January 22, 2020 | 6:57 pm
এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: মিয়ানমারের সরকার এবং সামরিক বাহিনী রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা, লুন্ঠন ও ধর্ষণ চালিয়েছে, গাম্বিয়ার এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচার আদালত আর্ন্তজাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে ডিসেম্বরে। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) আদালত ওই গণহত্যার ব্যাপারে অর্ন্তবর্তী আদেশ দিবেন। আইসিজে’র এই অর্ন্তবর্তী আদেশের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব, যেন গণহত্যার বিরুদ্ধে মানবতার জয় হয়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, আশা করছি, আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার রায়ে রোহিঙ্গারা ন্যায়বিচার পাবেন।
আইসিজে এক বার্তায় জানিয়েছে, গত ১১ নভেম্বর গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর তথ্য উত্থাপন করে এবং গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আর্ন্তজাতিক গণহত্যা প্রতিরোধ বিয়ষক কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ন্যায় বিচার চেয়েছে। পাশাপাশি গণহত্যা বন্ধের জন্য আদালতের কাছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তবর্তী (৬টি) আদেশ চেয়েছে গাম্বিয়া।
আইসিজে’র ১৭ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বিচারিক দলের পক্ষে আদালতের প্রেসিডেন্ট বিচারক আব্দুলকাওয়ী আহমেদ ইউসুফ বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি, বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টা) অর্ন্তবর্তী আদেশ ঘোষণা করবেন।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, আসিজে’র কাছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ছয়টি বিষয়ে অর্ন্তবর্তী আদেশ চেয়েছে গাম্বিয়া। এগুলো হলো,
বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে জাতিসংঘসহ আর্ন্তজাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের মিয়ানমারের রাখাইনসহ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে গণহত্যা চালানো স্থানগুলো পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, কৌশলগত কারণে বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করছে। ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) একাধিক বৈঠকেও এই বিষয়ে আলোচনা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইসিজি’তে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার শুনানিকালে গাম্বিয়াকে সহায়তা দিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে একটি দল নেদারল্যান্ডের হেগে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবারের (২৩ জানুয়ারি) অর্ন্তবর্তী আদেশের দিনেও ঢাকার একটি প্রতিনিধদল হেগে উপস্থিত থাকবে।
এ ছাড়া, সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টডিজ ‘আইসিজে রুলিং অন দি প্রভিশনাল মেজারস অন রোহিঙ্গা জেনোসাইড’ শীর্ষক ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে প্যানেল ডিসকাশনের আয়োজন করেছে। যা অর্ন্তবর্তী আদেশ ঘোষণার পর অনুষ্ঠিত হবে। ওই আলোচনায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে, ১৭ জানুয়ারি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং দুইদিনের মিয়ানমার সফর করেন। এই সফরে রাখাইনের কায়াপিউতে চীনের সমুদ্র বন্দর নির্মাণ এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ ৩২টি বিষয়ে দুইদেশের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। মূলত গোটা বিশ্ব যখন মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাপে রেখেছে ঠিক তখনই চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং মিয়ানমার সফরে গিয়ে রোহিঙ্গা গণহত্যার অনুমোদনকারি অং সান সু চিকে নির্ভরতা যোগাচ্ছেন।
মিয়ানমারে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত প্রিসিলা ক্ল্যাপ চীনের রাষ্ট্রপতির এই সফর নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, মিয়ানমারের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং এশিয়া অঞ্চলে চায়নিজ প্রভাব প্রতিষ্ঠা করাই এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য।
জেনেভাস্থ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় থেকে গত ১৫ জানুয়ারি এক বার্তায় জানানো হয়, মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিশেষ দূত ইয়াংহি লি ১৫ থেকে ২৩ জানুয়ারি চূড়ান্ত সফর করার কথা। কিন্তু সফরের অনুমতি চাইলেও আগের মতোই বিশেষ দূত ইয়াংহি লির প্রবেশ আবেদন নাকচ করে দেয় মিয়ানমার।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজে’র বৃহস্পতিবারের (২৩ জানুয়ারি) অর্ন্তবর্তী আদেশ নিয়ে বুধবার (২২ জানুয়ারি) ব্রিটেনের কমনওয়েলথ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে ন্যায়বিচারের দাবিতে মানববন্ধন হয়। জাস্টিস ফর রোহিঙ্গা ইউকে’র আয়োজনে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গা নারীরা গত ২১ জানুয়ারি একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আসিজে’তে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায়, রোহিঙ্গা নারীরা গাম্বিয়ার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে। রোহিঙ্গা নারীরা আশা করছেন যে আর্ন্তজাতিক আদালত এমন উদ্যোগ নিবে যেন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পায় এবং রাখাইনে গণহত্যা বন্ধ হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গত ২০ জানুয়ারি বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে মিয়ানমারের উচ্চ পর্যায়ের ৪ জন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সারাবাংলা/ জেআইএল/একেএম/