদের ক্রিকেটের ফাইনাল জয় করতে পারলেই ইতিহাস নতুন করে গড়বে বাংলাদেশ। হতাশ করেনি বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল। রেকর্ড ভাঙার কাজটা বেশ সহজেই করেছেন সৌম্য-শান্ত-সাইফরা। শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাদেশের ১৯ তম স্বর্ণপদক নিশ্চিত করেন লাল সবুজ জার্সিধারিরা।

শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থামে নিজেদের ইতিহাসের রেকর্ড ১৯টি স্বর্ণপদক জয় করেই। আর সব মিলিয়ে ১৩তম এসএ গেমসে বাংলাদেশের মোট পদক সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৮ টি। যেখানে ১৯টি স্বর্ণের পাশাপাশি আছে রৌপ্য ৩২ টি এবং ব্রোঞ্জ ৮৭ টি।

সারাবাংলা/এনএ/এসএস/জেএইচ

Tags: , , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন